বে-টার্মিনাল প্রকল্পকে ফাস্ট টেক ও পোর্ট নির্মাণ করা প্রয়োজন : তথ্যমন্ত্রী

558

চট্টগ্রাম, ২০ ডিসেম্বর ২০২০ (বাসস) : তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম বন্দরের উপদেষ্টা কমিটির সভায় দুটি প্রস্তাব উপস্থাপন করে বলেছেন, চট্টগ্রাম বে-টার্মিনাল প্রকল্পকে ফাস্ট টেক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এতে বন্দরের উপর চাপ কমবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বে-টার্মিনালের অধীনে পোর্ট নির্মাণ করা।
তিনি বলেন, লালদিয়া টার্মিনালের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। ওখানে যারা বসতি স্থাপন করেছে ওদেরকে স্থানান্তর করতে হবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে।
রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মুন্সী ফজলুর রহমান অডিটোরিয়ামে বন্দরের ১৪তম উপদেষ্টা কমিটির সভায় তথ্যমন্ত্রী অনলাইনে জুম অ্যাপে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বে-টার্মিনাল থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর হচ্ছে। এই শিল্প নগরের মাঝ পথে আরেকটি বন্দর প্রয়োজন আছে। এতে করে ওই নগরের গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা পোর্ট করব দেশের স্বার্থে, কোন ইন্টারেস্ট গ্রুপের স্বার্থে নয়। চট্টগ্রামে অনেকগুলো রেলের জায়গা পড়ে আছে, রেলের সাথে চুক্তি করে ওখানে টার্মিনাল করা যায়। চট্টগ্রাম বন্দরের যে স্টেডিয়াম আছে ওটাকে আন্তর্জাতিক মানের করা প্রয়োজন। এছাড়া বন্দর হাসপাতালের কিছু সিট বন্দরের অভ্যন্তরের জন্য বরাদ্দ রেখে আরও কিছু সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের গাড়ির রেন্ট চার্জ কমিয়ে দেয়া দরকার বা মংলা বন্দরে গাড়ি চার্জ বাড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। এতে গাড়ির আমদানিকারকরা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করবে। আর পায়রা বন্দর চালু হলেও প্রধান থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর।
উপদেষ্ঠা কমিটির সভা শেষে ব্রিফিংয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের ৯৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয় নিজস্ব অর্থায়নে। এ দেশের মানুষ বিশ্বের যে প্রান্তে অবস্থান করুক না কেন গর্ব করে বলে, আমাদের টাকায় পদ্মা সেতু হচ্ছে। আমরাও গর্ব অনুভব করি। আমাদের এখন কারো মুখাপেক্ষী হতে হয় না।
তিনি বলেন, পারমাণবিক ক্লাবে যুক্ত হয়েছি। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল হচ্ছে। আগে দেশে মহাসড়ক ছিল না, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল কত কিছু হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন হচ্ছে। বিরাট সম্ভাবনার বাংলাদেশ এখন নেতিবাচক সংবাদ চায় না।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করার জন্য যে সকল ইক্যুইপমেন্ট দরকার সংগ্রহ করছি। বন্দর চালু রাখতে গেলে ড্রেজিং করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর চালু আছে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ২০১৯ সালে আমরা কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এ ছিলাম ৬৩ তম এবং চলতি বছরে এসেছি ৫৮তম স্থানে। এখন বিশ্বের সেরা ১০০ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরকে ৫৮ থেকে ৩০ এ আনার লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা সবাই।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পোর্ট লিমিট বাড়ানো হয়েছে। এটি মাতারবাড়ি ও মিরসরাই পর্যন্ত চলে গেছে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে। পিটিসি (পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল) ২০২১ সালে চালু করতে যাচ্ছি। আমাদের নতুন নতুন বেসরকারি ইয়ার্ড তৈরি হচ্ছে। এখানে বিনিয়োগ বাড়ছে। বিদেশী বিনিয়োগও আসতেছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে, দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। চাকরির ক্ষেত্রে বন্দর, নদী, সমুদ্রকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেবে সরকার। কিন্তু বিনা অভিজ্ঞতায় চাকরি হবে না। দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। অদক্ষ মানুষকে চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্ব দিতে চাই না।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, করোনা মহামারিতে চট্টগ্রাম বন্দর সচল রেখেছেন। এটা চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে লেখা থাকবে। আপনারা নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। আপনারা বন্দর সচল রাখায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে এনবিআর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বন্দরের সদস্য মো. জাফর আলমের সঞ্চলনায় সভায় ১৩তম সভার সিদ্ধান্তগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, ওয়াসিকা আয়েশা খান, কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম, সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি একেএম আলতাফ হোসেন, নুরুল কাইয়ুম খান, বিজিএমইএর নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন প্রমুখ।
এছাড়া অনলাইনে জুম অ্যাপে সভায় আরও অংশগ্রহণ করেন এফবিসিসিআই’র সহসভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএর মো. হাতেম, রেজাউল করিম, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক রফিক আহমেদ।