করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এগিয়ে এলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা

275

ঢাকা, ২৫ মার্চ ২০২০ (বাসস) : প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্রিকেটাররা। এক মাসের বেতনের অর্ধেক সরকারী তহবিলে অনুদান দেয়ার সিদ্বান্ত নিয়েছেন তামিম-মুশফিক-মাশরাফিরা।
সর্বমোট ২৭জন খেলোয়াড় তাদের মাসিক বেতনের অর্ধেক অনুদান দিচ্ছেন। এই ২৭ জনের মধ্যে ১৭জন বিসিবি চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়। বাকী ১০ জন সম্প্রতি জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন।
বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের মাসিক বেতন ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মাসিক বেতনের ৫০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা অনুদান দিচ্ছেন তিনি।
ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশের সাবেক ওয়ানডে মুশফিকুর রহিমের মাসিক বেতন ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। মাসিক বেতনের ৫০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা অনুদান দিচ্ছেন তিনি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। নতুন চুক্তিতে না থাকলেও সম্প্রতি জাতীয় দলের হয়ে খেলা ২৭ খেলোয়াড়ের মধ্যে ছিলেন ম্যাশ। পূর্বে চুক্তিতে মাশরাফির মাসিক বেতন ছিলো, ৪ লাখ ৫০ হাজার। নিয়নুযায়ী, সম্প্রতি জাতীয় দলের হয়ে খেলার কারনে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা অনুদান দিবেন ম্যাশ।
এ বিষয়টি জানাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শরানাপন্ন হন তামিম-মুশফিকদের মত জাতীয় দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রা। ফেসবুকের মাধ্যমে তারা অনেকেই বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন ‘পুরো বিশ্ব এখন করোনাভাইরাসের বিপক্ষে লড়াই করছে। দিনে দিনে বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের সংক্রমন আরও বাড়ছে। আমরা ক্রিকেটাররা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের বিপক্ষে সকলকে সচেতন করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়,‘তবে আমরা মনে করি, মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর সাথে আমাদেরও অনেক কিছু করার আছে। বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ১৭জন খেলোয়াড় ও আরও ১০জন খেলোয়াড় যারা সম্প্রতি জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন, সর্বমোট ২৭জন খেলোয়াড় করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে মাসিক বেতনের অর্ধেক দিচ্ছি। কর দেয়ার পর আর্থিক সহায়তার সংখ্যা হবে প্রায় ২৫ লাখ।
করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য এই অর্থ হয়তো খুব বেশি নয়। কিন্তু আমরা যদি নিজেদের অবস্থান থেকে অবদান রাখতে পারি, তবে এই মহামারী ভাইরাসের বিপক্ষে বড় পদক্ষেপই হবে। আমরা যদি দায়িত্ব নিতে পারি এবং অন্যের অবদানের সমালোচনা না করে আন্তরিকভাবে অবদান রাখার চেষ্টা করি, তবে করোনাভাইরাসের বিপক্ষে এই যুদ্ধে আমরা জিততে পারবো। সবাই দয়া করে বাড়িতে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। সবাই ভালো থাকুন ও আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখুন।’
মহামারী করোনাভাইরাসের জন্য সরকার থেকে এখনো কোন তহবিল গঠন করা হয়নি। তাই এই অনুদান কোথায় দেয়া হবে, এ নিয়ে বিসিবির সাথে আলোচনা করেছেন খেলোয়াড়রা, এমনটা নিশ্চিত করেছেন ক্রিকেট অপারেশন্স ম্যানেজার সাব্বির খান।
এদিকে, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) আজ নিশ্চিত করেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে আরও একজনসহ মোট পাঁচ ব্যক্তি মারা গেছেন। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৩৯।
গেল সোমবার, বাংলাদেশ সরকার ১০ দিনের সাধারন ছুটি ঘোষনা করে। যা আগামীকাল থেকে শুরু হয়ে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের বিপক্ষে লড়াই করতেই এ সিদ্বান্ত।
জরুরী পরিসেবা বাদে সকল সরকারী-বেসরকারী অফিস বন্ধ থাকবে।
স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। গ্রাহকদের আর্থিক লেনদেনের সুবিধার্থে ব্যাংকগুলো উন্মুক্ত থাকবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। তবে লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
ইতোমধ্যে, প্রতিটি বিভাগীয় প্রশাসনে সহায়তার জন্য বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং জনগনকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও করোনাভাইরাসের সংক্রমন রুখতে সর্তকতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন।