সরকারি শিশু পরিবারে আশ্রিতা বিপাশার নতুন জীবন লাভ

951

॥ একেএম নাসির উদ্দিন আহমেদ ॥
ঢাকা, ১২ আগস্ট. ২০১৮ (বাসস) : প্রতিটি শিশুই সম্ভাবনার উত্তরসুরি। তবে বাবা-মায়ের আর্থিক অস্বচ্ছলতা অনেক শিশুর সে সম্ভাবনাকে অংকুরেই বিনষ্ট করে দেয়। যদিও আজ অনেক এতিম শিশু সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত সরকারি শিশু পরিবারে আশ্রয় নিয়ে জীবনের সঠিক অর্থ খুঁজে পাচ্ছে। সে রকমই একজন ভাগ্যবতী শিশু বিপাশা। সম্প্রতি ধুমধাম করে তার বিয়ে হয়েছে। বিয়েতে সরকারি, বেসরকারী গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থেকে বিপাশার অনেক না-পাওয়া দু:খ প্রশমিত করার প্রয়াস পেয়েছেন।
প্রায় বছর দশেক আগে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় ভবঘুরে অবস্থায় বিপাশাকে খুঁজে পায় পুলিশ। নিজের নাম ও বাবা জামাল উদ্দিনের নাম ছাড়া কিছুই বলতে না পারায় বিপাশার আশ্রয় জোটে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে। প্রথমে তার ঠাঁই হয় নিরাপদ হেফাজতে। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিলেটের রায়নগর সরকারি শিশু বালিকা পরিবারে। সেখানেই দীর্ঘ দশটি বছর কেটে যায় বিপাশার। এই শিশু পরিবারে লেখাপড়া, হাতের কাজ শিখে জীবন সংগ্রামের সঠিক নির্দেশনা নিয়ে আস্তে আস্তে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে বিপাশা। এ বছরের ২৭ এপ্রিল শিশু পরিবারের আয়োজনে এক লক্ষ টাকা দেনমোহরে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বুড়াখালী রাজনগর (হালেয়া) গ্রামের মৃত আব্দুল আহাদের ছেলে আব্দুল লতিফের সঙ্গে শিশু পরিবারের নিবাসী বিপাশার বিয়ে হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ধুমধাম করে বিপাশার গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান করা হয়। শুক্রবার ২৭ এপ্রিল, ২০১৮ সকাল থেকেই কর্মব্যস্ত ছিল শিশু পরিবারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শত শত অতিথি আপ্যায়নের জন্য সাজানো হয় পুরো শিশু পরিবারকে। বিশাল শামিয়ানা টানিয়ে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয় সেখানে। জুমার নামাজের পর পরই আকদ সম্পন্ন হয়। বিকেলে শিশু পরিবার কর্তৃপক্ষ সুনামগঞ্জের আব্দুল লতিফের হাতে তুলে দেন বিপাশাকে।
সরকারি শিশু পরিবারে একজন এতিম অসহায় শিশু ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত পারিবারিক পরিবেশে স্নেহ-ভালোবাসা ও আদর-যতেœর সাথে প্রতিপালন করা হয়। প্রতিটি শিশুকে শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া শিশু পরিবারের নিবাসীদের শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক উৎকর্ষতা সাধনে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। এতিম অর্থ্যাৎ পিতৃহীন বা পিতৃমতিৃহীন দরিদ্র ৫-৯ বছর বয়সী শিশু এই সুবিধা ভোগ করতে পারে । সারাদেশে জেলা সদর, উপজেলা ও কিছু কিছু গ্রামেও এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।
সরকারের এই কর্মসূচিকে আরো অর্থবহ করে তুলতে সমাজের শিক্ষিত নাগরিকদের অংশগ্রহণ জরুরি। এ ক্ষেত্রে সচেতন জনসাধারণ শিশু পরিবার পরিচালনায় কোন অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে পারেন। যাকাত, ফিতরা, দানসহ ইত্যাদি আর্থিক সহায়তা করে শিশু পরিবারের অর্থনৈতিক ভিতকে শক্তিশালী করতে পারেন এবং শিশু পরিবারে প্রশিক্ষিত শিশুদের গুণগতমান উন্নয়নে যে কোন ধরনের সহযোগিতা যেমন শিশুর পুনর্বাসনে আর্থিকভাবে, চাকুরী প্রদান মাধ্যমে বা তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে সহযোগিতা করতে পারেন। এভাবেই সমাজের অবহেলিত অসহায় শিশুরা যদি আমাদের জাতি গঠনের মূল শ্রোতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে, তাহলে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ জাতি কামনা করতে পারি।