বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : ডাক্তারসহ সেবাদানকারীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য বীমার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

140

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-ভিডিও কনফারেন্স
ডাক্তারসহ সেবাদানকারীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য বীমার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

গণভবন প্রান্তে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী প্রলয় সৃষ্টি করেছে। এটা এমনভাবে বিস্তার লাভ করছে যে এই ভাইরাসটি মহাবিপর্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী। এটা একটা অঙ্কের মতো বাড়ে।
তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্বে যেভাবে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে, বৃদ্ধি পাবার একটা ট্রেন্ড (প্রবণতা) আছে। তাতে আমাদের সময়টা এসে গেছে, এপ্রিল মাসটা। এই সময়টা আমাদের খুব সাবধানে থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভয় পেলে চলবে না। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। আর রোগ লুকানো যাবে না। কোন সমস্যা মনে করলেই চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে। এতে লজ্জার কিছু নেই। বরং রোগ লুকিয়ে রাখলে আপনি আরো দশজনের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারেন।’
কেউ আক্রান্ত হলে সে অচ্ছুত হয়ে গেছে এমন মানসিকতা পরিহার করার আহ্বান জানান তিনি।
করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে হলে সকলের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে সতর্কবাণী দিয়েছি এই সতর্কতা মেনে চলবেন। তাহলে অনেক জীবন রক্ষা পাবে।’
এ সময় খেটে খাওয়া দিন মজুর শ্রেনীর মানুষের কাজের অভাবে খাদ্যাভাবের আশংকা ব্যক্ত করে তাঁদের দোড়গোড়ায় খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য সকল জেলার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা সংকোচে বা লজ্জায় ত্রাণ চাইতে পারেন না তাঁদের প্রতি আপনারা খেয়াল রাখবেন।’
তিনি এ সময় মুজিবর্ষে সকল গৃহহীনকে একটি টিনের হলেও ঘর করে দেওয়ার তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুণর্ব্যক্ত করে ভিজিডি, ভিজিএফসহ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে যেসব খেটে খাওয়া লোকজন রয়েছেন তাঁদের সাহায্যের জন্য একটি তালিকা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট মহলকে নির্দেশ দেন।
পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণে কোন ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে তিনি সবাইকে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনেরও নির্দেশনা প্রদান করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের দুর্ভোগের সময় ত্রাণ নিয়ে কেউ নয়-ছয় করবেন না। তাহলে কিন্তু রক্ষা পাবেন না ।’
তিনি বলেন, ‘নয়-ছয় করলে আপনাকে ধরা পড়তেই হবে। টাকা-পয়সা কিন্তু লুকানো যায় না। দুঃসময়ে কেউ দুর্নীতি করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, তাকে কিন্তু আমি ছাড়বো না।’
প্রধানমন্ত্রী বাজারে পণ্য সরবরাহ সঠিক রাখার এবং দ্রব্যমূল্য মানুষের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতেও সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি তাঁর নির্দেশনা পুণর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘সাপ্লাইটা ঠিক রাখতে হবে। মানে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসটা যেন মানুষ চাহিদামতো পায়। সেই দিকটা একটু খেয়াল রাখতে হবে। ওইটা বন্ধ করলে চলবে না। সরবরাহটা ঠিক রাখতে হবে।’
করোনার এই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনেক দুগ্ধ-খামারি তাদের উৎপাদিত দুধ খুবই অল্প দামে বিক্রি করছেন, অনেকে অল্প দামেও বিক্রি করতে পারছেন না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বাচ্চাদের যে খাবার দেওয়া হচ্ছে সেখানে দুধ যোগ করার পরামর্শ দেন। তাহলে পুষ্টিগুণ নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্যের ন্যয্য মূল্য প্রাপ্তি ও নিশ্চিত হতে পারে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের কোথাও এতটুকু জমি ফেলে না রেখে ফসল উৎপাদন এবং বাড়ির পাশের এক চিলতে জায়গাটিতেও ফল-মূল, সবজি ও তরিতরিকারি, হাঁস-মুরগী, গবাদি পশুর খামার বা ঘরের পাশের জলাটি ফেলে না রেখে সেখানে মৎস খামার গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর সুবিধাটা জনগণকে নিতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, অতীতে ১৭২০ সাল, ১৮২০সাল এবং ১৯২০ সাল যখনই কোন মহামারি এসেছে তার পরেই খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কাজেই দেশের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত খাদ্য অন্য দেশের প্রয়োজনে সরবরাহ করার সক্ষমতা আমাদের অর্জন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আসন্ন শবে বরাতের রাতে ঘরে বসে ইবাদত-বন্দেগি করার আহ্বান জানান এবং বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ ঘরে অবস্থান করেই উদযাপনে সরকারের নির্দেশ সবাইকে মেনে চলতে বলেন।
তিনি বলেন, ‘মসজিদে ভিড় না করে শবেবরাতের নামাজ যেন ঘরে আদায় করা হয়। আল্লাহকে ডাকলে যে কোনো স্থান থেকে ডাকা যায়। শবে বরাতের রাতে সবাই দোয়া করবেন, যেন আমরা করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাই। ’
প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম জেলার সঙ্গে মতবিনিময়কালে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে উপস্থিত চট্টগ্রামের মেয়র আজম নাসিরকে উদ্দেশ্য করে মশার উপদ্রব রোধকল্পে ব্যবস্থা গ্রহণে সারাদেশের সিটি এবং পৌর মেয়রেদর নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ভারত থেকে দেশে অনুপ্রবেশ বন্ধে কড়াকড়ি আরোপে বিজিবিকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘এই সময়ে কেউ দেশে ঢুকতে পারবে না। ’
চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৫টি জেলার প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টা থেকে প্রায় ৩ ঘন্টা মতবিনিময় করেন।
বাসস/এএসিজ-এফএন/১৮৩৮/আরজি