বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট নিরসনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নেয়ার পরামর্শ শিক্ষাবিদদের

1774

ঢাকা, ২ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস) : দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরা করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের সেশন জট থেকে মুক্তি দিতে শুধু সম্মান শেষ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে, এই দুই স্তরের শিক্ষার্থীরা সেশন জটের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
শিক্ষাবিদ এবং জাতীয় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাসসকে বলেন, দেশের প্রকৌশল এবং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যারয়গুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে শিক্ষাবর্ষেও শেষ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নিয়ে নিতে পারে। কেননা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের ব্যবস্থা না নিলে সেশন জটের অধিক ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাবতে হবে, তারা অন্তত, শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাটা নিতে না পারলে সেশন জটের বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে। বাকি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তার পরামর্শ হচ্ছে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেশন জট কমিয়ে আনতে অন্তত, একটি সেমিস্টার কমিয়ে আনা যায় কিনা, সে বিষয়টিও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের এক মাস পর থেকে অনলাইন ক্লাস চালু করতে পারতো। এতে হয়তো বা প্রকৌশল ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া শত ভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব হতো না, তবে, এতে তারা পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে অথবা বিকল্প কোন একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। এতে যারা শিক্ষা জীবন শেষ করতে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে হতাশা কম হতো ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদেরকে উচ্চ শিক্ষা শেষ করতে ছয় মাস থেকে এক বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়বে তাদের কর্মজীবন শুরু করার ওপরেও।
শিক্ষার্থীরা তাদের সেশনজট ভীতি সম্পর্কে বাসসকে জানিয়েছে, সম্মান শেষ বর্ষ এবং ¯œাতোকত্তোরের ছাত্ররা শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিলে এবং বছরের শেষ নাগাদ দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা নেয়ার সকল প্রস্তুতি নিলেও, সেশন জট ঠেকানো যাবে না। করোনা ভাইরাস তাদের সব প্রত্যাশা নস্যাৎ করে দিচ্ছে এবং একই অবস্থা হয়েছে প্রকৌশল ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে।
এমনকি ছয় মাসের সেমিস্টার যদি চার মাসে এবং এক বছরের সেমিস্টার ১০ মাসে শেষ করে, তা হলেও তার বাকি লেখা পড়া শেষ করতে আরো আট মাস ও দশ মাস সময় লাগবে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যদি পরীক্ষা গ্রহনে বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহন না করে তা হলে সেশন জট থেকে রক্ষা পাবার কোন উপায় থাকবে না। কমপক্ষে এক বছরের ক্ষতি হয়ে যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম এই একই অভিমত প্রকাশ করে বলেন, স্নাতক সম্মান এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শেষ বর্ষের পরীক্ষা নেয়া হবে একটি ভাল সমাধান। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে, আমাদেরকে করোনা আরো দীর্ঘ সময় মোকাবেলা করতে হবে। এই দীর্ঘ সময় আমাদেরকে শুধু ঘরে বসে না থেকে সবকিছুতে স্বাভাবিক চিন্তা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোভিড-১৯ পরীক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা সহজেই প্রয়োজনে কোভিড টেস্ট করাতে পারে। পাশাপাশি, ক্যাম্পাসে সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর পর শিক্ষার্থীদেরকে কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। কোন শিক্ষার্থী বিনা প্রয়োজনে ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে না পারে সেটিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। এটা না করতে পারলে তা শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক উভয়ের জন্যই উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই শেষ বর্ষের সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা গ্রহনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের হলে নিয়ে আসা হয়েছে এবং ১৪ দিনের কোরেন্টিনে রাখা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর এ পরীক্ষা হবে। গত মে মাসে তাদের এ পরীক্ষা হবার কথা ছিল।
ডিএমসি’র অধ্যক্ষ খান আবুল কালাম আজাদ বাসসকে বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঠিকঠাক মতো এ পরীক্ষাটি নিতে সক্ষম হলে, আমরা অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরও হলে নিয়ে আসব এবং তাদের পরীক্ষা একই ভাবে নেয়ার চেষ্টা করব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারাও বিভিন্ন বিভাগকে এ ধরনের স্নাতক শেষ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বাসসকে বলেন, স্নাতক সম্মান শেষ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব ইতিবাচক এবং সেশন জট বন্ধে এটি একটি ভাল সমাধান। সকল বিশ্ববিদ্যালয় যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলতে এ পদ্ধতি গ্রহনে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে, এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রনালয় এবং ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহন করা উচিৎ ছিল।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, কোর্স ও সিলেবাস কমানো মোটেও ঠিক হবে না। এতে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০টি বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শেষ বর্ষের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এ সকল পরীক্ষা গত মার্চ এপ্রিলে হওয়ার কথা ছিল। তাদের শেষ বর্ষের পরীক্ষার সময় চলে আসছে।
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে অন লাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করেছে। তবে, উপস্থিতি কম। তারা এখনো পরীক্ষার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে নি। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘ সেশন জটের ভীতি কাজ করছে।