বাজিস-১ : আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সহায়তায় শেরপুরে সাবলম্বী হচ্ছেন দরিদ্র জনগোষ্ঠী

131

বাজিস-১
শেরপুর-সাবলম্বী
আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সহায়তায় শেরপুরে সাবলম্বী হচ্ছেন দরিদ্র জনগোষ্ঠী
॥ সঞ্জীব চন্দ বিল্টু ॥
শেরপুর, ২৪ মে, ২০২০ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ এর মধ্যে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের সহায়তা নিয়ে নিজের বাড়িতে খামার করে গড়ে তুলে সাবলম্বী হয়েছেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার চিথলিয়া পূর্ব গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য মোছা. তাছলিমা বেগম।
তিনি ২০১১ সালে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের চিথলিয়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য হন। সমিতি থেকে প্রথমে ১২ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তার স্বামীর মাধ্যমে মুদীর দোকান দেন। পর্যায়ক্রমে তিনি ৫০ হাজার টাকা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ গ্রহণ করে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে প্রসারিত করে পরিবার নিয়ে স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করছেন।
নালিতাবাড়ী উপজেলার ভূমিহীন কৃষকের স্ত্রী মোছা. জমিলা খাতুন নয়াবিল হাতিপাড়া নাকুগাও সমিতির সদস্য হয়ে একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায় নতুন করে পথ চলার স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্নটি দেখিয়ে দেয় ‘আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প’। জমিলা খাতুনকে অর্থের অভাবে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে খেলাধুলার বয়সেই বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। অভাব অনটনের মধ্যে চলমান জীবনের দু’মুঠো ভাত ছাড়া সচ্ছলতা বলতে আর কিছুই ভোগ করতে পারেননি। বিয়ের পর ৪ সন্তানের জননী হয়ে আয়ের ক্ষেত্রটি আরো সীমিত হয়ে যায়। ফলে অভাব অনটন বৃদ্ধি পায় সংসারে। ২০১৩ সালে নাকুগাঁও সমিতি থেকে মাসিক ২০০ টাকা সঞ্চয় জমা করে এপর্যন্ত সঞ্চয়ের বিপরীতে উৎসাহ অনুদান এবং আর্বতক তহবিল মিলে গঠিত তহবিল হতে প্রথম দফায় ৯ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি গবাদি পশু ক্রয় করেন। ১২ মাস পর সেই গবাদী পশু বিক্রি করে ঋণের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেন। দ্বিতীয়বার ২০ হাজার টাকা, ৩য় বার ৩০ হাজার টাকা, ৪র্থ বার ৪০ হাজার টাকা ও ৫ম ধাপে ৭০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। তার এখন প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা অনায়াসে আয় হচ্ছে। অর্থ উপার্জনের ভিত্তিটা গড়ে তুলতে পারার কারণে পরিবারের যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে তাকে কারো প্রতি মুখাপেক্ষী হতে হয় না। তার কোন সিদ্ধান্ত পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা গুরুত্ব সহকারে দেখে। এটাই জমিলা খাতুনের গর্বের অনুভূতি। জমিলা বাসসকে জানান, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। সংসারে সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছি।
ওই সমিতির অন্যান্য সদস্যরা জমিলা খাতুনকে অনুসরণ করে তারাও তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের মাধ্যমে চেষ্টা করছে। আমার বাড়ি আমার খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের উপকারভোগী নারী সদস্যগণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নারীর স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়ন এখন দৃশ্যমান।
নালিতাবাড়ী উপজেলার আরেক কৃষক হাবিবুর রহমান হবি ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সবজি চাষ শুরু করেন। দুই বছরের মধ্যে তিনি আজ লাখোপতি। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা অর্জনের পাশাপাশি বেড়েছে তাঁর সামাজিক মর্যাদা ও জীবন যাত্রার মান। তিনি প্রথমে ঋণের টাকা দিয়ে লাউ চাষ শুরু করে। সেখান থেকে ছয় মাসের মধ্যে পরিবারের সবজি চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করেন এবং লাভবান হন। তিনি প্রথমে ঋণ পরিশোধ করে লাল শাক, পুই শাক, কলমি শাক, শষা, করলা, চালকুমড়া ও মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদ শুরু করেন। মাত্র ৬ মাসেই তিনি আয় করেন ৭০ হাজার টাকা। ৪র্থ ধাপে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উন্নয়ন ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সফলতার সাথে কলার চাষ করেন। ৫ম ধাপে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আয়বর্ধকমুলক কাজ করছেন। এখন শুধু বিক্রির অপেক্ষা। মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আশা করছি সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর কলা চাষে ১ লাখ টাকার বেশী আয় করতে পারবো।
মৎস্য চাষে সফলতা অর্জন করেছেন জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার বালুঘাটা তারাকান্দি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য মো. আ. হালিম। তিনি প্রথমে ১০ হাজার টাকা ঋণ নেন এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উন্নয়ন ঋণের ২য় ধাপে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মৎস্য চাষ করছেন। মাছ বিক্রির টাকায় তিনি নিয়মিত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করছেন।
আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী আনোয়ার হোসেন জানান, শেরপুর জেলার ৫২টি ইউনিয়নে ১২৪২টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়ে ৭১ শতাংশ সফলতার মাধ্যমে ৮৮৪টি সমিতি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা তাদের জোরালো কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, ‘আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প’ হতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী সমিতি গঠন করে ঋণ নিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের কর্মকর্তারা সম্মিলিতভাবে সমিতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বির করার পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, জঙ্গীবাদ, মাদক, ইভটিজিং প্রতিরোধ ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলগামী করার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
বাসস/সংবাদদাতা/১২২৫/কেজিএ