করোনার প্রথম সিরিজে শেষ হাসি কে হাসবে, ইংল্যান্ড নাকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ!!

333

ম্যানচেষ্টার, ২৩ জুলাই ২০২০ (বাসস) : করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ ১১৬ দিন স্থগিত থাকার পর গেল ৮ জুলাই সাউদাম্পটনে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। করোনার মধ্যেই সাউদাম্পটনের পর ম্যানচেষ্টারে হয়ে গেল সিরিজের দু’টি টেস্ট। দু’টেস্ট শেষে সিরিজে ১-১ সমতা রয়েছে। প্রথম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে ও দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ড ১১৩ রানে জয় পায়। এখন বাকী সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট। আগামীকাল ম্যানচেষ্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে সিরিজের শেষ টেস্টে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দু’দলের লক্ষ্য সিরিজ জয়। ইংল্যান্ড জিতলে, সিরিজ পুনরুদ্ধার করবে। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতলে ইংল্যান্ডের মাটিতে ৩২ বছর সিরিজ জিততে না পারার বন্ধ্যাত্ব ঘোচাতে পারবে জেসন হোল্ডারের দল। সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায়।
সর্বশেষ ১৯৮৮ সালে ইংল্যান্ড সফরে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইংল্যান্ডকে পাত্তা না দিয়ে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিলো ক্যারিবীয়রা। এরপর ইংল্যান্ডের মাটিতে আটটি টেস্ট সিরিজ খেলে কোনটিতেই জিততে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে আটটির মধ্যে দু’টি ড্র করে ক্যারিবীয়রা। দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জিততে না পারার বন্ধ্যাত্ব ঘোচানোর মিশনে ইংল্যান্ডে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সিরিজের শুরুটা চমৎকারই ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বোলারদের দুর্দান্ত পারফরমেন্সের সাথে ব্যাটসম্যানদের নৈপুন্যে জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করে ক্যারিবীয়রা। এমন জয়ের পর বিশ্ব ক্রিকেটে প্রশংসায় ভেসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তবে সিরিজে ঘুড়ে দাঁড়াতে সময়ক্ষেপন করেনি ইংল্যান্ড। ম্যানচেষ্টারে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দেয় ইংলিশরা। প্রথম টেস্টে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে অধিনায়কত্ব করা বেন স্টোকসের অলরাউন্ড নৈপুন্যে ম্যাচের শেষ দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিধ্বস্ত করে স্বাগতিকরা। দু’ইনিংসে একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ-সেঞ্চুরিতে ব্যাট হাতে ২৫৪ রান ও বল হাতে ৩ উইকেট নেন স্টোকস।
টেস্টের শেষ দিন সকালে ম্যাচ জয়ের জন্য ৩১২ রানের টার্গেট পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ দিনের বাকী সময় ক্রিজে পার করে দিতে পারলেই ম্যাচটি ড্র করতে পারতো ক্যারিবীয়রা। কিন্তু প্রথম ইনিংসের মত দ্বিতীয় ইনিংসেও ক্যারিবিয় ব্যাটসম্যানরা অসহায় আত্মসমর্পন করায় সিরিজে সমতা আনতে বেগ পেতে হয়নি ইংল্যান্ডের।
আর ওল্ড ট্রাফোর্ডের টেস্টের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের কাটগড়ায় তুলেছিলেন ক্যারিবীয় কোচ ফিল সিমন্স। তাই সিরিজ নির্ধারনী টেস্টে, ব্যাটিং লাইন-আপে পরিবর্তনের আভাস দেন সিমন্স।
জন ক্যাম্পবেল ও শাই হোপ প্রথম দু‘টেস্টে পুরোপুরিভাবেই ফ্লপ। নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। তাই ক্যাম্পবেলের পরিবর্তে একাদশে শাইনি মোসলেকে একাদশে নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন সিমন্স। টেস্টের আগে নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে ৪০ ও অপরাজিত ৮৩ রানের দু‘টি ইনিংস খেলেন মোসলে।
আর শাই হোপের পরিবর্তে একাদশে নাম লেখানোর দ্বারপ্রান্তে লেগ-স্পিনার ও ডান-হাতি ব্যাটসম্যান এনক্রমাহ বোনার। মিডল-অর্ডারে পরীক্ষিত ব্যাটসম্যান বোনার। সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং বিভাগে প্রয়োজনীয় সময়ে সার্ভিসও দিতে পারবেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরোয়া আসরে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বোনার।
ক্যাম্পবেল ও হোপের সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের একাদশে আরও একটি পরিবর্তন আসতে পারে। সেটি হলো উইকেটরক্ষক শেন ডাউরিচের পরিবর্তে জসুয়া ডি সিলভাকে খেলানোর পরিকল্পনা করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিজেদের মধ্যে দ্বিতীয় প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে ১৩৩ ও ৫৬ রান করেছিলেন ডি সিলভা।
তৃতীয় টেস্ট ও একাদশ নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন হোল্ডার বলেন, দ্বিতীয় টেস্টে আমরা ভালো করতে পারেনি। তবে আমরা ভালো করার সামর্থ্য রাখি। প্রথম টেস্টে সেটি করে দেখিয়েছি। আশা করি, সিরিজ নির্ধারনী টেস্টে দল জ্বলে উঠবে। সকলেই তাদের কাজটা ভালো জানে। সিরিজ ধরে রাখতে মরিয়া আমরা। তবে কাজটা সহজ হবে না।‘
একাদশ নিয়ে হোল্ডার বলেন, শেষ টেস্টে আমাদের দলে কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়েছে। কারন যেভাবে হোক শেষ ম্যাচে জিততে চাই। দলের পরিকল্পনায় দু‘টি বা তিনটি পরিবর্তন আসতে পারে।‘
এদিকে প্রথম টেস্টে খেলার সুযোগ পাননি অভিজ্ঞ পেসার ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রড। এ নিয়ে গনমাধ্যমের সামনে ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তবে তার ক্ষোভকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট, অলরাউন্ডার স্টোকস ও পেসার জেমস এন্ডারসন।
দীর্ঘ আট বছর পর দেশের মাটিতে কোন টেস্ট থেকে বাদ পড়লেও, একাদশে ফিরতে অপেক্ষা করতে হয়নি ব্রডকে। এক ম্যাচ পরই একাদশে ফিরেন ব্রড। আর ফিরেই দেখিয়েছেন, দলে তার প্রয়োজনীয়তা কত!
