বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পেছনে জড়িতদের বিচারে কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা

1888

ঢাকা, ২৭ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পেছনে জড়িতদের বিচারে কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।
১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুধবার বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত বিশেষ ভার্চুয়াল ওয়েবিনারে বক্তারা এ দাবি জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচারিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলা বিচারের সময় দেখি, স্বাক্ষীরা বলছে- বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়েছিলো তখন তিনি বলেছেন আমাকে এইখানে হত্যা কর। মানুষ কিন্তু তাঁর জীবন বাঁচানোর জন্য শেষ চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি তা করেননি। বঙ্গমাতা খুনিদের বলেছিলো, আমাকে এখানেই হত্যা করো, আমি কোথাও যাবো না। বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন, একটা দেশকে পরিচালনা করার যে অবকাঠামো দরকার সেটা হচ্ছে একটা সংবিধান। একটা দেশ যখনই উদীয়মান হচ্ছিলো, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচার বন্ধে জঘন্যতম ইন্ডিমিনিটি অধ্যাদেশে জিয়াউর রহমান স্বাক্ষর করেন।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রশ্রয় দেন জিয়াউর রহমান। একইভাবে ২১শে আগস্ট ২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার মদদ দেন খালেদা জিয়া। একভাবে যেমন জাতির পিতার হত্যাকারীদের মদদ দিয়েছেন জিয়া তেমনভাবেই তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার খুনিদের প্রশ্রয় দেন।
তিনি বলেন, যারা সেনাবাহিনীকে ভুল বুঝিয়ে স্বার্থ হাসিল করেছিল তা কমিশন গঠন করে রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু এমপি বলেন, ভুয়া আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধু সহ যারা ১৫ই আগস্ট শহীদ হয়েছিলেন তাদের বিচার বন্ধ করেছিল। এরকম আইন থাকা সত্ত্বেও সাংবিধানিকভাবে বিচার করা সম্ভব ছিল। কেননা এমন আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা সংসদেরও নেই। তাই আইনের চোখে ওই আইনের কোনো মূল্যই ছিল না। এই হত্যাকা-ের পেছনে যারা ছিল তাদের বিচারের দাবি জানান তিনি।
এটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম বলেন, ইতিহাসবিদদের মতে অমর থাকেন তারাই যারা কিছু লিখে যান। ১৫ই আগস্ট আমরা জাতির পিতাকে হারালেও উনি আছেন আমাদের অনুভূতিতে। এই অনুভূতির কারণ হলো বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য যে লেখাগুলো রেখে গেছেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়াচীন এসব পড়লেই অনুভব করা যায়। আর এসবের পিছনে একমাত্র অনুপ্রেরণা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তাঁর অনুপ্রেরণায় তিনি লিখে গেছেন।
এটর্নি জেনারেল বলেন, বঙ্গবন্ধুর বইগুলো আমাদের পড়তে হবে এবং নতুন প্রজন্মকেও পড়াতে হবে। রেডিও-টিভিতে বইগুলোর উপর প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে এবং বিজয়ীদের পুরস্কৃত করতে হবে। এভাবে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে জানতে উদ্বুদ্ধ হবে।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালের পরাজিত শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তিনি আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন অবিলম্বে একটি কমিশন গঠন করার জন্য যাতে করে জিয়া সহ যারা এই হত্যাকা-ের পেছনে জড়িত ছিল তাদের সবার মরণোত্তর বিচার করা যায়। যাতে করে জাতি জানতে পারে এই হত্যাকা-ের পেছনে কারা ছিল।
ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, আজ জাতিসংঘ বঙ্গবন্ধুকে বলছে বিশ্ববন্ধু। বঙ্গবন্ধুর অমরত্ব এখানেই, তিনি বলেছেন- ‘মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি কিন্তু সেটা করে দেখিয়েছেন। আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এটা প্রমাণ করে বাঙালি জাতির প্রতি তাঁর আনুগত্য ছিল, ভালোবাসা, প্রেম সবকিছু ছিলো।
শেখ ফজলে নূর তাপস সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, একুশ বছর আমরা বিচার পাইনি পিতা-মাতা হত্যার। অন্যায়ের বিচার হবে এটাই একজন ভুক্তভোগীর দাবি।
সভায় আরো বক্তৃতা করেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক মো. মাহবুব আলী, সাবেক মন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি, সিনিয়র এডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার, সিনিয়র এডভোকেট বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউর রহমান প্রমুখ।
বক্তারা, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পেছনে জড়িতদের বিচারে কমিশন গঠনের দাবি জানান। এর মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যায় পেছনে কারা জড়িত তারা উন্মোচিত হবেন।