রোনাল্ডো বিহীন জুভেন্টাসকে ২-০ গোলে পরাজিত করেছে বার্সেলোনা

206

তুরিন, ২৯ অক্টোবর ২০২০ (বাসস) : দুই সপ্তাহ পরেও করোনা পজিটিভ হওয়ায় লিওনেল মেসির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বৈরথে খেলা হলোনা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর। দলের সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়া ঘরের মাঠ আলিয়াঁজ স্টেডিয়ামে বার্সেলোনার কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হয়েছে জুভেন্টাস।
৩৩ বছর বয়সী মেসির সহায়তায় ওসমানে ডেম্বেলে ১৪ মিনিটে কাতালান জায়ান্টদের এগিয়ে দেন। এরপর স্টপেজ টাইমে পেনাল্টি থেকে দলের জয় নিশ্চিত করেন মেসি। ঘটনাবহুল ম্যাচটিতে আলভারো মোরাতার তিনটি গোল অফসাইডের কারনে বাতিল হয়ে যায়। জুভেন্টাসের দূর্ভাগ্যে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়েছেন তুরষ্কের ২২ বছর বয়সী ডিফেন্ডার মেরিহ ডেমিরাল। দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের কারনে ম্যাচ শেষের পাঁচ মিনিট আগে তিনি মাঠ ত্যাগ বাকি সময়টা ১০জন নিয়েই বার্সাকে প্রতিরোধ করতে হয়েছে।
দুই ম্যাচ পর দ্বিতীয় জয় নিয়ে পূর্ণ ৬ পয়েনটসহ জি-গ্রুপের শীর্ষে রয়েছে বার্সেলোনা। ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জুভেস্টাস। আগামী ৮ ডিসেম্বর ক্যাম্প ন্যুতে ফিরতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে স্পেন ও ইতালির জায়ান্ট দুই দল।
ম্যাচ শেষে বার্সা কোচ রোনাল্ড কোম্যান বলেছেন, ‘এটা পুরো মৌসুমে আমাদের সেরা ম্যাচ ছিল। ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ একটি দলের বিপক্ষে এটা অনেক বড় একটি জয়। আমরা নিজেদের প্রমানের জন্যই এখানে খেলতে এসেছি। ম্যাচটি নিয়ে আমি দারুন সন্তুষ্ট। খেলোয়াড়রা আজ যেভাবে মানসিক ভাবে দৃঢ়তা দেখিয়েছে তা ভবিষ্যতেও কাজে আসবে। সত্যিকার অর্থেই এটা অসাধারন একটি জয়।’
জুভেন্টাসের নতুন কোচ হিসেবে আন্দ্রে পিরলোর এটাই প্রথম পরাজয়। জুভেন্টাসের খেলোয়াড় হিসেবে সর্বশেষ ম্যাচেও তিনি ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে বার্সেলোনার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। পিরলো বলেছেন, ‘আমরা জানতাম এটি একটি কঠিন ম্যাচ। এই ম্যাচে তাদের দলে বেশী অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ছিল। অন্যদিকে আমরা নিজেদের পুনর্গঠনের পর্যায়ে রয়েছি। আমাদের আরো উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। আশা করছি অন্যান্য খেলোয়াড়দের খুব দ্রুতই দলে ফিরে পাবো। আমার হাতে আর কোন উপায় ছিল না। যাদেওর মূল একাদশে খেলিয়েছি মোটামুটি তাদের দিয়েই ৯০ মিনিট শেষ করতে হয়েছে। এই ধরনের একটি ম্যাচে যা খুবই কষ্টকর।’
