দেশজুড়ে নারী উদ্যোক্তাদের কল্যাণে ‘জয়িতা’র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

959

ঢাকা, ২ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : নারীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সারা পৃথিবীতে একটি সুপরিচিত নাম। নারীর নিরাপত্তার ও নির্ভরযোগ্য ঠিকানার নাম হলো বাংলাদেশ। আর এসব সম্ভব হয়েছে সরকারের নেয়া নানা কল্যাণমুখী উদ্যোগের ফলে।
বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা নারী। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ উচ্চ পদে রয়েছেন নারীরা। এমনকি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশাতেও নারীরা এগিয়ে আসছেন। অনেকে চাকরির পেছনে না ঘুরে হয়েছেন কিংবা হচ্ছেন উদ্যোক্তা। তাদের ছোট-ছোট উদ্যোগগুলো দেশ ছাপিয়ে দেশের বাইরেও সফলতা বয়ে আনছে। তেমনই একটি উদ্যোগ ‘জয়িতা’। দেশজুড়ে নারী উদ্যোক্তাদের কল্যাণে ‘জয়িতা’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রয়াস কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত ধানমন্ডির রাপা প্লাজার ৪র্থ ও ৫ম তলায় স্থাপিত হয় ‘জয়িতা’ বিপণন কেন্দ্র। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক একটি কার্যক্রম।
২০১১ সালের ১৬ নভেম্বর ‘জয়িতা’র কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবা বিপণন এবং বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার বলেন, এতে দেশজুড়ে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে গতি সঞ্চারিত হয়েছে। পাশাপাশি নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে নারী ও পুরুষের বৈষম্য হ্রাস পাবে। সর্বোপরি নারীর ক্ষমতায়ন এবং পর্যায়ক্রমে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন হবে।
জানা যায়, ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে সরকারের অর্থায়নে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ‘জয়িতা’ কর্মসূচি পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন শুরু করে। প্রথমে কর্মসূচিটির মেয়াদ ছিল তিন বছর। পরবর্তীতে জয়িতাকে একটি স্বতন্ত্র ফাউন্ডেশনে রূপ দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে ‘জয়িতা’ বিজয়ী নারীর প্রতীক।
জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফরোজা খান বলেন, কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ‘জয়িতা’ তথা নারীমুক্তির স্বপ্নটিকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ‘জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ’ নামে একটি অভিনব কার্যক্রম শুরু করে। এর ফলে ‘জয়িতা’র পরিচিতি যেমন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি জয়িতাকে কেন্দ্র করে দেশের নারীসমাজের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও আশাবাদ সঞ্চারিত হয়। পরবর্র্তীতে ‘জয়িতা ফাউন্ডেশন’ নামে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগী একটি অলাভজনক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়।
তিনি বলেন, জয়িতা ফাউন্ডেশন নিজে ব্যবসা করে না, নারী উদ্যোক্তারা ‘জয়িতা’র প্ল্যাটফর্মে প্রত্যক্ষভাবে ব্যবসা করেন। জয়িতা ফাউন্ডেশন পরিকাঠামোগত সুবিধাদিসহ নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনায় ও পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় জ্ঞান-দক্ষতা প্রদান করে। ক্ষেত্রবিশেষে পুঁজি যোগানের ক্ষেত্রে ঋণ সহায়তা প্রদান করে।
‘জয়িতা’র ব্র্যান্ড ভ্যালু সৃষ্টির লক্ষ্যে বিপণনযোগ্য পণ্য/সেবার মান নিয়ন্ত্রণসহ প্রচার প্রসারে জয়িতা ফাউন্ডেশন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করে থাকে বলে জানান আফরোজা খান।
তিনি জানান, জয়িতা ফাউন্ডেশনের স্থায়ী ভবন স্থাপনের জন্য ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কের পাশে এক বিঘা জায়গা প্রদান করা হয়েছে। এই জায়গায় বহুতল জয়িতা ভবন তৈরির কাজ চলমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে লিঙ্গ সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করাই জয়িতা ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্যে জয়িতা ফাউন্ডেশন রাজধানীতে তাদের নিজস্ব শো-রুমে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রি করে। এছাড়া অনলাইনেও ভার্চুয়ালি এসব পণ্যের বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার বলেন, দেশজুড়ে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করছে।
নারীদের উদ্ধুব্ধ করতে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল নারীদের ‘জয়িতা’ পুরস্কার দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
‘জয়িতা’র প্রদর্শনী কেন্দ্রে নিজের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করা টাঙ্গাইলের বুটিক হাউজের উদ্যোক্তা রায়হানা রহিম বলেন, আগে আমরা আমাদের তৈরি পোশাকগুলো ফেসবুক কিংবা পরিচিতজনদের মাধ্যমে বিক্রি করতাম। কিন্তু জয়িতা’র মাধ্যমে এখন আমরা সেগুলো বিক্রি করছি। এতে সাড়াও পাচ্ছি বেশ।
জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান বলেন, নারীকে যদি আমরা প্রকৃতভাবে ক্ষমতায়িত করতে চাই তাহলে তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে হবে।