বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশ ও বাঙালির অস্তিত্ব চিন্তা করা যায় না : শেখ সেলিম

1199

ঢাকা, ১১ নভেম্বর ২০২০ (বাসস) : আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু মানে বাংলার স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশ ও বাঙালির অস্তিত্ব চিন্তা করা যায় না।
তিনি আজ সংসদে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতার জীবন, কর্ম, আদর্শ, দর্শনের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন।
সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৯ নভেম্বর সংসদ কার্যপ্রনালী বিধির ১৪৭ ধারায় জাতির পিতার জীবন, কর্ম, আদর্শ, দর্শন তুলে ধরে এ মহান নেতার প্রতি সংসদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানোর এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
আজ সন্ধ্যা ৬টা ৩ মিনিটে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতেই সাধারণ আলোচনা হয়। পরে ডেপুটি স্পিকারের সভাপতিত্বে বৈঠক মুলতবি হয়।
আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সূজন, তথ্য যোগাযোগা ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, সরকারি দলের আব্দুল মতিন খসরু, বেগম মেহের আফরোজ, সালমান ফজলুর রহমান, আবদুস সোবহান মিয়া, মৃণাল কান্তি দাস, নজরুল ইসলাম বাবু, বেগম নাহিদ ইজাহার খান, জাতীয় পার্টির সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুস্তম আলী ফরাজী।
শেখ সেলিম বলেন, জাতির পিতা বাঙালির অধিকার আদায়ে জীবনবাজী রেখে আন্দোলন – সংগ্রাম করে জাতিকে মহামূল্যবান স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। ভারত বিভাগ করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি প্রথম রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সূত্রপাত করে বাঙালির জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করে ধাপে ধাপে আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার আন্দোলনের দিকে তা ধাবিত করেন। ৪৮’ সালেই তিনি উর্দুকে তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বলিষ্ট প্রতিবাদ করেন। এ প্রতিবাদের পথ ধরে তার নেতৃত্বেই বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এরমধ্যে মহান ২১ ফেব্রুয়ারী, ৬৬ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯’ গণঅভ্যূত্থান, ৭০’এর নির্বাচন, সবশেষে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এবং ২৬ মার্চে স্বাধীনতা ঘোষণা বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার নির্দেশণা দেন। তাঁর এ নির্দেশে বাংলার দামাল সন্তানরা সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে দেশ স্বাধীন হয়।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম তার আলোচনায় কিভাবে বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে ভাষার অধিকার আন্দোলনে সামিল করে ধাপে ধাপে তাকে আত্মিনয়ন্ত্রণ অধিকার তথা স্বাধীনতা যুদ্ধে রূপান্তর করেন তা পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস তুলে ধরেন। এ দীর্ঘ আন্দোলন – সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম ত্যাগ, দূরদর্শিতা ও বলিষ্ট নেতৃত্ব, বার বার শাসক গোষ্ঠীর হাতে বন্দীত্বসহ তাঁর আত্মত্যাগের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তাঁর চেষ্টায় মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯৯৯ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, বিশ্বের আর কোনো নেতার ঐতিহাসিক ভাষণের সাথে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তুলনীয় নয়। আব্রাহাম লিংকনসহ বিশ্বের বড় বড় নেতার ভাষণের তুলনায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল শুধু বাঙালির নয়, বিশ্বের সকল নিপীড়িত – নির্যাতিত মুক্তিকামী মানুষের জন্য মুক্তির দলিল। আর এ জন্যই ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের অনন্য দলিল হিসাবে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, এ ভাষণ বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে সামিল করেছে। তাই এ ভাষণ বিশ্বে শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসাবে অমর হয়ে আছে এবং থাকবে। যুগে যুগে মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ মার্চ একটি স্বর্ণালী অধ্যায়। ৭ মার্চের ভাষণে ২৬টি বাক্য রয়েছে এই ২৬টি বাক্যের ওপর গবেষণা করা যায়। দেশের প্রথিতযশা সাহিত্যিক, অধ্যাপক, রাজিনীতিবিদ ও, অর্থনীতিবিদরা গবেষণা করেছে। ৭ মার্চের ভাষণ অমর অক্ষয় এক মুক্তির বাণী, যতদিন বাঙালি জাতি থাকবে, ততদিন ৭ মার্চের ভাষণ চিরঞ্জীব হয়ে থাকবে।
ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, জাতির পিতা একজন মহামানব, তিনি শুধু বাংলাদেশের নয় সারা বিশ্বের শোষিত নির্যাতিত মানুষের মহান নেতা এবং মানবতাবাদী দেশপ্রেমী কালভদ্রে একজন জন্মগ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বের বিশালত্বের বর্ণনা দিতে গিয়ে ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, ৭ মার্চের ভাষণ শুধু একটি ভাষণ নয়,এটি একটি অনন্য রনকৌশলের দলিল। নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, ৭ মার্চের ভাষণ আসলে ছিল স্বাধীনতার মূল দলিল।
এই ভাষণ এখন বিশ্ব ইতিহাসের অংশ। সেই ৭ মার্চের ভাষণকে শিক্ষা কার্যক্রমে সিলেবাস করার প্রস্তাব করেন ডেপুটি স্পিকার।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭১’এর ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তবে এর আগেই ৭ মার্চের ভাষণে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।