ড. আশরাফ সিদ্দিকীর ইন্তেকাল

537

ঢাকা, ১৯ মার্চ, ২০২০ (বাসস) : বিশিষ্ট সাহিত্যিক, লোক বিজ্ঞানী ও কবি ড. আশরাফ সিদ্দিকী (৯৩) আজ রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে …রাজিউন)।
বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন যেসব ব্যাক্তিত্ব, আশরাফ সিদ্দিকী তাদের একজন। ৪০এর দশকের শুরুতে প্রতিশ্রুতিশীল কবি হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ। সাহিত্যিক জীবনে তিনি রচনা করেছেন ৫শ’র এর অধিক কবিতা। বাংলার লোকঐতিহ্য নিয়ে করেছেন গভীর গবেষণা। একাধারে তিনি প্রবন্ধকার, লোকসাহিত্যিক, ছোটগল্পলেখক এবং শিশু সাহ্যিত্যিক। তিনি রচনা করেছেন ৭৫টি গ্রন্থ এবং অসংখ্য প্রবন্ধ।
১৯৪৮ সালে দূর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে ‘তালেব মাষ্টার’ কবিতা রচনা করে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে গণ মানুষের কবি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছোট গল্প ‘গলির ধারের ছেলেটি’-লেখক হিসেবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে। এই ছোট গল্প অবলম্বনে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘ডুমুরের ফুল’ চলচ্চিত্রটি জাতীয় পুরস্কার লাভ করে।
বাংলার মৌখিক লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে লিপিবদ্ধ করার জন্য ড. আশরাফ সিদ্দিকী বিশেষভাবে সমাদৃত। তার লেখা- ‘লোকসাহিত্য’, ‘বেঙ্গলী ফোকলোর’, ‘আওয়ার ফোকলোর আওয়ার হেরিটেজ’, ‘ফোকলোরিক বাংলাদেশ’ এবং ‘কিংবদন্তীর বাংলা’ দক্ষিণ এশিয়ার লোক সাহিত্যে গবেষণায় মৌলিক বই হিসেব বিবেচিত হয়। ‘ভোম্বল দাশ: দ্যা আঙ্কল অব লায়ন’ এবং ‘টুনটুনি এন্ড আদার স্টোরিজ’ প্রভৃতি গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে তিনি বাংলার লোকজ গল্পকে বিশ্ব সাহিত্যের ভান্ডরে পৌঁছে দেন। ১৯৫৮ সালে প্রখ্যাত ম্যাকমিলান পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত তার ‘ভোম্বল দাশ’ বইটি ছিল সে বছরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক বিক্রিত শিশুদের বইয়ের তালিকায়। পরবর্তীতে এ বইটি ১১টি ভাষায় অনুবাদিত হয়। তার ৭০ দশকে লেখা ‘রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন’ ও ‘প্যারিস সুন্দরী’ আজও তরুন পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়।
ড. সিদ্দিকী বহু পুরষ্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন। তার মধ্যে ১৯৮৮ সালে সাহিত্যে একুশে পদক, ১৯৬৪ সালে শিশু সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরষ্কার, ১৯৬৬ সালে সাহিত্যে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার, ইউনেস্কো পুরষ্কার, লোক সাহিত্য গ্রন্থের জন্য দাউদ পুরষ্কার অন্যতম।
তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান, প্রেস ইন্সটিটিউটের প্রেসিডেন্ট, নজরুল একাডেমির আজীবন সভাপতি এবং নজরুল ইন্সটিটিউটের সভাপতির দায়িত্বপালন করেন। তিনি ত্রিশালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজশাহী কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ, ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরবর্তীতে তিনি কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক, ডিস্ট্রিকট গ্যাজেটিয়ারের প্রধান সম্পাদকও ছিলেন।
১৯২৭ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলে নাগবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আশরাফ সিদ্দিকী। পড়াশুনা করেন শান্তিনিকেতন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে তিনি আমেরিকার ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বিতীয় এমএ এবং পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।
আশরাফ সিদ্দিকীর মরদেহ বসুন্ধরার এপার্টমেন্ট ৯এ, ৩৭৫/৩৭৬, সড়ক: ১০, ব্লক: সি তে রাখা হয়েছে।