দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু, আজ মহাসপ্তমী

1182

ঢাকা, ২৩ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস) : দুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ এবং বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
ষষ্ঠীর দিন সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে শুরু হওয়া বন্দনা পূজার সমাপন হয় বিহিত পূজায়। আবাহনের মাধ্যমে মূল মন্ডপে দেবী আসীন হওয়ার পর সন্ধ্যায় দেবীর অধিবাস। আজ মহাসপ্তমী। এদিন সকাল ৫টা ১৫ মিনিটে দেবীর মহাসপ্তমী বিহীত পুজা শুরু হবে। পাঁচ দিনব্যাপী এই পূজা আগামী ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে শেষ হবে।
সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্ডপে ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তবে এতে অংশগ্রহণ ছিল সীমিত। তাপমাত্রা পরীক্ষা করে প্রবেশ করানো হয়েছে সবাইকে। সামাজিক দূরত্বের জন্য রাখা হয়েছে ব্যবস্থা। মাস্ক ছাড়া কাউকে মন্ডপ এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এর আগে বুধবার বোধনের মাধ্যমে এবারের দুর্গোৎসবের আচার পর্ব শুরু হয়।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রেখে এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। করোনা অতিমারীর কারণে উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে শুধুমাত্র সাত্ত্বিক ভাবেই পূজা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয় এবার। প্রদান করা হয় বেশ কিছু নির্দেশনা।
করোনা মহামারীর কারণে সংক্রমণ এড়াতে নির্দেশনানুযায়ী এবছর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে শুধু ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের এবং সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে মেনে ধর্মীয় বিধিবিধান সমুন্নত রেখে দুর্গাপূজার আয়োজন ও অংশগ্রহণের জন্য সনাতন সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, এই বছরের পুজো অন্যান্য বছরের মত নয়। করোনা আতঙ্কের আবহেই এবার দেবীপক্ষের সূচনা হয়া। আর মহামারীর দুর্যোগ মাথায় নিয়েই এবার হচ্ছে মাতৃ বন্দনা
এবার মহালয়া ছিল ১৭ সেপ্টেম্বর। মহালয়ার ৬ দিন পর সাধারণত দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও পঞ্জিকার হিসাবে এবার আশ্বিন মাস ‘মল মাস’ মানে অশুভ মাস হওয়ার কারনে কার্তিক মাসে পুজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পঞ্জিকা মতে এবার দেবী দুর্গার আগমন হচ্ছে দোলায়। দোলায় চড়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে স্বামীর ঘর থেকে রওনা দেবেন তিনি। ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, দোলায় আগমন এর অর্থ মড়ক। ফলে পুজার বা তার পরবর্তী সময়েও মহামারীর পরিস্থিতি বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মায়ের গমন এবার গজে। অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মা বাপের ঘর ছেড়ে পাড়ি দেবেন স্বর্গে। গজে চড়ে গমনের ফল শুভ হয়।
পূরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে এ পূজার আয়োজন করায় এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। আবার রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাত্রার আগে শ্রীরাম চন্দ্র দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবশ্যা তিথিতে। এ জন্যই দেবীর শরৎকালের এ পূজাকে অকাল বোধনও বলা হয়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সর্বশেষ দেওয়া তথ্য অনুসারে, এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ২শ ২৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার মন্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। গত বছরের তুলনায় এবার ১হাজার ১শ ৭৫ টি মন্ডপে পূজা কম হচ্ছে। অন্য দিকে ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা ২শ ৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিলো ২শ ৩৭টি। আর ঢাকা জেলায় পুজা হচ্ছে ৭শ ৪০টি।