বঙ্গবন্ধুর সাফল্যের নেপথ্যের কারিগর ছিলেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব : স্পিকার

855

ঢাকা, ৮ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সাফল্যের নেপথ্যের কারিগর ছিলেন তাঁর সহধর্মিনী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলে থাকা অবস্থায় তিনি সন্তানদের মানুষ করা, ঘর সংসার সামলানো থেকে শুরু করে দলীয় নেতাকর্মীদের দেখভাল সবকিছুই করতেন। বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করাসহ সবধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই দিতেন এই মহীয়সী নারী।’
স্পিকার আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে উইমেন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ (ডব্লিউজেএনবি) আয়োজিত ‘বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে আঙ্গুর নাহার মন্টি’র পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তৃতা করেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক বাংলাদেশের খবর সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া ও ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী এমপি।
স্পিকার বলেন, দেশের সকল নারীর জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎস বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিনি এমন একজন অনন্য বাঙালি নারী ছিলেন, যিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি জীবনে অনুপ্রেরনাই ছিলেন না, তিনি একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারীও ছিলেন। যার অনেক অবদান এবং ভূমিকার মধ্য দিয়েই আজকের বাংলাদেশ।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, একাধারে একজন স্ত্রী, একজন মমতাময়ী মা, দক্ষ সংগঠক এবং দূরদর্শী রাজনীতিবিদ হিসেবেও তাঁকে আমরা দেখতে পাই। রাজনৈতিক সংগ্রাম আন্দোলনের বেশিরভাগ সময়ই বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে অন্তরীন থাকতে হয়েছে। এই সময়টিতে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে শুধু মানসিক সাহস জোগানোই নয়, তাঁর প্রতিটি কাজ কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায় সেই বিষয়টিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
স্পিকার বলেন, শৈশবে বৈবাহিক সূত্রে বঙ্গবন্ধুর জীবনে তাঁর আগমন, অল্প বয়স থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবনসাথী হিসেবে তাঁকে অত্যন্ত কাছ থেকে দেখার, জানার এবং চেনার মধ্য দিয়ে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার যে চিন্তা, চেতনা, আদর্শ, সংগ্রামসহ সব বিষয়ের সাথে তিনিও একাত্ম হয়ে পড়েন। নিজের অজান্তেই হয়তো তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে থেকে এই স্বাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার এই আদর্শটিকে বাস্তবায়নের জন্য পুরোপুরি জড়িত হয়ে যান। এই অন্তরালে এবং নেপথ্যে থাকা মহান নারীর যে ভূমিকা সেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ইতিহাসে অবশ্যই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও বেগম ফজিলতুন্নেছা মুজিবের কথা অনেকবার অনেক প্রেক্ষাপটে এসেছে এবং বঙ্গবন্ধু তাঁকে রেনু বলেই ডাকতেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুর জীবনে সমগ্র স্বত্তাজুড়েই ছিল রেনুর জন্য অফুরন্ত ভালবাসা এবং ঠিক তেমনিভাবে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবেরও তাঁর স্বামীর জন্য নির্মল ও প্রগার ভালবাসা আমরা দেখতে পাই। কিভাবে তিনি একটি সংসার চালিয়ে সেখান থেকে কিছু কিছু অর্থ সংরক্ষণ করে সেটি রেখে দিতেন কেননা তিনি জানতেন এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং সেটি তিনি বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে সহযোগিতা করতেন। সেখান থেকেও তাঁর চিন্তার গভীরতা এবং দূরদৃষ্টি সম্পর্কে জানা যায়।’
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, তিনি অত্যন্ত সরল জীবন-যাপন করতেন, সাধারণের মাঝে তিনি মিশে থাকতেন। তাঁর নিজস্ব কোন চাহিদা বা চাওয়া পাওয়া ছিল না। শুধু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আদর্শ যেন বাস্তবায়িত হয় সেজন্যে বিভিন্ন ধরনের ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে প্রতিনিয়ত তিনি সংগ্রাম করেছেন। তাঁর মাঝে আমরা দেখতে পাই অসীম সাহস, দৃঢ় মনোবল এবং আত্মবিশ্বাস, এর মধ্য দিয়েই তিনি সকল বাধাকে অতিক্রম করেছেন।
স্পিকার বলেন, তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন, সহযোগিতা করেছেন এবং এই দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে অনেক সংকটময় মুহুর্ত ছিল। কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার অনেক সময় এসেছে এবং সেই সময়গুলোতে অত্যন্ত ধৈর্য্যরে সাথে ও দৃঢ়তার সাথে চিন্তাপ্রসুত দিকনির্দেশনা সংবলিত সিদ্ধান্ত বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব দিয়েছেন। যার মধ্য দিয়ে তাঁর গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞাই দেখা যায়।
তিনি বলেন, ‘প্যারোলে মুক্তি নয়, সম্পূর্ণ মুক্ত হয়েই যেকোন আলোচনায় যাবেন বঙ্গবন্ধু এই চিন্তাটিও বেগম মুজিব থেকেই এসেছে এবং তিনিই বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন, ‘প্যারোলে মুক্তি নয়, এই বাংলার মানুষই তোমাকে মুক্ত করবে’ এবং তাই হয়েছে, এটিই ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত।
স্পিকার বলেন, বাংলাদেশের নারীর সার্বিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের নারীদের যে উপস্থিতি দেখা যায় তার অন্যন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। কোন পদ পদবী না থাকার পরও রাজনীতিতে একজন নারীর কি ভূমিকা হতে পারে তার যে উদাহরণ তিনি সৃষ্টি করে গেছেন তা অনন্তকাল ধরে সকল নারীর জন্য অনুস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, ‘অন্তরালে থেকে একটি রাজনৈতিক দলকে পরিচালনা করা, আওয়ামী লীগকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দেয়া, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চিন্তাকে ধারণ করে সে বিষয়গুলোকে নিয়ে কিভাবে একটি দলকে পরিচালনা করা যায়, রাজনৈতিক কর্মীদের সাথে তাঁর একাত্মতা ও এক সাথে কাজ করার লক্ষ্যই ছিল বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা সংগ্রাম, বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
মানুষকে ভালবাসা এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার দীক্ষাগুলো বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের থেকে গ্রহণ করার আহবান জানিয়ে স্পিকার বলেন, এখান থেকে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বিষয়ে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের নারীদের শিক্ষনীয় রয়েছে।
তিনি বলেন, সাধারণের মাঝে থেকেও অসাধারণ এই নারীর রাজনৈতিক দূরদর্শীতা ও প্রজ্ঞা সেখান থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আগামী দিনে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে সুসংহত করতে হবে।