দেশে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে সুস্থতা

524

ঢাকা, ২৩ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৬৯তম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা কমেছে। পাশাপাশি সুস্থতাও বেড়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ১২ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৪৬ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৯৪১ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গতকালও মৃত্যুর একই হার ছিল।
আজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘন্টায় ১০ হাজার ৮০১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ হাজার ৯৭৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ২৯৩ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১১ হাজার ৩৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ২৬৫ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ১৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ কম।
দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪২ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৫২৪ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৫৭১ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিল ২ হাজার ৯৫২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯১ জন।
আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৬০ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি।
বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১০ হাজার ৯৫৯ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১০ হাজার ৫৯৫ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৩৬৪টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৯১টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১০ হাজার ৮০১ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১১ হাজার ৩৫৬ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৫৫৫টি কম পরীক্ষা হয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২৪ জন পুরুষ এবং ১০ জন নারী। এখন পর্যন্ত পুরুষ ৩ হাজার ১০৬ জন; ৭৮ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং নারী মৃত্যুবরণ করেছেন ৮৩৫ জন; ২১ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩১ জন এবং ৩ জন বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেছেন।
মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ ঊর্ধ্ব ২২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর শতকরা হারে দেখা গেছে, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৯ জন, যা দশমিক ৪৮ শতাংশ। ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩৫ জন, যা দশমিক ৮৯ শতাংশ। ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৯৫ জন, যা ২ দশমিক ৪১ শতাংশ। ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২৪৭ জন, যা ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫২৪ জন, যা ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১ হাজার ৯৩ জন, যা ২৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সী মারা গেছেন ১ হাজার ৯২৮ জন; যা ৪৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।
বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪ জন, বরিশাল বিভাগে ১ জন, সিলেট বিভাগে ৪ জন এবং রংপুর বিভাগে ২ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ১ হাজার ৮৯৯ জন; যা ৪৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৭৩ জন; যা ২২ দশমিক ১৫ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে ২৬৭ জন; যা ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। খুলনা বিভাগে ৩১৬ জন; যা ৮ দশমিক ০২ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে ১৫৪ জন; যা ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। সিলেট বিভাগে ১৮৪ জন; যা ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। রংপুর বিভাগে ১৬৫ জন; যা ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৮৩ জন; যা ২ দশমিক ১১ শতাংশ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৫৭৩ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২০ হাজার ৬১৯ জন। ২৪ ঘন্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৫৭৪ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৪৬ হাজার ১২০ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৬৬ হাজার ৭৩৯ জনকে। প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘন্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ১ হাজার ৬২৪ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘন্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ২০৯ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৬ জন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ৮১ হাজার ২৪ জনকে। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫২ হাজার ৬৭৮ জন।
ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৩৭টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ২০৩ জন ও শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ৮৩৪টি। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩০৭টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি রোগী আছে ২১২ জন ও শয্যা খালি আছে ৯৫টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭৮২টি, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২১৩ জন ও শয্যা খালি আছে ৫৬৯টি। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৯ জন ও শয্যা খালি আছে ২০টি। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৪৩৬টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৩২ জন ও শয্যা খালি আছে ৫ হাজার ৬০৪টি এবং আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৯৯টি ও আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১০৪ জন ও শয্যা খালি আছে ৯৫টি । সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ২৫৫টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ২৪৮ জন এবং শয্যা খালি আছে ১১ হাজার ৭টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৪৫টি, রোগী ভর্তি আছে ৩৩৫ জন এবং খালি আছে ২১০টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৫৭৪টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৪১৭টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১৭৬টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে। এছাড়া www.dghs.gov.bd এর CORONA কর্ণারে “করোনা বিষয়ক অভিযোগ প্রেরণ” লিঙ্ক অথবা http:/app.dghs.gov.bd/covid19-complain লিঙ্ক ব্যবহার করে করোনা বিষয়ক যেকোন অভিযোগ পাঠানো যাবে।
গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থতার সংখ্যা, ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৬৭২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭২০ জন, রংপুর বিভাগে ১৩০ জন, খুলনা বিভাগে ১৮৬ জন, বরিশাল বিভাগে ৬১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৫৪ জন, সিলেট বিভাগে ৪৯৭ জন এবং ময়মনসিংহে ১০৪ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৭৬৯টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৫৩২টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইন ১০৬৫৫, এই নম্বরে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ২৫৪টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৫১ হাজার ৫৫৫টি। এ পর্যন্ত হটলাইনে ফোনকল এসেছে ২ কোটি ৯৩ লাখ ১৯ হাজার ৯১০টি।
করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৩৫৩ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ২ লাখ ৩৭ হাজার ৩৭৫ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৩ হাজার ৪৪ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৮ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯৭ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২২ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ লাখ ৫৯ হাজার ৪৩৯ জন এবং এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৬ হাজার ৩৯২ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২২ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ২৮ লাখ ১২ হাজার ৪৯১ এবং এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৯৫ হাজার ১৩২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।