ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও রোগীদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ

703

॥ আমিনুল ইসলাম মির্জা ॥
নয়াদিল্লি, ৩০ মার্চ, ২০২০ (বাসস) : কোভিড-১৯ বিস্তারের কারণে ভারত সরকারের লকডাউন ঘোষণার পরে নয়াদিল্লিতে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে নয়া দিল্লীর বাংলাদেশ মিশন।
চেন্নাই, ব্যাঙ্গালুরু, ভেলোর এবং দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে বাংলাদেশী রোগী এবং দেশের বিভিন্ন স্থানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী লকডাউন ঘোষণার ফলে আটকা পড়ায় মিশন এই উদ্যোগ নিয়েছে।
‘ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান আজ জানান, ‘আমরা বাংলাদেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক আটকেপড়া বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাব। এ লক্ষ্যে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আটকেপড়া মোট ১৬২ জন বাংলাদেশী এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেন, মিশনের কর্মকর্তারা আটকাপড়া বাংলাদেশীদের সব ধরণের সহায়তা প্রদানের লক্ষে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।
তবে, অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে, লকডাউন ঘোষণার পরে কয়েক শ’ বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও রোগী ভারতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে আটকা পড়েছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, মিশনের কর্মকর্তারা আজ কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে আটকেপড়া বাংলাদেশীদের সমস্যার সমাধান করতে একটি বৈঠক করেছেন।
ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোহাম্মদ ইমরানের ডাকা জরুরি বৈঠকে মিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
হাইকমিশন সূত্রগুলো জানায়, ৫২০ জনেরও বেশি বাংলাদেশী রোগী, যারা দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আটকা পড়েছেন তারা মিশনের সঙ্গে হটলাইনে যোগাযোগ করেন।
তারা মিশন কর্মকর্তাদের জানান, তারা খাদ্য ও অর্থাভাবে ভুগছেন এবং বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধও জানান তারা।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে আটকেপড়া বাংলাদেশীদেরকে স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আজ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মিশন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে আটকেপড়াদের প্রেরণের জন্য আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে মিশন থেকে আমরা গুরুত্ব সহকারে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি।’ তবে, তিনি বলেন, একটু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে, যার জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন হতে পারে।
সূত্র জানায়, বিমানের ভাড়া বহন করতে হবে যাত্রীদের। এদিকে, ১৬২ জন যাত্রী নিশ্চিত করেছেন যে তারা ব্যয় বহন করবেন। শুধু তাই নয়, তিনি জানান, ঢাকায় পৌঁছানোর পরে তাদের অবশ্যই আশকোনা হাজী ক্যাম্পে বা হাসপাতালে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে।
জরুরি সভায় অংশ নেয়া এই কর্মকর্তা আরও জানান, ভারতে অবস্থানকালে আটকেপড়া বাংলাদেশীদের খাবার ও আশ্রয় দেয়ার জন্য তারা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে (এমইএ) একটি চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তারা ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে বাংলাদেশীদের চেন্নাই আনতে সহায়তা করার জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানাবেন, যেখান থেকে আটকেপড়া বাংলাদেশীরা যেন ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়া বিমানটিতে উঠতে পারেন।
আর্থিক সঙ্কট সমাধানের বিষয়ে বৈঠকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে দু’টি বাণিজ্যিক ব্যাংককে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মানি ট্রান্সফারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রক্রিয়াটি সহজ করতে বলেছে, যাতে বাংলাদেশ থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা কোনও ঝামেলা ছাড়াই ভারতে তাদের লোকদের কাছে অর্থ প্রেরণ করতে পারে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যারা গত কিছুদিন ধরে ভারতে চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের ক্রেডিট কার্ডের ক্রেডিট সীমা তুলে দিতে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংককে নিদের্শ দিয়েছে।
এর আগে, মিশন দুটি হটলাইন নম্বর খুলছে যাতে ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশীরা মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। মিশনের হটলাইন নম্বরগুলো হলো- +৯১ ৫৮৯৫৫৫২৪৯৪, +৯১ ৯৮৩৩১৫৯৯৩০।