বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : মানুষকে সঠিক ইতিহাস জানাতে আরো বেশি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

118

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-চলচ্চিত্র পুরস্কার-ভাষণ
মানুষকে সঠিক ইতিহাস জানাতে আরো বেশি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই শিল্প নষ্ট হয়ে যাক কখনো সেটা আমরা চাই না। আমাদের দর্শক টানতে হবে। মানুষ যাতে সিনেমা দেখে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রের পাশাপাশি শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপরেও গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে দেখা যায় তেমন সিনেমা যেমন তৈরী করতে হবে, তেমনি শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণটাও একান্ত ভাবে জরুরি। কারণ, এর মাধ্যমেই একজন শিশু তার জীবনটাকে দেখতে পারবে এবং আগামীর জন্য নিজেকে তৈরী করতে পারবে।
এই শিল্পের আধুনিকায়নে যা যা দরকার তাঁর সরকার সেসব কিছুই করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে বলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা উল্লেখ করেন।
তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘আমি তো রয়েছিই সব সময় আপনাদের পাশে। কেননা, এই এফডিসি আমার বাবার হাতে গড়া এবং এই সিনেমা তৈরীর উৎসাহ তিনি নিজেই দিয়েছিলেন। কাজেই, সেটি মাথায় রেখেই আমি সব সময় কাজ করি।’
করোনার কারণে বিশ^ স্থবিরতার প্রসঙ্গ টেনে এর মধ্যেও তাঁর সরকার চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী ।
তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যাতে সিনেমা শিল্প ভালভাবে প্রচলিত হয়, মানুষ যেন বিনোদনের সুযোগ পায়, সে চিন্তা থেকেই আমরা ফান্ড সৃষ্টি করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় ইতিহাস ও ঐতিহ্য সুরক্ষায় চলচ্চিত্র ব্যবস্থার উন্নয়ন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সনাতন চলচ্চিত্রের সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের কার্যক্রম পুনরুদ্ধারকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।
বিশ^মানের চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এ জন্য ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট এবং জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট ভবন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। যেন যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের শিল্পীরা উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারেন।
সরকার প্রধান বলেন, চলচ্চিত্রে তরুণ প্রজন্মের ভাবনা, মেধা ও মননশীলতাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট ও কলকাতার সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
তাছাড়া, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্র্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য, ইতোমধ্যে বিখ্যাত ভারতীয় পরিচালক শ্যাম বেনেগালকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সোহেল রানার নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করার সময় চলচ্চিত্র শিল্পে নিয়োজিত নেপথ্য শিল্পীদের জন্য সহযোগিতার ক্ষেত্র সৃষ্টির আবেদন প্রসঙ্গে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০২০’ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তদের সিআইপি (কালচারাল ইমপর্টেন্ট পারসন) হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টিও আলোচনা করার আশ^াস দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০২০’ প্রণয়নে আমি নিজেই উদ্যোগ নিয়েছি কেননা আমার পরিচিত অনেক শিল্পীকেই দুর্দশাগ্রস্থ দেখেছি।
দুর্দশাগ্রস্থ শিল্পীদের তিনি যেমন সহযোগিতা করেন তেমনি তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা অনলাইন পত্রিকা থেকে এ সম্পর্কিত কোন তথ্য পেলে তাঁর নজরে আনেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি এখন আছি এখন সাহায্য করছি কিন্তু যখন থাকবো না, তখন কি হবে সেই চিন্তা থেকেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০২০ এই আইনটা করার উদ্যোগ নিয়েছি। এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলের জন্য ব্যবস্থা করেছি।
যারা নেপথ্যে থেকে এই চলচ্চিত্রকে সুন্দর করার জন্য দিনরাত কাজ করছেন, সেই যন্ত্রশিল্পী থেকে কলা-কুশলী, মঞ্চসজ্জায় সম্পৃক্ত সকলের বিষয়টাই তাঁর সরকার এই ট্রাস্টে রেখেছে। যাতে বিপদে আপদে প্রত্যেকেই এই ট্রাস্ট থেকে অনুদান নিতে পারেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি এই ফান্ড সম্প্রসারণে চলচ্চিত্র শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তার ভাষণে বলেন, শিল্পের সমস্ত মাধ্যমকে একত্রিত করে যে শিল্প সেটাই চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্র শুধু জীবনের কথাই বলে না, এটি সমসাময়িক কালকে সংরক্ষণ করে এবং যেই সময়ে নির্মিত হয় সেই সময়ের সমাজচিত্রকে পরিস্ফুটন করে।
ড. হাছান বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে চলচ্চিত্র শিল্পের যাত্রা শুরু তাকে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা শুধু এর স্বর্ণালী দিন ফিরিয়ে আনা নয় বরং আমাদের চলচ্চিত্র যেন বিশ^ বাজারেও একটি স্থান দখল করে নিতে পারে সেই লক্ষ্যে অনেকগুলো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬৫৫/আরজি