গত ২৪ ঘন্টায় দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা কমেছে

983

ঢাকা, ৫ জুন, ২০২০ (বাসস) : গত ২৪ ঘন্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা কমেছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৩০ জন মারা গেছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৮১১ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৫ জন কম মারা গেছেন। আগের দিন মারা গিয়েছিলেন ৩৫ জন।
এদিকে, দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ৬০ হাজার ৩৯১ জন। গত ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক ১৪ হাজার ৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৮২৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
গতকালের চেয়ে আজ ৪০৫ জন বেশি আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলো ২ হাজার ৪২৩ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, নমুনা পরীক্ষায় আজ আক্রান্তের হার ২০ দশমিক ৭ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ। বুধবার ছিল ২১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১২ হাজার ৮০৪ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছে ৬৪৩ জন।
শনাক্ত বিবেচনায় আজ সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২০ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আগের দিন সুস্থতার হার ছিল ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বুধবার সুস্থতার হার ছিল ২১ দশমিক ২ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৫টি।আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ১৩ হাজার ৭৮৮টি। গতকালের চেয়ে আজ ৮৫৭টি নমুনা বেশি সংগ্রহ হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৫০টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এ যাবৎকালের সর্বাধিক ১৪ হাজার ৮৮টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১২ হাজার ৬৯৪টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৩৯৪টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারী ৩০ জনের মধ্যে পুরুষ ২৩ জন এবং নারী ৭ জন। এদের মধ্যে ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ২ জন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছে। বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে ঢাকা বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রামে ১২ জন, সিলেট বিভাগে ৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ২ জন, বরিশাল বিভাগে ১ জন, রংপুর বিভাগে ১ জন। এরমধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ১৭ জন, বাড়িতে মারা গেছেন ১৩ জন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৩৬৫ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছে ৬ হাজার ৯৪৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছে ১৭৩ জন এবং এ পর্যন্ত ছাডা পেয়েছে ৩ হাজার ৮৪৭ জন।
দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৭ হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১০৬।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ২৪৫ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারিন্টিনে নেয়া হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩৩ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারিন্টিন থেকে ছাড়া পেয়েছে ২ হাজার ৪৯৫ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার ১১৪ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারিন্টিনে রয়েছে ৫৭ হাজার ৩১৯ জন। দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ৯ হাজার ১৪২টি। গত ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১৩ হাজার ৪শ’টি। এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২২ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৫টি। বর্তমানে ২ লাখ ৯২ হাজার ৬৬৭টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৯০ হাজার ৪০৭টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৯৬ লাখ ৭ হাজার ৫৫৮টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ২৭৪ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। ২৪ ঘন্টায় আরও ৭ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৭১১ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৭ হাজার ১৭৫ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৪ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১২ হাজার ৯৭৭ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ৫৯৭ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছে ৩৩৩ জন এবং এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৬১০ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৪ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৮১ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৬৪ লাখ ১৬ হাজার ৮২৮ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছে ৪ হাজার ৮৪২ জন এবং এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৮২ হাজার ৮৬৭ জন।
আপনার সুস্থতা আপনার হাতে উল্লেখ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।