কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজনে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি

617

॥ দীপক মুখার্জী ॥
কলকাতা, ২১ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে আগামী বছর ৪৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজনে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি।
যাদের পরিচালনা ও আয়োজনে প্রতিবছর কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় সেই আয়োজক সংস্থা পাবলিশার্স এন্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক শুধাংসু শেখর দে বলেছেন, এই ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করে কোন কিছু বলা সম্ভব নয়।
গিল্ডের সাধারণ সাধারণ সম্পাদক শুধাংসু শেখর দে বাসস-কে জানান, ‘চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও আমরা কলকাতা আন্তর্জাতিক বই মেলাটি আয়োজনের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি, কেননা এবছর মেলা আয়োজনের অন্য একটি তাৎপর্য রয়েছে। এবারের মেলাটি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর নামে উৎসর্গ করা হবে, পাশাপাশি ‘থিম কান্ট্রি’ হিসেবেও বাংলাদেশকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
গত বছর বই মেলার সমাপ্তি অনুষ্ঠানেই এই সংক্রান্ত ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি, বিশ্বের ১৭টি দেশ এবং ভারতের অধিকাংশ রাজ্যের পুস্তক প্রকাশনা সংস্থার অংশগ্রহণ করার কথাও আনুষ্ঠানে জানানো হয়েছিল, এমনটি বলেছেন শুধাংসু শেখর দে।
বইমেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি ত্রিদিব চট্রোপাধ্যায় জানান, এর মধ্যে তিনি রাজ্য সরকারের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘বই মেলায় প্রতিদিন লক্ষাধিক দর্শকের সমাগম ঘটে, মহামারি করোনার এই সংকটময় মুহূর্তে আগের স্কেলে বইমেলার আনুমতি দেয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই বইমেলা আদৌ হবে কিনা তা নিয়েই সংশয় রয়েছে।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সে রকম তেমন কোন আশ্বাস পাওয়া না গেলেও আয়োজকরা শিগগিরই রাজ্যের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করার জন্য অবেদন জানিয়েছেন উল্লেখ করে শুধাংসু শেখর দে জানান, সভা অনুষ্ঠিত হলে মেলা অনুষ্ঠানের একটি সমাধান সূত্র মিলতে পারে বলে তারা আশা করছেন।
তিনি বলেন, ‘রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোন ইঙ্গিত পাওয়া গেলেই আমরা ‘থিম কান্ট্রি’ বাংলাদেশের সাথে কথা বলবো।’
শুধাংসু শেখর দে জানান, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ৪৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বই মেলার সূচনা হওয়ার কথা। সেই গুরুত্ব বিবেচনায় গিল্ডের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকাশকদের কাছে আমন্ত্রণলিপিও পাঠানো হয়েছে। মূলত: সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতি বছর মেলার মাঠের পরিকাঠামো, স্টল নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। এই সময়ের মধ্যে মেলার বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ হয়। কিন্তু করোনার কারণে গোটা প্রক্রিয়াই থমকে আছে।
শুধাংসু শেখর জানান, ‘সরকারি অনুমতি পাওয়া গেলে আমরা স্বতস্ফুর্তভাবে মেলার আয়োজন করতে পারবো, এই জন্য আমাদের সমস্ত পরিকাঠামো প্রস্তুত রয়েছে।
এ ব্যাপারে আয়োজক সংগঠন পাবলিসার্স এন্ড বুক সেলার্স গিল্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কলকাতা আন্তর্জাাতিক বই মেলার সঙ্গে পুস্তকপ্রেমী ও বাংলার মানুষের আবেগ প্রবলভাবে জড়িয়ে রয়েছে, বই মেলা না হলে ৪৫টি বছরের সেই আবেগ উৎকন্ঠায় পরিণত হবে বলে ধারণা করছেন মেলার আয়োজকরা। তাই, আয়োজকরা দরকার হলে মেলা প্রঙ্গনে ফুডকোটসহ আরও কিছু জায়গা বন্ধ করে স্টলগুলোকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তৈরী করার কথা সরকারকে জানাবেন।
গত বছর সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের বইমেলায় দেশী-বিদেশী মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ছয়শ’ স্টল বসে। মেলায় ২৬ লাখেরও বেশি দর্শক সমাগম হয়েছিল। বই বিক্রি হয়েছিল মোট প্রায় ২৩ কোটি টাকার।