বাসস দেশ-৪৬ : চলমান বন্যায় ব্যাপক ফসলহানীর আশঙ্কা নেই

204

বাসস দেশ-৪৬
আমন-ফসল-ক্ষতি
চলমান বন্যায় ব্যাপক ফসলহানীর আশঙ্কা নেই
॥ গোলাম মঈন উদ্দিন ॥
ঢাকা, ২০ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : দেশের শীর্ষস্থানীয় কৃষি-অর্থনীতিবিদ এবং প্ল্যানিং কমিশনের জেনারেল ইকোনোমিকস ডিভিশন (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম বলেছেন, দেশে চলমান বন্যায় প্রধান নদীসমূহের তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সেখানকার কিছু শাক-সবজি নষ্ট হওয়া ছাড়া অবকাঠামো বা খাদ্য শস্যের বড় ধরনের কোন ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
চলমান কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) মহামারির মধ্যেই প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ দেশের অথনীতি ও কৃষির উপর কতটা বিরূপ প্রভাব পড়বে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘যতটা ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, ততটা হবে না।’
বিশ্বব্যাপী মাহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে অত্যন্ত কঠিন করে দিয়েছে।
ড. আলম বলেন, এই সময়ে কৃষকরা বোরো ধান ঘরে তুলে ফেলেছে এবং পাটের বড় অংশও তোলা হয়ে গেছে। এই বন্যায় কিছু শাক-সবজি ও রোপনকৃত আমনের চারার ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে ক্ষেতের জমি তলিয়ে গেছে ও বাড়িঘরে পানি উঠেছে।
ড. আলম বলেন, ‘কিন্তু, আমি শস্যের বড় ধরনের কোন ক্ষতির আশঙ্কা করছি না। বরং আমি আশাবাদি যে, আমরা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেছি। বন্যার পানি নেমে গেলে আমন ধানের জন্য বীজতলা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে।
তবে, তিনি আশঙ্কা করে বলেছেন, কিছু কিছু এলাকায় বন্যায় বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। বাধ ভেঙ্গে বন্যার পানি তীব্র ¯্রােতের সাথে ঢুকে পড়ায় ফসলের পাশাপাশি ওই এলাকাগুলোর অবকাঠামোরও বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
আগামী ১শ’ বছরের জন্য সরকারের উচ্চাভিলাষী ডেল্টা প্ল্যানের প্রধান পরিকল্পনাকারী আলম সকলকে স্মরণে রাখতে বলেছেন যে, বন্যা একটি বার্ষিক দুর্যোগ, যা সাধারণত সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ স্থায়ী হয়।
তিনি বলেন, অধিকাংশ বছরই বন্যার পানি এক থেকে দুই সপ্তাহ স্থায়ী থাকে। এবছর এর ব্যাতিক্রম হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে আর সরকার এটা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।
সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ সচিব পদমর্যাদার এই সিনিয়র প্ল্যানিং কমিশন কর্মকর্তা বলেন, ‘বন্যা দুর্গত জেলাগুলোতে বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় সরকার একটি বড় ধরনের উদ্ধার ও ত্রাণ অভিযান শুরু করেছে।’
ড. আলম বলেন, বন্যা এখন পর্যন্ত দেশের ৬৪টি প্রশাসনিক জেলার মধ্যে মাত্র ১৮টিকে আক্রান্ত করেছে। তাই, এ বছর বড় ধরনের বন্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেই মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ২০১০ সাল থেকে আমাদের ডেল্টা প্ল্যান অনুযায়ী নদীগুলোতে বড় ধরনের খননকাজ বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা রোধ করেছে।
এই অর্থনীতিবিদও বন্যা কতটা মারাত্মক হতে পারে তার অনুমান করতে মূলত আবহাওয়ার পূর্বাভাসের উপরই নির্ভর করেন।
ড. আলম বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে, নদীসমূহ বিশেষ করে পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা একই সাথে তাদের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে প্লাবিত করেনি। এরফলে এ বছর বন্যা মারাত্মক রূপ নেয়নি।’
তিনি আরো বলেন, বড় ধরনের বন্যা এড়াতে ডেল্টা প্ল্যান দেশের প্রধান নদীসমূহে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গভীর খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রধান নদীসমূহের পাশাপাশি সকল বড় ও প্রাকৃতিক খাল খনন করা হবে। এমনকি প্রতিটি পুকুরও নিয়মিত ভাবে পুনঃখনন করা হবে।
ড. আলম বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যায় দেশের প্রায় ২৩ লাখ ৬০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানির স্তর হ্রাস পাচ্ছে। আর গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি অপরিবর্তিত আছে। অপরদিকে মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা সবদিক বিবেচনা করি, তবে দেখতে পাব যে আগামী দিনগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির আর অবনতি ঘটবে না।’
বাসস/জিএম/অনু-কেএটি/২০০০/আরজি