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৩০ গোল করা ৩৫ বছর বয়সী রোনাল্ডোকেখেলাতে হলে ম্যাচের ২৪ ঘন্টা আগে করোনা নেগেটিভ হবার প্রয়োজন ছিল। আর্জেন্টাইন সুপারস্টার মেসির বিপক্ষে এটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার ষষ্ঠ ম্যাচ হতে পারতো। ২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার পর পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর রোনাল্ডোর সাথে আর দেখা হয়নি মেসির। ম্যাচের ঠিক আগে রোনাল্ডো ইন্সটাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘সুস্থ অনুভব করছি। পিসিআর ভুয়া।’
যদিও পরবর্তীতে তিনি পোস্টটি ইন্সটাগ্রাম থেকে সড়িয়ে ফেলেন। পরে একটি ভিডিও পোস্টে জুভেন্টাসের জার্সি গায়ে তিনি সতীর্থদের উদ্দেশ্যে শুভকামনা জানিয়েছিলেন। পর্তুগালের দায়িত্ব পালনের সময় গত ১৩ অক্টোবর প্রথমবার কোভিড-১৯ পজিটিভ হবার পর থেকেই ইতালিতে আইসোলেশন আছেন রোনাল্ডো।
এই পরাজয়ে জুভেন্টাস কিছুটা হলেও চাপে থাকবে। অন্যদিকে চাপে থাকা কোম্যানের অধীনে বার্সেলোনা গত সপ্তাহে গেতাফের বিপক্ষে ১-০ ও রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৩-১ গোলে পরাজয়ের পর দারুনভাবে নিজেদের ফিরিয়ে আনলো। বার্সেলোনা সভাপতি মঙ্গলবার তার বোর্ড পরিচালকদের নিয়ে একসাথে পদত্যাগ করেছেন। মেসির সাথে বিতর্কে বার্সা সমর্থক ও সাধারণ জনগনের চাপের মুখে কার্যত বাতার্মেউ একটু আগে ভাগে পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। সে কারনেই মাঠ ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন ধরনের ঘটনায় বিধ্বস্ত বার্সার জন্য এই জয়টা ছিল দারুন গুরুত্বপূর্ণ।
বার্সা ডিফেন্ডার সার্জি রবার্তো বলেছেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে পরাজয়ের পর এভাবে লড়াইয়ে ফিরে আসাটা জরুরী ছিল। আমরা সবাই আনন্দিত। এখানে মাত্র দুই গোলের পার্থক্য হলেও এটাই শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে। পুরো ম্যাচে আমাদেরই প্রাধান্য ছিল, সে কারনে সুযোগগুলো আমরাই সৃষ্টি করেছি।’
ম্যাচের শুরুতেই বেশ কয়েকটি সুযোগ সৃষ্টি করে জুভেন্টাস রক্ষনভাগকে ব্যস্ত করে তুলে বার্সা। মেসিকে আটকাতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে লিওনার্দো বনুচ্চিকে। সাবেক জুভেন্টাস মিডফিল্ডার মিরালেম পানিচের শট কোনমতে রুখে দেন গোলরক্ষক ওজিচে সিজিসনি। আঁতোয়ান গ্রীজম্যানের শট পোস্টে লেগে ফেরত আসে। তবে ১৪ মিনিটে মেসির ক্রস থেকে দুইজন ডিফেন্ডারের মধ্য দিয়ে ডেম্বেলের জোড়ালো শটে বার্সা এগিয়ে যায়। কিছুক্ষন পরেই মোরাতা বল জালে জড়ালেও ভিএআর প্রযুক্তি অফ-সাইডের সিদ্ধান্ত দেয়। গ্রীজম্যানের ব্যাক-হিল পাসে মেসির শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে হুয়ান কুয়াদ্রাদোর ক্রস থেকে মোরাতা গোল করলে আবারো অফ-সাইড বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ৫৫ মিনিটে তৃতীয়বারের মত ভিএআর প্রযুক্তি জুভেন্টাসের জন্য দূর্ভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে। আনসু ফাতিকে ডি বক্সের মধ্যে ফাউলের অপরাধে ফেডেরিকো বার্নারডেশির বিপক্ষে পেনাল্টি আদায় করে নেয় বার্সা। স্পট কিক থেকে ইনজুরি টাইমে দলের ব্যবধান দ্বিগুন করার পাশাপাশি জয় নিশ্চিত করেন মেসি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটি মেসির ১১৭তম গোল।