বাসস দেশ-৪৪ : ছয় দফা ২৬ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে যায় : বিশ্লেষকদের অভিমত

404

বাসস দেশ-৪৪
ছয় দফা-ইতিহাসের গতিপথ
ছয় দফা ২৬ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে যায় : বিশ্লেষকদের অভিমত
॥ আনিসুর রহমান ॥
ঢাকা, ৮ জুন, ২০২০ (বাসস) : বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ঘোষণার মাধ্যমে ২৬ বছরে দ্বিতীবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার বৈশ্বিক ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে যায়, যা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পথ সুগম করে। একই স্থান থেকে অন্য এক মহান বাঙালি শেরে বাংলা একে ফজলুল হক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমালোচক ও রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘জনাব হকের কাজ কোনো বিস্ময়কর ঘটনা ছিল না (এবং) এটি তার জন্য কোনো বিপদও ডেকে আনেনি। তবে শেখ মুজিব যা করেছিলেন তা তাঁর জন্য বিপজ্জনক ছিল।’
ছয় দফা দিবসকে সামনে রেখে বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুর রহমানের সাথে আলাপকালে চৌধুরী মন্তব্য করেন যে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি ছিল। যদিও লাহোর শহরটি ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের মতো ১৯৬৬ সালেও ছয় দফা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না।’
তবে, তিনি বলেন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ‘বাঙালির স্বাধীনতা’ অর্জনের এক বিশাল পদক্ষেপ হিসাবে হাজির হয়, আপরদিকে ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবকে ভারতীয় মুসলমানদের জন্য ‘স্বাধীনতার সনদ’ হিসেবে ভাবা হয়।’
চৌধুরী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি প্রস্তাবের পটভূমির মধ্যেও একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য খুঁজে পান।
‘মি. হকের প্রস্তাব তার নিজস্ব প্রস্তাব ছিল না (এবং) তিনি কেবল এটি পড়েছিলেন। ছয় দফার পটভূমি আলাদা ছিল। কারণ বাস্তবে এই প্রস্তাবটি শেখ মুজিবুর রহমানের নিজস্ব প্রস্তাব ছিল।’ চৌধুরী মন্তব্য করেন।
সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের বিশ্লেষক চৌধুরী অবশ্য শেরে বাংলার প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে বলেন, এমনকি পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকেও হকের জনপ্রিয়তা স্বীকার এবং তাকে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনকারী হিসাবে নির্বাচন করতে হয়েছিল।
চৌধুরী বলেন লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করে শেরে বাংলা যা করেছিলেয়েল তা ‘প্রত্যাশিত’ই ছিল এবং অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। তিনি বলেন, শেখ মুজিব নিজেই তখন যুবক মুসলিম লীগার হওয়ার কারণে অবশ্যই এই পদক্ষেপ সমর্থন করতেন।
‘কিন্তু যখন শেখ মুজিব লাহোরে দ্বিতীয় (ঐতিহাসিক) প্রস্তাবটি প্রকাশ করেন, তখন তিনি একটি সাহসী কাজ করেন, একটি বিপজ্জনক পথে পা রাখেন। – এটি খুব, খুব সত্য।’ তিনি মন্তব্য করেন।
চৌধুরী আরো বলেন, ‘তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) দিয়ে কাজটি কেউ করিয়ে নেয়নি। এ নিয়ে প্রশ্নও ওঠে না।’
তিনি মন্তব্য করেন, ‘ছয় দফা উত্থাপন না করলে বঙ্গবন্ধু এত বড় মাপের নেতা হতেন না। তিনি বেশ কয়েকজন নেতার একজন হয়ে থাকতেন।’
‘শেরে বাংলা কম সাহসী ছিলেন না। তবে তার পক্ষে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব হয়নি। এটি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য অপেক্ষা করছিল।’ চৌধুরী বলেন।
আরও একাধিক বিশ্লেষক ঢাকার পরিবর্তে ছয় দফা প্রস্তাব ঘোষণার জন্য বঙ্গবন্ধুর বৈরী মাটিতে তৎকালীন পাকিস্তানের রাজনৈতিক শহর লাহোরকে নির্বাচনের তাৎপর্য তুলে ধরেন। অথচ ঢাকাকে নির্বাচন তাঁর পক্ষে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যজনক ছিল।
রাজনৈতিক ইতিহাসের ভাষ্যকার ড. আবদুল হান্নান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের সামনে তার সাহসিকতা প্রদর্শন করতে চেয়েছিলেন।’
হান্নান বলেন, ছয় দফার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য বৈরী মাটি নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পশ্চিম পাকিস্তানের প্রভাবশালী নেতা খান আবদুল কাইয়ুুম খান বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের অস্তিত্বকে ঝুঁকির মুখে ফেলে ছয় দফা নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে রক্তপাতের হুমকি দিয়েছিলেন।
হান্নান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কাইয়ুুম খানের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। বাঙালির অধিকার সমুন্নত এবং আন্দোলনের গতিও বজায় রাখতে এটির দরকার ছিল।’।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর লাহোর ভাষণের আর্কাইভ রেকর্ডে দেখা যায়, ছয় দফা ব্যাখ্যা করার পর তিনি বলেন, বৈষম্য দূরীকরণের লড়াইয়ে ‘আমি প্রথমে ‘ভুড়িওয়ালা’ খান সাহেবদের ধরব এবং তাদের পেট চিরে ফেলব এবং এরপর সরকারের প্রশাসনের অনিয়ম দূর করব।’
বাসস/এআর/অনুবাদ-এইচএন/২২৪০/এবিএইচ