বাংলাদেশের সাথে ইন্দোনেশিয়ার আইবিটিএ চুক্তি চূড়ান্ত করার অঙ্গীকার

906

ঢাকা, ৭ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস) : বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদারে ইন্দোনেশিয়া-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (আইবিটিএ) চূড়ান্ত করার অঙ্গীকার করেছে ইন্দোনেশিয়া।
বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা করার লক্ষ্যে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) ইন্দোনেশিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (কাদিন) সাথে যৌথ উদ্যোগে এক সম্মেলনে অংশ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া এই অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছে।
গত সোমবার ‘বাইল্যাটেরায়াল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ ইন দ্য অনগোয়িং গ্লোবাল প্যানডেমিক অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক ‘এফবিসিসিআই ক্লাউড সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়। আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
‘ক্লাউড সম্মেলনে’ মহামারী পরবর্তীতে দুই দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অবঃ) আজমল কবির, ইন্দোনেশিয়ার কাদিন সভাপতি রোশন পার্কাসা রোস্লানি ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত রিনা পি সোমর্নো।
জাতির পিতার ১০০ তম জন্মবার্ষিকী স্মরণ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ওআইসি, ডি-৮, আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ), ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) সাথে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে মুসলিম ভ্রাতৃত্বেও চেতনায় আমাদের দুই দেশের মধ্যে মানবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটাতে ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষি, বিভিন্ন পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, এনার্জি এবং খনিজ খাতে বাইল্যাটেরায়াল ভ্যালু চেইন ইনিশিয়েটিভ(বিভিসিআই) নেওয়া যেতে পারে। আমরা আশা করি ইন্দোনেশিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক পিটিএ অগ্রগতি আমাদের দ্বি-মুখী বাণিজ্য আরও জোরদার করবে।’
এফবিসিসিআই এডিআর সেন্টারের বিশেষজ্ঞ মধ্যস্থতাকারী প্যানেলে প্রবীণ ও ভবিষ্যৎ আইনজীবীদের একত্রিত করতে কাদিন-এর সমর্থনকে পুঁজি করে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বৈশ্বিক জ্ঞান অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ফলিত গবেষণা, বাণিজ্য সুবিধা, পলিসি এডভোকেসি, প্রযুক্তি স্থানান্তর, স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম, ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া এবং স্টিম-ভিত্তিক দক্ষতাকে আরও এগিয়ে নিতে বর্তমান এফবিসিসিআই বোর্ডের ‘এফবিসিসিআই এর ভিশন ২০৪১’ চালু করা সহ অন্যান্য উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন ফাহিম।
মহামারীর সময়েও বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্য ও উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরে ফাহিম আরও বলেন, ‘আইপি সুরক্ষা সহ আরওআই প্রযুক্তির মতো অর্থনীতির রূপকারের কারণে বিনিয়োগকারীদের কাছে অন্যান্য সমমানের বাজারগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তি এবং জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে ইন্দোনেশীয় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের উৎপাাদন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এগিয়ে রাখা সহ, ১৬০ মিলিয়ন ডলার গ্রাহক বেস, ১.৮ বিলিয়ন সার্ক আঞ্চলিক বাজার, যা ভারত, চীন, ইইউ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াতে বাণিজ্য সুবিধা এবং এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট সুবিধা সহ আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।’
ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশে ইন্দোনেশীয় বিনিয়োগ চাহিদা পূরণের সম্ভাবনা রয়েছে এবং পারস্পরিক অন্তর্ভুক্তিমূলক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য আমি বিদ্যমান সরকারী এবং বেসরকারী খাতকে কাজে লাগাতে উভয় খাতের প্রতিনিধিদের অনুরোধ করবো।’
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে ইন্দোনেশিয়ার কাদিন সভাপতি বলেন, “আমরা আশাবাদী যে, ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (আইবিটিএ) বিষয়ক চলমান আলোচনা দ্রুতই চূড়ান্ত রূপ পাবে, যার ফলাফল হিসেবে ট্যারিফ হারে পরিবর্তন সাধনের মধ্য দিয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে। ইন্দোনেশীয় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের শক্তি, বিদ্যুৎ, পরিবহন, অবকাঠামো এবং পর্যটন খাতে যৌথ উদ্যোগে আগ্রহ দেখিয়েছেন, যা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হতে পারে।”
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, “দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেও আমরা এখনো পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারিনি, যা বর্তমানে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে তিন দিনব্যাপী একটি বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো, যেখানে উভয় দেশের মধ্যকার কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্ভাব্য বাণিজ্য সংগঠিত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মহামারীর কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম আইবিটিএ চুক্তির তৃতীয় পর্যায়ে কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। তার পরেও আমরা আশাবাদী যে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আমরা একটি গঠনমূলক চুক্তি প্রণয়ন করতে সক্ষম হব। যার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও এগিয়ে যাবে।”
আইওআরএ অধিবেশন চলাকালীন সময়ে দেশের নেতাদেও বৈঠকের কথা তুলে ধরে এফবিসিসিআই সভাপতি তার ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধিদের টার্গেট মাইলফলকের মূল বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একত্রিত করে যে কোন বিষয়ে কাদিন দলের সাথে আলোচনার বিষয়ে আশ্বাস দেন।
ক্লাউড কনফারেন্সে এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বাংলাদেশে কাঁচামাল আমদানি, মানব সম্পদ ও দক্ষতা উন্নয়ন, অটোমোবাইল উপকরণ, পাট, কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো অনুদঘাটিত সম্ভাবনাময় খাত সহ সম্পদ বিনিময় ও জ্ঞানের অংশীদারিত্বের বিষয়গুলো গুরুত্বেও সাথে তুলে ধরেন।