বগুড়ার শাহানগরে হাইব্রিড মরিচের চাষ বাড়ছে

682

বগুড়া, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ (বাসস) : জেলার মরিচের খ্যাতি দেশ জুড়ে। কিন্ত্র দেশী মরিচের উৎপাদন বেশি না হওয়ায় কৃষকরা এখন হাইব্রিড মরিচ চাষে ঝুঁকেছে। লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় মরিচ ও সবজির চারা উৎপাদেন করে বগুড়ার শাহানগরের মানুষ এখন স্বাবলম্বী। বিভিন্ন আমদানী কারক কোম্পানী ভারত থেকে হাইব্রিড বীজ আমদানী করে তুলে দিচ্ছে নার্সরী মালিকদের হাতে। বগুড়ার শাজাহনপুরের শাহ নগর পল্লীতে নার্সারী গুলোতে এ হাইব্রিড মরিচের চারা উৎপাদনে ব্যাপক কর্মযঞ্জ চলছে। মরিচের চারা সংগ্রহ করতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে বগুড়ার শাহানগরে। প্রতি বছরের মত এবারও শাহানগরে দেশে বিভিন্ন স্থান থেকে মরিচের চারা নিতে কৃষক ও ব্যাসায়ীদের এবারও সরব উপস্থিতি ঘটেছে।
শাহানগরে ২০০০ সালে একটি মরিচের চারা উৎপাদনের নার্সারী ছিল । চারা উৎপাদন লাভ জনক ব্যবসা হওয়ায় এখন সেখানে গড়ে উঠেছে ২০০ থেকে ২৫০ নার্সারী । এ সব নার্সরী থেকে প্রায় ৪ কোটি মরিচের চারা উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবারাহ করছে। মরিচের চারা উৎপাদন করে শাহানগরের নার্সারী মালিকরা বছরের কোটি কোটি টাকা আয় করছে। এবার বৃষ্টিতে প্রায় ১ কোটি টাকার চারা নষ্ট হয়ে যাবার পর বগুড়ার শাহানগরের মরিচের চারা উৎপাদনকারীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখন ব্যাস্ত সময় পার করছে।
বগুড়ায় মরিচের বীজতলা গুলোর চারা রক্ষায় নানা রঙের পলিথিনের ছাউনি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। প্রতিবছরের বগুড়ার শাহানগর থেকে বছর দেশের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টি জেলার কৃষক ও ছোট-বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা চারা সংগ্রহর জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। শাহানগর ও আসেপাশের ২০০ মরিচ নার্সারীর মালিকরা ভারতীয় হাইব্রিড মরিচের বীজ জমিতে ফলিয়ে চারা উৎপাদন করে নিজেদের ভাগ্য বদলিয়ে দিয়েছে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন ।
মরিচ ও সবজির চারার উৎপাদনের জন্য জেলার শাজাহানপুরে বেশ কিছু এলাকা জুড়ে চলছে বাপক কর্মযঞ্জ। ২০০০ সালে শাহানগর নার্সারী মালিক সমিতির বর্তমান সভাপতি আমজাদ হোসেন জানালেন প্রথম ভারতে থেকে বিভিন্ন কোম্পানী আমদানীকৃত হাইব্রিড মরিচের চারা দিয়ে মরিচের চারা উৎপান শুরু করেন। লাভজনক ব্যবসা দেখে এলাকার অনেকে এ হাইব্রিড মরিচের চারা উৎপাদনে এগিয়ে আসেন। ছোট-বড় প্রায় ২৫০ টি মরিচের চারা উৎপাদনকারী নার্সরী মালিক মরিচের চারা উৎপাদন করে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছেন। সেই সাথে প্রায় এক হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে নার্সারী গুলোতে। বৃহত্তর রংপুর ও বগুড়ার শ্রমিক নার্সারী পরিচর্য়া করে তারাও তাদেরও ভাগ্য বদলিয়েছে। এবছর শাহানগরে প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে মরিচের বীজ বপন করা হয়েছে। এ ৩০ হেক্টর জমিতে ৩ থেকে ৪ কোটি চারা উৎপাদন হবে। এখন নার্সারী মালিকরা প্রতিটি চারা পাইকারী বিক্রি করছেন ৬০ থেকে ৮০ পয়সায়। দেশের অর্ধেক জেলার পাইকাররা সেই চারা প্রতিটি ১ টাকা করে বিক্রি করছেন। পাইকারী চারা নেয়ার শাহা নগরে এলে তাদের নার্সালী মালিকরা থাকা –খাওয়া ও রাত যাপনের ব্যবস্থা করে থাকেন। তারা রাত যাপন করে চারা নিয়ে যমুনা নদী দিয়ে নৌ পথে খুব ভোরে গন্তব্য স্থলের দিকে রওনা হয়ে যান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন জানান ,এ বছর ব্যাপক বুষ্টিপাত ও বন্যায় চারা ও মরিচের গাছের ব্যাপক ক্ষতি হওয়া দেশ জুড়ে কাঁচা মরিচের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে । ভারত থেকে আমদানী করে কাঁচা মরিচের বাজার নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহানগরের মরিচের চারা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চারা উৎপাদনকারী নার্সারীর মালিদের অনেকে জানান এ বছর বৃষ্টিতে হবে প্রায় ১ কেটি টাকার চারা নষ্ট হয়েগেছে। তিনিআরো জানান এখন যে মরিচের চারা লাগানো হচ্ছে তা থেকে ফলন পেতে ১ মাস সময় লাগবে। এক মাস পর বাজারও স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে।
মরিচের চারা উৎপাদককারী কৃষকরা জানান, বিঘা প্রতি মরিচের চারা ্উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে (বীজ,সার ,মজুরী, পলিথিন,কীটনাশক) প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এক কেজি মরিচের বীজ কিনে থাকেন ৩০ হাজার টাকায় । বিঘাতে ৪ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সব মিলিয়ে ১ মাস বয়স পর্য়ন্ত চারা উৎপাদনের পর তাদের এক তৃতীয়ংশ লাভ থাকে বলে জানান নার্সারী মালিক আব্দুল হামিদ।
তারা আরো জানান,বৃষ্টি হলে চারা দাম কমে যায়। গত বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় তারা ভাল দাম পেয়েছেন। রোববার থেকে বগুড়ায় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিটি মরিচের চারা (এক মাস বয়সের ) ৮০ পয়সা থেকে ৬০ পয়সায় নেমে এসেছে। আবহাওয়া ভালো না থাকলে চারা পচে যাবার আশঙকা থাকে। তাই নার্সারী মালিকরা বৃষ্টি আতংকে ভুগছে।