মানসিক প্রতিবন্ধী রুবিনাকে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার

540

ঢাকা, ১৪ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস) : দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর মানসিক প্রতিবন্ধী রুবিনাকে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার।
সরকারের আশ্রায়ন প্রকল্পে ‘আবাসিক ভবন নির্মাণ’ খাতের আওতায় রুবিনা বেগমকে এই ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বাসসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও প্রত্যক্ষ তত্বাবধায়নে মুজিব বর্ষের মধ্যে সকল গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরি করে দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর উপজেলার মানসিক প্রতিবন্ধী রুবিনা বেগমের জন্যও ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণে ইতোমধ্যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। দ্রুততম সময়ে তার জন্য ঘরটি নির্মাণ করে দেয়া হবে।
জানা যায়, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মধ্যমপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াহেদের মেয়ে রুবিনা বেগম (৩৬)। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় এলাকায় রুবি পাগলি নামেই পরিচিত। ১৫ বছর আগে বিয়ে হলেও দেড় বছরের মাথায় রুবিনাকে ফেলে তার স্বামী বিদেশ চলে যায়।
সেই থেকে গরীব অসহায় বাবার সংসারে থাকেন রুবিনা। বেশ কয়েকমাস আগে বাবাকেও হারান রুবি। বাবা-মা হারা অসহায় রুবিনার ছোট ভাই আশরাফুল আলমও শারিরিকভাবে প্রতিবন্ধী।
ছোট ভাই প্রতিবন্ধী আশরাফুল আলমকে নিয়ে বাবার রেখে যাওয়া ঝরাজীর্ণ মাটির ঘরে থাকেন রুবিনা। বর্ষার পানিতে ধুয়ে গেছে তাদের মাটির ঘরের দেওয়াল। কিছুদিন আগে রান্নাঘরটিও ভেঙ্গে যায়। ভাঙা টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ওই ঘরে।
বসবাসের অযোগ্য ঘরটি মেরামত বা নতুন ঘর করার পয়সা নেই রুবিনা-আশরাফুলের। গ্রামে নতুন মানুষ দেখলেই এগিয়ে আসেন রুবিনা। সম্প্রতি এক সাংবাদিককে দেখে রুবিনা বলেন, ‘তোরা কি সরকারি লোক বাহে? তোরা কি এটা (একটা) বাড়ি দিবার পারো হামাক? এ জগতে মোর কেউ নাই। সরকারকে কইয়্যা মোক এটা বাড়ি দে বাহে।’
এরপর রুবিনার দুর্দশার কথা গণমাধ্যমে উঠে আসলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে এলে দুস্থ ও দরিদ্র মানুষকে ঘর নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে তাৎক্ষনিকভাবে মানসিক প্রতিবন্ধী রুবিনার জন্য ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারের আশ্রায়ন প্রকল্পে ‘আবাসিক ভবন নির্মাণ’ খাতের আওতায় রুবিনা বেগম ও আশরাফুল আলমকে একটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণে অর্থও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গুণগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত ডিজাইন অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে বাড়িটি নির্মাণ করে দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আশ্রয়নের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই স্লোগানে মুজিব বর্ষের মধ্যে দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে ২ হাজার ৯৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঘর নির্মাণ করে ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৩৬টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার জেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হওয়ায় বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐ এলাকা পরিদর্শনে যান। তিনি মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন এবং সকল গৃহহীন পরিবারসমূহকে পুনর্বাসনের তাৎক্ষনিক নির্দেশ দেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে “আশ্রয়ণ” নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পে মাধ্যমে ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৪০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৪৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন-অসহায়- ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এছাড়াও ২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৫৬ জনকে আয় বর্ধক পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১৮টি পরিবারকে ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
সবুজায়নের লক্ষ্যে প্রতিটি প্রকল্পগ্রামে ফলদ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষরোপণ করা হয়ে থাকে। ২১ লাখের বেশি বৃক্ষরোপন করা হয়েছে।
এছাড়া প্রকল্পগ্রামে বসবাসরত উপকারভোগীদের জীবনমান সহজীকরণের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দেশের সকল মানুষের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়ে ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রতিটি এলাকা থেকে গৃহহীনদের খুঁজে খুঁজে বের করে ঘর করে দেয়া হচ্ছে।
আশ্রায়ন প্রকল্প ছাড়াও গৃহহীনদের আবাসন নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তহবিলসহ বেশ কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে সরকার।