নাসিমের মতো পরীক্ষিত নেতার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়

346

ঢাকা, ১৩ জুন, ২০২০ (বাসস) : দলের ও দেশের যেকোনও প্রয়োজনে এবং দুঃসময়ে লড়াই করা বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো, তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়।
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র, সাবেক মন্ত্রী, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীরা একথা বলেছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নাসিম ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন পরীক্ষিত নেতা। ছিলেন বিশ্বস্ত সহকর্মী। পিতা শহীদ এম মনসুর আলী যেমন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত ছিলেন, তেমনি মোহাম্মদ নাসিমও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ছিলেন। রাজনীতিতে তার ভূমিকা অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।
বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ শনিবার সকাল ১১ টা ১০ মিনিটে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মারা যান মোহাম্মদ নাসিম। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, মোহাম্মদ নাসিম এ দেশের রাজনীতির বিশেষ পরিচিত মুখ। জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন কয়েক দশক ধরে।
তিনি বলেন, মোহাম্মদ নাসিম মানুষের আবেগ বুঝে রাজনীতি করেছেন। যে কারণে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের মানুষ তাকে সব সময় ভালোবেসে বিজয়ী করেছেন। আওয়ামী লীগের কঠিন সময়েও তিনি বিজয়ী হয়েছেন। তাকে হারানোর ব্যথা মানুষ সহজে ভুলতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, মোহাম্মদ নাসিম সংগ্রামী নেতা ছিলেন। তিনি বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। অনেকবার জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন নাসিম।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাকে গ্রেপ্তার করা ও সাজা দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করতে পারেননি। মোহাম্মদ নাসিম কখনো জীবনে নির্বাচনে হারেননি। ১/১১ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীনও নাসিমকে গ্রেপ্তার করে কাশিমপুর কারাগারে রাখে। সেখানে তিনি প্রথম স্ট্রোক করেছিলেন।’
মোহাম্মদ নাসিমকে বড় মাপের নেতা উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রতিটি আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন নাসিম। নাসিমের অভাব পূরণ হওয়ার নয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, নাসিম ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন সৈনিক। তিনি সারাজীবন কষ্ট করেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, জেল খেটেছেন। কিন্তু কখনো আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি ছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা। জনগণের সঙ্গে ছিলো তার আত্মার সম্পর্ক। তার সমস্ত কাজ ছিলো জন কল্যাণকর।
প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মোহাম্মদ নাসিম দীর্ঘজীবন গণমানুষের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সাম্যভিত্তিক প্রগতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তার অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। বিভিন্ন সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় স্বৈরাচার-সামরিক শাসনবিরোধী লড়াইয়ে তার তেজদীপ্ত ভূমিকা আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোহাম্মদ নাসিমকে কিংবদন্তী পুরুষ অভিহিত করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মোহাম্মদ নাসিম দলের রাজনীতির কিংবদন্তী। রাজনীতিতে তার চরিত্র ছিলো সাহসিকতায় ভরপুর। ১/১১ এর সময়ে জুলুমের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যে কারণে তিনি স্ট্রোক করেছিলেন সে সময়। ওই সময়েই তিনি মূলত অসুস্থ হয়ে পড়েন। জেল হত্যার শিকার আমাদের জাতীয় চার নেতার একজন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিমের রাজনীতিতে যে ভূমিকা তা অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সংগ্রামের বাঁকে বাঁকে তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে লড়াই করেছেন। সাম্প্রদায়িকতা ও স্বৈরাচার বিরোধী লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তার পিতা বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্টজন ছিলেন। তার সুযোগ্য সন্তান হিসেবে রাজনীতিতে তিনি যে অবদান রেখেছেন তা অপূরণীয়। মোহাম্মদ নাসিমের মতো নেতাদের মৃত্যু নেই। তারা মরেও মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুসংবাদ আমাদের জন্য চরম আঘাত। তিনি শুধু আওয়ামী লীগ নয়, জাতীয় রাজনীতির বলিষ্ট সাহসী মানুষ ছিলেন। জনবান্ধব ও কর্মীবান্ধব নেতা ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে কোনো আপস করেননি। স্বৈরাচার সরকার, বিএনপি-জামায়াত সরকার, এক-এগারোর সরকার জেলখানায় তাকে আটকে রেখেছিলো। অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গণতন্ত্রের জন্য অকুতোভয় ছিলেন তিনি।