দেশের অগ্রগতি ও একই সঙ্গে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে নেই : তথ্যমন্ত্রী

517

ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশের অগ্রগতি এবং একই সঙ্গে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে নেই।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের ক্রমবর্ধনমান অগ্রগতিকে থামাতে অতীতে দুর্নীতি-দুঃশাসনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনাকারীরা এখনও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
তিনি আজ দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে ‘শেখ হাসিনার জীবন কথা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন। আগামীকাল শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম এবং গ্রন্থটির রচয়িতা সাংবাদিক শাবান মাহমুদ অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছিল এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু হত্যা সংঘটিত হয়। আজকেও বঙ্গবন্ধুকন্য শেখ হাসিনাকে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, যারা দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ও দেশেরও প্রতিপক্ষ, তারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। সে জন্যই মধ্যপ্রাচ্যে গোপন বৈঠক হয়, ঢাকা শহরেও বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরণের বৈঠক হয়।’
‘জননেত্রী শেখ হাসিনাকে তারা একে একে ১৯ বার হত্যা করার অপচেষ্টা চালিয়েছে, আজকেও নানা ষড়যন্ত্র আছে, এগুলো সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিনের আগের দিন আমাদের প্রত্যাশা, তিনি আরো বহু বছর ধরে আমাদের নেতৃত্ব দিতে থাকুন। তার হাত ধরে দেশ পৌঁছে যাক স্বপ্নের কাঙ্খিত ঠিকানায়।’
‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জীবন একটি সংগ্রামী জীবনের উপাখ্যান’ উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এই সংগ্রাম যে শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর থেকে শুরু হয়েছে তা নয়, তার পুরো জীবনটাই সংগ্রামের। কারণ, শেখ হাসিনার জন্মের সময় থেকে শুরু করে বেশিরভাগ সময়ই তার পিতা বঙ্গবন্ধুুকে জেলখানাতেই থাকতে হয়েছে।
তিনি বলেন, অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। ১৯৮১ সালে ১৭ মে তিনি যেদিন দেশে আসেন, সেদিন অঝোরে বৃষ্টি আর মেঘের প্রচন্ড গর্জন হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আকাশের এই প্রচন্ড গর্জন যেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারিদের প্রতি ধিক্কার দিচ্ছে আর বৃষ্টির অঝোর ধারা যেন ছিল বঙ্গবন্ধুকন্যাকে কাছে পেয়ে প্রকৃতির আনন্দাশ্রু বর্ষণ।’
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেবার এবং আগামী ১৭ মে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪০ বছর পূর্ণ হবে উল্লেখ করে ‘এই ৪০ বছরের পথ চলায় আমরা কে কতটুকু তার সাথে থাকতে পেরেছি জানি না, কিন্তু জননেত্রী ঝড়-বৃষ্টি-আঁধার রাতে সমস্ত ঝঞ্ঝা-সংকট-সংগ্রামে বাঙালি জাতির পাশে থেকেছেন’ বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বারবার মৃত্যু উপত্যকা থেকে ফিরে এসে শেখ হাসিনা কখনো বিচলিত হননি, দ্বিধান্বিত হননি। বরং আরো প্রত্যয়ী হয়ে আরো দীপ্ত পদভারে বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামের কাতার এগিয়ে নিয়েছেন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার হাত ধরে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা পেয়েছে, স্বল্পোন্নত থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। তার হাত ধরে বাংলাদেশ পৃথিবীর সামনে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের এই বদলে যাওয়ার উদাহরণ আজ সর্বজনগৃহীত, বিশ্বসভায় স্বীকৃত।’
তথ্যমন্ত্রী এসময় ‘শেখ হাসিনার জীবন কথা’ গ্রন্থটির প্রশংসা করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুুদকে গ্রন্থটি প্রণয়নের জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে যারা সবিস্তারে জানেন না, যারা শুধু তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই দেখেছেন, কিম্বা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দেখেছেন, তাদের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার আরো অনেক বিষয় জানার ক্ষেত্রে বইটি সহায়ক হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী গ্রন্থকার শাবান মাহমুদের লেখা বইটির বিভিন্ন অধ্যায় বিশ্লেষণ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানবার জন্য এটি একটি অনন্য গ্রন্থ।
বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক তার বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন সংগ্রাম ও নেতৃত্বের নানাদিক তুলে ধরেন ও গ্রন্থকারকে ধন্যবাদ জানান। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম ‘শেখ হাসিনার জীবন কথা’ গ্রন্থটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সহজপাঠ্য এ বইটি তথ্যভান্ডারকে সমৃদ্ধ করবে এবং একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের নানাদিক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
লেখক শাবান মাহমুদ তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে উৎসর্গ করা তার এই গ্রন্থটি প্রকাশের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ছায়াঘর প্রকাশিত শাবান মাহমুদের লেখা ‘শেখ হাসিনার জীবন কথা’ শীর্ষক ৩২০ পৃষ্ঠার বইটিতে ৮টি অধ্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর শৈশব থেকে বর্তমান সময়ের ঘটনা প্রবাহ এবং অনেক দুর্লভ আলোকচিত্র সন্নিবেশিত রয়েছে।