দেশে গত ২৪ ঘন্টায় রেকর্ড সংখ্যক ৪০ জন মারা গেছেন

785

ঢাকা, ৩১ মে, ২০২০ (বাসস): দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড সংখ্যক ৪০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এ নিয়ে দেশে এই পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৫০ জন।
এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল শনিবার ও ২৪ মে তারিখে। ওইদিন ২৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আজ গতকালের চেয়ে ১২ জন বেশি মারা গেছেন।
গত ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক ১১ হাজার ৮৭৬টি নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৫৪৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটিও এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। বর্তমানে দেশে এ ভাইরাসে শনাক্ত ৪৭ হাজার ১৫৩ জন রোগী রয়েছেন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৭৮১ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ৪০৬ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ৭৮১ জন বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৭৬৪ জন। আজ আক্রান্তের হার ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ১৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। শুক্রবার এই হার ছিল ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২০ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের দিন সুস্থতার হার ছিল ২১ দশমিক ০২ শতাংশ, মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। শুক্রবার সুস্থতার হার ছিল ২১ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর ছিল হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে সর্বাধিক ১২ হাজার ২২৯টি। গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৫২টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১১ হাজার ৮৭৬টি। আগের দিন ৫০টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৯ হাজার ৯৮৭টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৮৮৯টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৯৩০টি।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং ৭ জন নারী। অঞ্চল বিবেচনায় ঢাকা বিভাগে ২৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জন, খুলনায় ২ জন এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে ১ জন করে মারা গেছেন।
বয়স বিবেচনায়, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৮ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১১ জন এবং ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৩৯১ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৫ হাজার ৭৯৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১২৬ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ১৬ জন। সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। প্রস্তুত করা হচ্ছে আরও ৭০০ শয্যা। ঢাকার ভেতরে রয়েছে ৭ হাজার ২৫০টি। ঢাকা সিটির বাইরে ৬ হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। আইসিইউ রয়েছে ৩৯৯টি, ডায়ালাসিস ইউনিট রয়েছে ১১২টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টাইনসহ কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে ২ হাজার ৯৪৭ জনকে। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৮৫ হাজার ১৭২ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ৪২ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন ২ লাখ ২৪ হাজার ৯৯১ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৬০ হাজার ১৮১ জন। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজার ২টি। গত ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৫ হাজার ৮৫৯টি। বিতরণ হয়েছে মোট ২১ লাখ ১০ হাজার ৩৯৩টি। বর্তমানে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬০৯টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩৩টি এবং এ পর্যন্ত মোট প্রায় ৮৭ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৯টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ২৩৭ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ১১ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬২২ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ২ হাজার ৩৩ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩০ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৪৪৫ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ৫২৫ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩১৩ জন এবং এ পর্যন্ত ৭ হাজার ১৫৭ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩০ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৮ জন। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ লাখ ১৭ হাজার ৩৮৫ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ২৪ ঘন্টায় ৫ হাজার ১৭ জন এবং এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৫ জন।
আপনার সুস্থতা আপনার হাতে উল্লেখ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।