জয়পুরহাটে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প বদলে দিয়েছে দামথর গ্রামের অসহায় নারীদের ভাগ্য

246

॥ শাহাদুল ইসলাম সাজু ॥
জয়পুরহাট, ২৯ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস) : দেলোয়ারা বেগম, বয়স ৪০। জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে কালাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল দামথর গ্রামের এক ভাগ্যহত নারীর নাম। সংসারে অভাব যখন কিছুতেই মিটানো যায় না। তখন প্রতিবেশীর মাধ্যমে খবর মিলে বর্তমান সরকারের আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের। অসহায় দেলোয়ারা বেগমসহ দামথর গ্রামের ৬০ নারীর ভাগ্য বদলে দিয়েছে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প। মহামারি করোনা প্রাদূর্ভাবের কারণে ব্যবস্যা বাণিজ্য যখন স্থবির হয়ে পড়েছে ঠিক সেই সময়ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে জয় করে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের ঋণ সহায়তায় নারীরা গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন।
সরেজমিন দেলোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দামথর গ্রাম উন্নয়ন সমিতির ১ নং সদস্যা হিসাবে ২০১৩ সালে ভর্তি হন দেলোয়ারা। কিছু দিন পরেই সঞ্চয়ের সঙ্গে প্রথম পান ৫ হাজার টাকা ঋণ। যা বর্তমানে দেলোয়ারা বেগমের প্রায় ১০ লাখ টাকার সম্পদে পরিণত হয়েছে। এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সফল নারী হিসাবে। পিতা মাতার অভাবের সংসারে ৭ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় দেলোয়ারা বেগমের বিয়ে হয় প্রতিবেশী সাকাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। স্বামীর সংসারে বাড়ি ভিটা ছাড়া কিছুই ছিল না। প্রথম ঋণের টাকায় খাসি কিনে লালন পালন করে বিক্রি করেন ১৪ হাজার টাকায়। ১০ হাজার টাকায় দশ শতাংশ জমি বন্ধক নেন। বাকী ৪ হাজার টাকা দিয়ে আবার একটি খাসি কিনেন। পরের খাসি বিক্রি করেন ১৬ হাজার টাকায়। এবার একটি ষাঁড় কিনে লালন পালন শেষে বিক্রি করেন ৬৫ হাজার টাকায়। এরমধ্যে ঋণের পরিমানও বাড়তে থাকে। বর্তমানে সঞ্চয় রয়েছে ২৫ হাজার ৮৪৭ টাকা। বর্তমানে এসএমই ঋণ চলছে ৫০ হাজার টাকা। এখন দেলোয়ারার সংসারে ৫ টি গরুসহ ছাগল ও হাসঁ মুরগী রয়েছে। সংসারের আয় দিয়ে এক ছেলে এক মেয়ের লেখা পড়ার পাশাপাশি তিন শতাংশ জমি ক্রয় ও ৪ বিঘা জমি পত্তন নিয়ে চাষ করছেন ধান ও শাক সবজি। ঘরে নিয়েছেন বিদ্যুৎ সংযোগ কিনেছেন আসবাবপত্রও। অভাবের সংসারে স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করে উন্নতি দেখে খুশি বলে জানালেন স্বামী সাকাওয়াত হোসেন। এ রকম আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সদস্য হয়ে ভাগ্য বদল করেছেন দামথর গ্রামের নি:স্ব অসহায় থেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন ময়না বেগম, রওশন আরা, জমিলা খাতুন, বদিরুজ্জামানসহ দামথর গ্রাম উন্নয়ন সমিতির ৬০ সদস্য। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সহায়তায় তাদের সংসারে এখন আর কোন অভাব নেই। কাজের মাধ্যমে সংসারে সফলতা অর্জন করায় সকলের চোখে মুখে হাসি। ৬০ জন সদস্য নিয়ে গঠন করা হয় দামথর গ্রাম উন্নয়ন সমিতি। ময়না বেগম সভাপতি ও দোলোয়ারা বেগম ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সদস্যদের উন্নতি দেখে সদস্য ভুক্তির জন্য অনেকে আবেদন করছেন । আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের কালাই উপজেলা সমন্বয়কারী মিনহাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশটি বিশেষ উদ্যোগের একটি হচ্ছে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প। কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবারক হোসেন পারভেজ বলেন, গ্রামাঞ্চলে গেলে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সদস্যদের উন্নতি চোখে পড়ে। কালাই উপজেলা চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, আর্থিক ভাবে স্বাবলম্ব ীহচ্ছেন আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সদস্যরা। এতে গ্রামীণ জনপদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী রাকিবুল হাসান বলেন, জয়পুরহাট জেলায় ৩২ ইউনিয়নে ৮৮২টি সমিতি গঠন করা হয়েছে। সমিতির সদস্য সংখ্যা ৪৫ হাজার ৬৪৮ জন। সরকারের দেওয়া উৎসাহ বোনাসসহ বর্তমান সঞ্চয়ের স্থিতির পরিমান হচ্ছে ৬০ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সদস্যদের নিজস্ব পুঁজি হচ্ছে ২২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। জেলার ৪৫ হাজার ৬৪৮ জন সদস্যের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৯৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। করোনার প্রাদূর্ভাবের মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মাথায় নিয়ে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে সদস্যদের নিয়ে কাজ করছেন। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নসহ বাঁচার পথ খঁজে পাওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী করেছে। একজন সদস্য ২৫০০ টাকা সঞ্চয় জমার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে প্রদান করা হচ্ছে সম পরিমান বোনাস। ১০ হাজার টাকা ঋণের বিপরীতে ৮০০ টাকা লভ্যাংশ পরিশোধ করতে হচ্ছে এক বছরে। যা দরিদ্র পরিবার গুলোর জন্য সহনীয়। এতে করে দেশের প্রতিটি দরিদ্র পরিবারকে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের আওতায় নিয়ে বর্তমার সরকারের ভিশন ও লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যে দেশকে শূন্য দারিদ্রে উন্নীত করা সম্ভব হবে আশা প্রকাশ করেন সফল হওয়া নারীরা।