ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ৬ জুন থেকে ডিএনসিসি এলাকায় চিরুনি অভিযান : মেয়র আতিক

576

ঢাকা, ৩ জুন, ২০২০ (বাসস) : ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে আগামী ৬ জুন থেকে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ডিএনসিসির প্রথম কর্পোরেশন সভায় তিনি আজ এ কথা জানান।
মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে মিরপুর মাজার রোডে ডিএনসিসির ১০ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মেয়র বলেন, ‘ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া যেন গত বছরের মত ভয়াবহ রূপ নিতে না পারে সেইজন্য আমি আগে থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। ১০ মে থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত ৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে। কোথাও জমে থাকা পানি বা এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেলে, সেটি যদি সরকারি প্রতিষ্ঠানও হয়, সেখানে আইন অনুযায়ী অর্থদন্ড বা কারাদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘১৬ মে থেকে পরিচ্ছন্নতা ও মশককর্মী দ্বারা ৫টি ওয়ার্ডে ঈদের আগ পর্যন্ত চিরুনী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আগামী ৬ জুন থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান শুরু করা হবে। অন্তত আগস্ট পর্যন্ত প্রতিমাসে ১০দিন ব্যাপী চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে। নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে বিনামূল্যে ডিএনসিসি এলাকার ৫টি নগর মাতৃসদন ও ২২টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১১ মে থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বেলা ২ টা পর্যন্ত এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে।’
সভার শুরুতেই প্রয়াত সাবেক মেয়র আনিসুল হক, প্যানেল মেয়র ওসমান গণি এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। এরপর মেয়র আতিকুল ইসলাম নবনির্বাচিত সকল ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদের স্বাগত জানান। কাউন্সিলরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা সৌভাগ্যবান যে, মুজিববর্ষে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। এরপর করোনা, ডেঙ্গু, রাজস্ব আদায়, জলাবদ্ধতা ইতাদি প্রসঙ্গে মেয়র বক্তব্য রাখেন।
করোনা মোকাবেলা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, করোনাকালে ডিএনসিসি এক দিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি। ৩১ মে পর্যন্ত ডিএনসিসি ১০টি ওয়াটার বাউজারের সাহায্যে ৮৬ লাখ ১০ হাজার লিটার তরল জীবাণুনাশক ডিএনসিসির প্রায় ১২ কোটি ৯২ লাখ বর্গফুট এলাকায় ছিটানো হয়। এছাড়া ৭টি স্থানে করোনা স্যাম্পল কালেকশান বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ টেস্টিং ল্যাব (পিসিআর মেশিন) স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে সাময়িকভাবে মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেট করোনা হাসপাতাল ও আইসোলেশান সেন্টার নির্মাণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় ডিএনসিসির নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে করোনার চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় ৫ লক্ষাধিক অসহায়, দুঃস্থ পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে ডিএনসিসি।
জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, বর্ষাকালে রাস্তায় যেন পানি না জমে সেই জন্য নগরীর ড্রেন, খাল পরিষ্কার এবং খনন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কালশি খাল খনন করা হয়েছে। আশকোনা এলাকায় সিভিল এভিয়েশনের এডি-৮ খাল খনন শুরু করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বনানী প্রধান সড়ক ও উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে।
মেয়র সকল কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারির উদ্দেশে বলেন, দুর্নীতিবাজ যেই হোক না কেন, তাকে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। দুর্নীতির ব্যাপারে আমাদের ‘জিরো টলারেন্স’।
রাজস্ব আদায় সম্পর্কে মেয়র বলেন, মার্চ থেকে ডিএনসিসির হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় বন্ধ রয়েছে। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তবে এ তিন মাসে যে ১৫ শতাংশ সারচার্জ অথবা জরিমানা হয়েছে তা দিতে হবে না বলে তিনি জানান।
কর্পোরেশন সভায় অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর সাইদুর রহমান, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন, প্রধান প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম এবং প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন।