মার্শেইর বিপক্ষে ম্যানচেস্টার সিটির দাপুটে জয়

282

প্যারিস, ২৮ অক্টোবর ২০২০ (বাসস) : মার্শেইকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি।
মার্শেইর অরেঞ্জ ভেলোড্রোম মাঠে সাধারণত স্বাগতিক দর্শকদের আলাদা একটি উত্তেজনা সব সময়ই লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু সেই উত্তেজনা থেকে রক্ষা পাওয়া সিটিজেনরা দর্শক শুন্য মাঠে সহজ জয় তুলে নিতে ভুল করেনি। পেপ গার্দিওলার দলের জন্য ম্যাচটি অনেকটাই নিজেদের প্রমানের ও ঝালিয়ে নেবার ম্যাচ ছিল। প্রিমিয়ার লিগে ৫ ম্যাচে মাত্র ৮ পয়েন্ট নিয়ে ১৩তম স্থানে থাকা সিটিজেনদের আত্মবিশ^াসেও যেন এবারের মৌসুমে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে।
ম্যাচের ১৮ মিনিটে ফেরান টরেসের গোলে এগিয়ে যায় সিটি। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে গোল পেলেন টরেস। কেভিন ড্রি ব্রুইনার পাস থেকে স্প্যানিশ এই ফরোয়ার্ড দারুন এক গোলে সিটিকে লিড এনে দেন। ম্যাচের শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রন নিজেদের দখলে নেয়া সিটি এই গোলের পর আরো আত্মবিশ^াসী হয়ে উঠে। ৭৫ মিনিটে পোস্টের খুব কাছে থেকে ইকে গুনডোগান ব্যবধান দ্বিগুন করেন। ৮১ মিনিটে রাহিম স্টার্লিংয়ের হেডের গোলে সিটির দাপুটে জয় নিশ্চিত হয়। আবারো ডি ব্রুইনার নিখুঁত পাস থেকে ইংলিশ ফরোয়ার্ড স্টার্লিং হেডের সাহায্যে বল জালে জড়ান। প্রথমার্ধে মার্শেই সিটি গোলরক্ষক এডারসনকে কিছুটা চাপে ফেলতে চেষ্টা করেছিল। ৩০ গজ দুর থেকে নেমাঞ্জা রাডোনিচের জোড়ালে শটটি এডারসন সহজেই রুখে দেন। বিরতির পর ফ্লোরিয়ান থভিনের শট কোনমতে আটকে দেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এডারসন।
দলের এই উজ্জীবিত পারফরমেন্সে দারুন সন্তুষ্ট সিটি বস গার্দিওলা ম্যাচ শেষে বিটি স্পোর্টসকে বলেছেন, ‘আমরা সত্যিই আজ দারুন খেলেছি। ম্যাচে একটি গোলও হজম করিনি এবং পুরো ম্যাচের নিয়ন্ত্রন ৯০ মিনিটই আমাদের দখলে ছিল। এই আগ্রাসী মনোভাবই আমি সব সময় ছেলেদের কাছ থেকে আশা করি। এই পারফরমেন্স ও ফলাফলে আমি দারুন সন্তুষ্ট। এ্যাওয়ে ম্যাচে জয়ী হওয়াটা সব সময়ই কঠিন। আমরা উভয় দিক থেকেই আজ খেলার চেষ্টা করেছি। পুরো মাঠের সুবিধাটা কাজে লাগিয়ে গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছি। আজকের ম্যাচে রাহিম স্টার্লিংয়ের সাথে ফিল ফোডেন অসাধারণ খেলেছে। মার্শেইর পাঁচজন খেলোয়াড়কে আমরা রক্ষনভাগে খেলতে বাধ্য করেছি যা মোটেই আশাতীত ছিল না। প্রথম ম্যাচে পোর্তোর বিপক্ষেও একই ঘটনা ঘটেছিল। আর এই ধরনের ম্যাচগুলোতে আমরা যতবার রক্ষনভাগকে বাধ্য করেছি ততবারই ম্যাচের নিয়ন্ত্রন ও ছন্দ আমাদের হাতেই ছিল। রক্ষনভাগেও আজ আমরা সংঘবদ্ধ ছিলাম। অমারিক লাপোর্তে দারুন খেলেছেন। কাইল ওয়াকার সম্ভবত আজ তার সেরা ফর্মে ছিল।’
এই জয়ে সিটি দুই ম্যাচে শতভাগ জয় নিয়ে গ্রুপ-সি’র শীর্ষেই থাকলো। একইসাথে বাছাইপর্ব থেকে নক আউট পর্বে যেতে নিজেদের ফেবারিট হিসেবই ধরে রাখলো। আগামী ৩ নভেম্বর ঘরের মাঠে সিটিজেনরা অলিম্পিয়াকোসকে আতিথ্য দিবে।
এবারের মৌসুমে স্ট্রাইকার সঙ্কটে রয়েছে সিটি। এই ম্যাচের আগে গাব্রিয়েল জেসুসের সাথে ইনজুরির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন সার্জিও এগুয়েরো। এবারের মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় খেলা ৯টি ম্যাচের কোনটিতেই সিটি তাদের স্বীকৃত এই দুই ফরোয়ার্ডকে একসাথে পায়নি। মাত্র চারটি ম্যাচে তারা তাদের অন্তত একজন ফিট স্ট্রাইকারকে খেলাতে পেরেছে। এ কারনেই মার্শেইর বিপক্ষে গার্দিওলা পরীক্ষামূলক ভাবে সেন্ট্রাল এ্যাটাকিং পজিশনে টরেসকে খেলাতে বাধ্য হয়েছে। ক্লাবের হয়ে এটাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মূল একাদশে টরেসের প্রথম ম্যাচা। তাকে সহায়তা করতে আক্রমনভাগে আরো ছিলেন ফোডেন ও স্টার্লিং।
গার্দিওলার এই পরীক্ষা অবশ্য কাজে এসেছে। এই তিন জনকে রুখতে পাঁচজনের মার্শেই রক্ষনভাগকে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে। আরো একবার এই তিনজনকে পিছন থেকে সহযোগিতা করেছে ডি ব্রুইনা। প্রথম গোলের পর সিটি কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও ম্যাচের শেষের দিকে দুই গোলে যোগ্যতর দল হিসেবে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে সফরকারীরা।
মার্শেই বস আন্দ্রে ভিয়াস-বোয়াস বলেছেন, ‘এটা একটি কঠিন ম্যাচ ছিল। আমরা নিজেদের ভুলের মাশুল দিয়েছি। দ্বিতীয় গোলটিতেই আমরা মূলত পিছিয়ে পড়েছিলাম।’
এ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে টানা ১৩ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে সিটি। প্রথম গোলটি ছিল সব ধরনের প্রতিযোগিতায় গার্দিওলার অধীনে সিটির ৬০০তম ম্যাচ। ২০১৬ সালে দলের দায়িত্ব নেবার পর প্রিমিয়ার লিগের অন্য যেকোন দলের তুলনায় সিটি ১১৭টি গোল বেশী করেছে।
অন্যদিকে ছয় মৌসুম পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে টানা দুই ম্যাচে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল মার্শেই।