বাংলাদেশে করোনায় গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৩২ জন, সুস্থ ১,০২০

531

ঢাকা, ৮ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৫৪তম দিনে ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ২০ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ৫ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ২৭ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৩৬৫ জন।করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। ৫ আগস্ট থেকে মৃত্যুর একই হার বিদ্যমান রয়েছে।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ২০ জন। গতকালের চেয়ে ৭৪০ জন কম সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৭৬০ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬০৪ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ১৯ শতাংশ কম।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১১ হাজার ৭৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৬১১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ২৪০ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১২ হাজার ৬৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৮৫১ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ২ শতাংশ কম।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ৫৫ হাজার ১১৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪২ শতাংশ।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১১ হাজার ৫২৯ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ২৫৩ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ৭২৪টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৮৪টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১১ হাজার ৭৩৭ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১২ হাজার ৬৯৯ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৯৬২টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ২৫ জন এবং নারী ৭ জন। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৬৫৫ জন পুরুষ; যা শতকরা হারে ৭৮ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং নারী ৭১০ জন; ২১ দশমিক ১০ শতাংশ মারা গেছেন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৩১ জন এবং বাড়িতে ১ জন মারা গেছেন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ২১ থেকে ৩০ বছর ১ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের বয়স এবং শতকরা হার শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৮ জন, যা দশমিক ৫৩ শতাংশ; ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩৩ জন, যা দশমিক ৯৮ শতাংশ; ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮৮ জন, যা ২ দশমিক ৬২ শতাংশ; ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২১৪ জন, যা ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ; ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪৬৬ জন, যা ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ; ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯৬৫ জন, যা ২৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং ৬০ এর অধিক বয়সের রয়েছেন ১ হাজার ৫৮১ জন, যা ৪৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
তিনি জানান, ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৬ জন, চট্টগ্রামে ৪ জন, খুলনায় ৫ জন, রাজশাহীতে ৪ জন, বরিশালে একজন এবং সিলেটে ২ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত বিভাগ অনুযায়ী মারা গেছেন, ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৬১৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৯৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ২০৯ জন, খুলনা বিভাগে ২৫২ জন, বরিশাল বিভাগে ১৩২ জন, সিলেট বিভাগে ১৫৮ জন, রংপুর বিভাগে ১৩২ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭১ জন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ১১২ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৯৩ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩৩৫ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৬ জন। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৯৭ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৯৭ জন। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ২৪৮টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ৪৪ জন এবং শয্যা খালি আছে ১১ হাজার ২০২টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৩৯টি, রোগী ভর্তি আছে ৩০৬ জন এবং খালি আছে ২৩৩টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৫২০টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৩৪৫টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১৬০টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৮৬৪ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৯ হাজার ২৫ জন। আইসোলেশন থেকে ২৪ ঘণ্টায় ৪৯০ জন এবং এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার ১৪ জন ছাড় পেয়েছেন। আইসোলেশনের শতকরা হার ৪১ দশমিক ২১ শতাংশ। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৫৬ হাজার ৩৯ জনকে।
তিনি জানান, প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ১৮৪ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৮৫১ জন এবং এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৩৮০ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৩২ জনকে। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫২ হাজার ৯৪২ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৫১৪টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৫৫ হাজারটি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইন ১০৬৫৫, এই নম্বরে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ৪০৬টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৬৫ হাজার ৯২০টি। এ পর্যন্ত হটলাইনে ফোনকল এসেছে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬২ হাজার ১৪২টি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ১১ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৬ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৮১৮ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৮ লাখ ৮ হাজার ৩৯৬ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭ হাজার ৮৬৩ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ লাখ ২৮ হাজার ৫৮৪ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৯৯৯ জন এবং এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ৭৭১ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৯১ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৮৯ লাখ ২ হাজার ৭৩৫ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ হাজার ৮১৫ জন এবং এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৯ হাজার ৫১১ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
ডা.নাসিমা সুলতানা বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।