বাসস দেশ-৩৪ : বাংলাদেশ এইচডিআই স্কোর দুই ধাপ উপরে ১৩৩-এ উঠে এসেছে

297

বাসস দেশ-৩৪
এইচডিআই-প্রতিবেদন-বাংলাদেশ
বাংলাদেশ এইচডিআই স্কোর দুই ধাপ উপরে ১৩৩-এ উঠে এসেছে
ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের তুলনায় মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ দুই ধাপ উপরে উঠে ১৩৩-এ দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রকাশের ছয় দিন পর আজ সকালে বাংলাদেশে প্রকাশ হওয়া দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার : হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অ্যানথ্রোপসিন শিরোনামে এই প্রতিবেদনে মানব অগ্রগতির উপর একটি নতুন পরীক্ষামূলক সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ইউএনডিপি-র হিউম্যান ডেভলপমেন্ট রিপোর্ট (এইচডিআর) ২০২০ এ বলা হয়েছে, প্রতিবেদনে আওতাভুক্ত আটটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে, তবে পৃথিবীর চাপ-সামঞ্জস্যিত মানব উন্নয়ন নতুন সূচকে (পিএইচডিআই) নয় নম্বরে উঠে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নগরীর শের-ই-বাংলা নগর এলাকার এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধান অতিথি হিসাবে প্রতিবেদন প্রবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। উদ্বোধনের পরে, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য অধ্যাপক ড. শামসুল আলমের সভাপতিত্বে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আইসিসিএডি পরিচালক জলবায়ু বিজ্ঞানী অধ্যাপক সালেমুল হক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এর নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয জেনারেল স্টাডিজের ডিন নৃবিজ্ঞানী সামিয়া হক এবং স্থপতি ও পরিবেশবিদ এ আর ইকবাল হাবিব অংশ নেন।
আলোচনা সভাটি সঞ্চালন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব শহিদুল হক।
মান্নান, যিনি বাংলাদেশে এই প্রতিবেদন উন্মোচন করেন তিনি বলেন, অসংখ্য প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আমাদের পৃথিবীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং আমাদের জাতির পিতার স্বপ্ন অনুযায়ী একটি ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, আমাদের পৃথিবীর চাপ আমাদের সমাজের অনেকের মধ্যে থাকা চাপের প্রতিফলন। পৃথিবীর অন্যান্য বিপজ্জনক পরিবর্তনগুলোর মধ্যে কেবল জলবায়ু পরিবর্তন তাদের আরও খারাপ করে তুলবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মানব উন্নয়নে চিত্তাকর্ষক অগ্রগতি করেছে। ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশের এইচডিআই মূল্য ৬০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের ২০১৯ সালের এইচডিআই মাঝারি মানব উন্নয়ন গ্রুপের দেশগুলোর গড়ের চেয়ে বেশি।
১৯৯০-২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জন্মের আয়ুু ১৪ দশমিক ৪ বছর বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ বছরের পর বছর স্কুলে পড়াশোনা বৃদ্ধি পায় এবং স্কুলের কাক্সিক্ষত বয়স ৬ বছর বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের জিএনআই ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় ২২০ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ^ব্যাপী প্রকাশের সময় ইউএনডিপি প্রশাসক অ্যাচিম স্টেইনার বলেন, এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পৃথিবীর কোনও দেশই ধরিত্রীকে চাপে না ফেলে খুব বেশি উচ্চমানের মানব উন্নয়ন অর্জন করতে পারেনি। তবে, আমরা এই ভুলটি সংশোধন করার জন্য প্রথম প্রজন্ম হতে পারি। এটিই মানব বিকাশের পরবর্তী সীমান্ত।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী জানিয়েছেন করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি প্রাণহানির চেয়ে অনেক বেশি। সুদীপ্ত বলেন, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে, যেমন জীবিকার অভাবে দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হয়, বৈষম্য বৃদ্ধি পায়, লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা বৃদ্ধি পায়, শিশু ও তরুণদের শিক্ষা থেকে বাদ পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় ইত্যাদি। তিনি বলেন, বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর ধরে এই ধরনের মহামারী সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন যে, এই মহামারী ও ধরিত্রীর ওপর মানুষের প্রচন্ড চাপেরই প্রতিফলন। পৃথিবীর মানুষের চাপের পরিফলন হিসেবে। এইচডিআর ২০২০ নির্দেশ করছে যে আমাদের ভবিষ্যৎ মানুষ বা গাছের মধ্যে বেছে নেওয়ার বিষয় নয়। এটা হচ্ছে ভিন্ন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া।
উন্নত ভবিষ্যতের জন্য সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে সুদীপ্ত বলেন, এমন সিদ্ধান্ত যা মহামারী বন্ধ করতে পারে এবং দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারে, ডিজিটাল বিভাজন বন্ধ করতে পারে এবং জলবায়ুু জরুরি অবস্থার মোকাবেলা করতে পারে যাতে সময়ের এই অনন্য মুহূর্তটি মানুষ এবং গ্রহের জন্য পরবর্তী ধাপে চলে যেতে পারে।
এই প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে ইউএনডিপি এশিয়া প্যাসিফিকের সিনিয়র অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বালাজ হোভার্টের নতুন পিএইচডিআই নিয়ে একটি উপস্থাপনা।
কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বের সা¤প্রতিক সংকটের মুখোমুখি হওয়ায় ইউএনডিপি কর্তৃক বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে মানুষ যদি প্রকৃতির উপর তাদের হাত না ছাড়া পর্যন্ত এটা শেষ হবে না।
এইচডিআই প্রতিবেদনের ৩০তম বার্ষিকী সংস্করণে সাধারণত একটি জাতির স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার মান পরিমাপ করে আরো দুটি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সমন্বয় করা হয়েছে, একটি দেশের কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন এবং এর বস্তুগত পার্যায়ের ছাপ।
এই সমন্বয়ে এখন দেখাচ্ছে কিভাবে বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হবে যদি মানুষ এবং ধরিত্রী উভয়ই মানবতার অগ্রগতি নির্ধারণের কেন্দ্রে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, ৫০টিরও বেশি দেশ অত্যন্ত উচ্চ মানব উন্নয়ন গ্রুপ থেকে বাদ পড়েছে, যা জীবাশ্মজাত জ্বালানী এবং বস্তুগত পদাংকের ওপর তাদের নির্ভরশীলতার প্রতিফলন।
বাসস/জিএম/এসই/২১১৫/-কেএমকে