বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (তৃতীয় ও শেষ কিস্তি) : করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

177

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (তৃতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-ছুটি বৃদ্ধি-করোনাভাইরাস
করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই না, বাইরের কেউ আর ওখানে ঢুকুক। যেহেতু একটা কেস (করোনায় আক্রান্ত রোগী) পাওয়া গেছে। আর যেন সংক্রমিত না হয়, এজন্য সেখানে পর্যটকও যেতে পারবে না। সবই বন্ধ রাখতে হবে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে শুরু করে সবকিছু যেন ভালোভাবে সংরক্ষিত হয়, সেটা দেখতে হবে। ’
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়েই আমরা চিন্তিত। কারণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যদি কোনো কিছু হয়ে যায়, তাহলে খুবই ক্ষতি হবে। এ জন্য বাইরের কোনো লোকের দরকার নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা আছে, তারাই সার্ভিস দেবে। ওখানে তো আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সশস্ত্রবাহিনী, সেনাবাহিনী সকলেই তো আছে। তারা তো কাজ করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নিজেদের লোক দিয়েই সব করাব। বাইরের লোক যেন এই সময়ের মধ্যে বেশি কেউ না যায়, সেটা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ালে সঙ্গে সঙ্গে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে যেটা সমস্যা সৃষ্টি করে সেটা হচ্ছে, নানা ধরনের গুজব।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি বলে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি, সেই সুযোগটা পাচ্ছি। ভবিষ্যতে হয়তো আরও কথা বলব। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন অ্যাপসে নানা ধরনের গুজব অনবরত ছড়ানো হয়ে থাকে। নানা ধরনের কথা অনেকে বলে থাকেন। দেশে নয় দেশের বাইরে থেকেও কেউ কেউ বলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এগুলো বলবেন, যদি কেউ মিথ্যা অপপ্রচার করেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা সঙ্গে সঙ্গে নিতে হবে। গুজবে কেউ কান দেবেন না।’
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে অল্প একটু জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেজন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। কারও এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। ঘরের কোণায় হলেও একটা কিছু ফসাল ফলান।
‘তরি-তরকারি চাষ করেন, হাঁস-মুরগির খামার বা মাছের চাষ করেন, বা ছাগল, গরু, ভেড়া- যাই হোক, যে যা পারেন পাল করেন, ’যোগ করেন তিনি।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরপরে কিন্তু আরেকটা ধাক্কা আসবে। সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে। সে কারণে বিরাট একটা অর্থনৈতিক মন্দা আসতে পারে।’
‘সেই মন্দা মোকাবেলায় চিন্তাভাবনা এখন থেকে আমাদের করতে হবে, পরিকল্পনা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো খাদ্য নিরাপত্তা। এক্ষেত্রে আমাদের একটা সুবিধা হল আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে, ’যোগ করেন তিনি।
এ সময় কৃষিমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের খাদ্য উৎপাদন যেন অব্যাহত থাকে। এ বিষয়ে সকলকে নজর রাখতে হবে। খাদ্য উৎপাদনের জন্য যা যা উপকরণ দরকার, তা যেন মানুষের কাছে পৌঁছে, এ বিষয়ে আমাদের কৃষির সাথে যারা সম্পৃক্ত আছেন তারা উদ্যোগ নেবেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা যদি খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারি তাহলে আমাদের দেশের চাহিদা মেটাতে পারব। পাশাপাশি অন্য দেশের প্রয়োজন হলে আমরা সাহায্য করতে পারব। আল্লাহর রহমতে সেইসব ক্ষমতা আমাদের আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা সচেতন হয়েছি বলেই তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও আমাদের অবস্থা খুব খারাপ নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব নির্দেশনা আমরা অনুসরণ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর বড় কর্তব্য মনে করেছি, জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া। সেটিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানসহ সব অনুষ্ঠানে জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়। যেন সবাই নিরাপদে থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘চীনের উহান থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা হলো, তাদের কোয়ারেনটাইনে রাখা হলো। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হলো, পরে অনেকেই চলে এলো। তাদের মধ্যে অনেকে সংক্রমিত। তাদের আলাদা রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলো। তখন মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সরকারি ছুটি ঘোষণা করলাম।’
‘সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, তাদের জীবন যেন স্তব্ধ না হয়, সে জন্য ব্যাংক কিছু সময় খোলা রাখা, কাঁচাবাজার চালু, পণ্য পরিবহন, জরুরি সেবা সবকিছুই সাধারণ মানুষের জন্য সীমিত আকারে চালু রেখেছি’, যোগ করে তিনি বলেন, ‘আইইডিসিআর কাজ করছে। শুধু রাজধানী নয়, বিভাগীয় পর্যায়েও করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি।’
জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জীবন থেমে থাকবে না, চলবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে। তারপরও জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। সেটা করতে গিয়ে মানুষকে কষ্টও দেওয়া যাবে না।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাঠ প্রশাসন কীভাবে কাজ করছে এবং তারা কী কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন- তা সরাসরি জানতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা তরুন জার্মান প্রবাসী ফয়সল শেখ ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে মত বিনিময় করেন।
তিনি বলেন, ‘টেস্টে পজিটিভ আসার পর আইইডিসিআর আমাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখে। তারা বাসায় এসে আমাকে নিয়ে গিয়ে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি রাখে। সেখানে আমি ১০ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকি, আমার পরিবারের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।’
ফয়সল বলেন, ‘কয়েকদিন পর বারবার টেস্ট করার পর যখন আমার টেস্ট রেজাল্ট নেগেটিভ আসে, তখন আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যাই। আল্লাহর রহমতে আমার মাধ্যমে পরিবারের কারও করোনা হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনার নির্দেশনায় দেশে যে করোনা চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, সেজন্য আমি আপনার কাছে অনেক কৃতজ্ঞতা আদায় করছি। দেশের জনগণের কাছে একটাই অনুরোধ, আপনারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানুন। করোনার সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে বাসায় থাকা, ঘরে থাকা। পরিবারকে সময় দিন। যতদিন ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে ঘরে থাকুন, তাহলেই কেবল আমরা করোনা থেকে মুক্ত থাকতে পারব।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬২৫/-শআ