ওল্ড ট্রাফোর্ড ৬ উইকেট শিকার করেন ব্র্রড। প্রথম ইনিংসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এক স্পেলে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আসল সর্বনাশটা করেছেই ব্রডই। এটি ম্যাচ স্বীকারও করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ সিমন্স।
দ্বিতীয় ম্যাচে ব্রড খেললেও, বাদ পড়েন এন্ডারসন। তবে তৃতীয় টেস্টে আাবারো পুরনো জুটিকে একত্রে খেলার পরিকল্পনা ইংল্যান্ডের। আগের টেস্টে খেলা ক্রিস ওকস ও স্যাম কারানের পরিবর্তে একাদশে আসবেন এন্ডারসন ও জোফরা আর্চার।
গেল টেস্টে ওল্ড ট্রাফোর্ডের পিচ ছিলো ধীর-গতির। সেই বিবেচনায় একাদশে টিকে যেতে পারেন পেসার মার্ক উড। যদি তা-ই হয়, তবে এন্ডারসন বা ব্রডের মধ্যে একজনকে একাদশে দেখা যাবে।
গেল দুই টেস্ট ইংল্যান্ড একাদশে একমাত্র স্পিনার ছিলেন অফ-স্পিনার ডম বেস। বল হাতে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ব্যাট হাতেও দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন। দু‘ইনিংসে অপরাজিত ৩১ রান করে করেন বেস। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বাঁ-হাতি স্পিনার খেলানোর পরিকল্পনা ইংল্যান্ডে। সেক্ষেত্রে সুযোগ হতে পারে জ্যাক লিচের।
গেল বছরের নভেম্বরে সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্ট খেলেছেন লিচ। দেশের হয়ে ১০ টেস্টে ৩৪ উইকেট শিকার করেছেন লিচ।
একাদশে পরিবর্তন আসলেও, তৃতীয় ম্যাচে জয়ের জন্য মুখিয়ে আছেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট। তিনি বলেন, সিরিজে পিছিয়ে পড়েও আমরা লড়াইয়ে ফিরেছি। এক জয়ে দলের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে,সিরিজ জিততে তৃতীয় ম্যাচে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না ছেলেরা। একাদশে কিছু পরিবর্তনের আসতে পারে। তবে এখনো কোন কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। পিচের অবস্থা দেখেই একাদশ সাজাতে হবে। তবে আমাদের জন্য এখন একাদশ সাজানো কঠিনই। কারন পেস বিভাগে সকলেই ভালো ফর্মে রয়েছে। তারপরও তিনজন পেসার ও একজন স্পিনার নিয়ে আমাদের খেলতে নামতে হবে।‘
এখন পর্যন্ত ১৫৯টি টেস্ট খেলেছে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরমধ্যে ইংল্যান্ড ৫০ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫৮টিতে জয় পায়। ৫১টি টেস্ট ড্র হয়।
ইংল্যান্ড দল : জো রুট (অধিনায়ক), জেমস এন্ডারসন, বেন স্টোকস, জোফরা আর্চার, ডোমিনিক বেস, স্টুয়ার্ট ব্রড, ররি বার্নস, জশ বাটলার, জাক ক্রলি, জো ডেনলি, ওলি পোপ, ডম সিবলি, ক্রিস ওকস ও মার্ক উড।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল : জেসন হোল্ডার (অধিনায়ক), জার্মেইন ব্ল্যাকউড, এনক্রমাহ বোনার, ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট, শামারা ব্রুকস, জন ক্যাম্পবেল, রোস্টন চেইজ, রাকিম কর্নওয়াল, শেন ডওরিচ, চিমার হোল্ডার, শেই হোপ, আলজারি জোসেফ, শানন গ্যাব্রিয়েল, রেমন রিফার ও কেমার রোচ।