বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম রোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

120

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-নিরাপদ সড়ক দিবস
লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম রোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী ডাইভিং লাইসেন্সের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, অনেক সময় ড্রাইভার তার হেলপারের কাছে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে একটু বিশ্রাম করতে চায়, তারপরেই দুর্ঘটনা ঘটে। অনেক সময় দেখা যায় ড্রাইভার এত ক্লান্তÍ থাকে যে, সে ঘুমিয়ে পড়ে এবং দুর্ঘটনা ঘটে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা হেলপারের কাজ করেন আমি মনে করি, তাঁদেরকেও একটু প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। তাঁদেরও যেন গাড়ি সম্পর্কে এবং গাড়ি চালনা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ থাকে। পাশাপাশি, গাড়ির ফিটনেস বজায় রাখাটাও খুব দরকার।’
তিনি বলেন, গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষাটা যেন নিয়মিত হয়, সেজন্য যেমন ব্যবস্থা নিতে হবে তেমনি চালকদের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাইভেট সেক্টর বা গর্ভনমেন্ট সেক্টরের সবাইকে বলবো, আপনারা যদি এভাবে করতে পারেন-এতটা সময় বা দূরত্ব একজন ড্রাইভার চালাবে, তারপরে তাঁর বিশ্রামের ব্যবস্থা করে অলটারনেটিভ ড্রাইভারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে দুর্ঘটনা কমে যাবে।’
প্রাইভেট গাড়ি চালনার ক্ষেত্রেও তিনি নির্দিষ্ট সময়ের পরে চালকের বিশ্রাম এবং আহারের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন এবং তাঁর সরকার পর্যায়ক্রমে সকল সড়কের (মহাসড়ক) পাশে বিশ্রামাগার নির্মাণ করবে বলেও উল্লেখ করেন।
সরকার পর্যায়ক্রমে সারাদেশে চালকদের জন্য বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে এবং অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ড্রাইভিং শিক্ষাটাকে জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে এবং সবাইকে (চালক) ড্রাইভিং শিক্ষাটা দিতে হবে। অনলাইনেও শিক্ষানবীশ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা ওভারটেকিং থেকে বিরত থাকার জন্য চালকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘চালকদের মধ্যে একটা প্রবণতা রয়েছে ওভারটেক করা। একটা গাড়ি সামনে চলে গেছে বেহুশ হয়ে সেই গাড়িটিকে ওভারটেক করতে গিয়েই কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটায়। এই প্রবণতাটাও বন্ধ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গাড়িচালকদের নির্দিষ্ট গতিসীমা ও আইন মেনে নিরাপদে যানবাহন চালাতে হবে।’
তিনি ওভারটেকিং এবং ওভার স্পিড প্রতিরোধে সড়ক-মহাসড়কে স্পিডো মিটার লাগানোর বিষয়েও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিন্তা-ভাবনার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে তাঁর সরকার দেশের ২১টি স্থানে একমুখী ও উভয়মুখী মিলে মোট ২৮টি ‘এক্সেল লোড কন্ট্রোল ষ্টেশন’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সারাদেশে সড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের চৌম্বক অংশ তুুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে ‘ন্যাশনাল রোড সেফটি স্ট্রাটেজিক অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৭ থেকে ২০২০ প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার ‘এসডিজি’-এর রোড-সেফটি সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ‘এসডিজি অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করছে।
তাঁর সরকারের ‘জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন’, ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮,’ এর বাস্তবায়নের উদ্যোগ, ফিটনেস ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান এবং ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ৬৪ জেলায় ‘ভিহেকেল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) স্থাপন করছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সারাদেশের মহাসড়কে ১৪৪টি ব্ল্যাকস্পট চিহ্নিত করে দুর্ঘটনা প্রবণ স্থান ও বাজার এলাকায় রোড ডিভাইডার স্থাপনসহ বাঁক সরলীকরণ, রোড মার্কিং, সাইন-সিগনাল ইত্যাদি স্থাপন করা হয়েছে। একইসঙ্গে দেশের ২২টি মহাসড়কে সব ধরনের থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা এ সময় দেশ ধ্বংস এবং ষড়যন্ত্রের রাজনীতির জন্য বিএনপি-জামায়াত সরকারেরও কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার ’৯৬ সালে সরকারের এসেই বিআরটিসি’র জন্য ১ হাজার নতুন বাস ক্রয় করেছিল পরবর্তীতে ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পর সেগুলোর আর হদিস মেলেনি।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আবার বিআরটিসি’র জন্য নতুন বাস ক্রয় করা হলেও বিএনপি জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়ে ৬শ বিআরটিসি বাস, ট্রাক এবং প্রাইভেটকারসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার যানবাহন ধ্বংশ প্রাপ্ত হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা কষ্ট করে কিনে নিয়ে আসি মানুষের সুবিধার জন্য আর তা তারা ধ্বংস করে আন্দোলনের নামে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে।’
ঢাকা এবং চট্টগ্রামে মেয়েদের জন্য ২২টি বাস সার্ভিস সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে তাঁর সরকার, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহারের জন্য ১৮৮টি বাস প্রদান করা হলেও অনেক স্কুলেরই সরকারি বাস গ্রহণের আগ্রহ দেখা যায়নি।
তিনি অভিযোগ করেন, স্কুল পর্যায়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের সুযোগ-থাকলেও অনেক অভিভাবকই তাঁদের অর্থের শো-আপের জন্য পুত্র-পোষ্যকে বিলাসবহুল গাড়িতে বিদ্যালয়ে পাঠায়, যেটা এক ধরনের অহমিকা বোধ এবং এই অহমিকা একদিকে যেমন তাঁর সন্তানের ক্ষতি করছে তেমনি যানজটও বাড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা আরো বাড়–ক, গাড়ি কেনার ক্ষমতা বাড়–ক-সে ধরনের সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি। তারপরেও আমি বলবো, ছেলে-মেয়েকে সেভাবেই শিক্ষা দেওয়া উচিত, একই স্কুলে পড়লে তাঁরা যেন ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান না করে মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখে।’
তিনি বলেন, সম্পদের অহমিকা করে লাভ নেই। আর তা নিশ্চই এই করেনাভাইরাস আসার পর মানুষ সেই শিক্ষা পেয়েছে ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থ থাকলেই সব সুবিধা ভোগ করা যায় না বা সবকিছু করা যায় না তার থেকেও শক্তিশালী কিছু থাকে। এই করোনাভাইরাস আমাদের সেই শিক্ষাটা দিয়ে যাচ্ছে।’
করোনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসে সবাইকেই স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম মেনে চলতে হবে।
করোনার সেকেন্ড ওয়েভ সম্পর্কে সকলকে সচেতন করে বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহারের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী এবং সিনেথেটিকের পরিবর্তে স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সহজলব্য বিবেচনা কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি গাড়ি চালাবার সময় চালকদেরকেও মাস্ক ব্যবহারের আহ্বান জানান।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬৪৫/আরজি