দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় ২৮ জন মারা গেছেন

691

ঢাকা, ৩০ মে, ২০২০ (বাসস) : দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ ২৮ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে করোনায় মোট ৬১০ জন মারা গেছেন । এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল গত ২৪ মে। ওইদিনও ২৮ জন মারা গিয়েছিলেন।
গত ২৪ ঘন্টায় ৯ হাজার ৯৮৭টি নমুনা পরীক্ষায় ১ হাজার ৭৬৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে এ ভাইরাসে শনাক্ত ৪৪ হাজার ৬০৮ জন রোগী রয়েছেন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৩৭৫ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ৩৬০ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ৭৫৯ জন কম আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৫২৩ জন। আজ আক্রান্তের হার ১৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বৃহস্পতিবার এই হার ছিল ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ০২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আগের দিন সুস্থতার হার ছিল ২১ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সুস্থতার হার ছিল ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৫০টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯ হাজার ৯৮৭টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১১ হাজার ৩০১টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৩১৪টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৫৪টি।
তিনি জানান, মৃতদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ এবং ৩ জন নারী। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৮, চট্টগ্রাম বিভাগের ৭, রংপুর বিভাগের ২ এবং সিলেট বিভাগের ১ জন রয়েছেন।এলাকাভেদে ঢাকা শহরে ১০, ঢাকা জেলায় ১, নারায়ণগঞ্জে ১, মুন্সিগঞ্জে ১, গাজীপুরে ১, ফরিদপুরে ২, নরসিংদীতে ২, চট্টগ্রাম জেলায় ১, চট্টগ্রাম শহরে ২, কক্সবাজারে ২, কুমিল্লায় ২, পঞ্চগড়ে ১ , রংপুরে ১ এবং সিলেটে ১ জন মারা গেছেন।
বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৩, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৬, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯ এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৪ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২৬ জন এবং বাসায় মারা গেছেন ২ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৪৬৯ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৫ হাজার ৫২৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৮০ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৮৯০ জন। সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। প্রস্তুত করা হচ্ছে আরও ৭০০ শয্যা। ঢাকার ভেতরে রয়েছে ৭ হাজার ২৫০টি। ঢাকা সিটির বাইরে ৬ হাজার ৩শ’টি শয্যা রয়েছে। আইসিইউ সংখ্যা রয়েছে ৩৯৯টি, ডায়ালাসিস ইউনিট রয়েছে ১১২টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ২২০ জনকে। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৮২ হাজার ২২৫ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ২১৯ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ২১ হাজার ৯৪৯ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬০ হাজার ২৭৬ জন। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৪ লাখ ৭০ হাজার ২টি। বিতরণ হয়েছে ২১ লাখ ৪ হাজার ৫৩৪টি। বর্তমানে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৬৮টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭২৬টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ লাখ ৪০ হাজার ১৫৯টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ২২৬ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ১৫ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৯০১ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৪১১ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৯ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৪৬৯ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮০ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ২১৪ জন এবং এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৪৪ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৯ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৭৪০ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ লাখ ১ হাজার ৩৩৭ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৪ হাজার ৩৫৪ জন এবং এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮৮ জন।
আপনার সুস্থতা আপনার হাতে উল্লেখ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়। তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।