নকলায় ভিক্ষুকদের “আমার বাড়ি আমার খামার” প্রকল্পের সমিতিভূক্ত করে ঋণ বিতরণের ব্যবস্থা

945

শেরপুর, ৮ মার্চ, ২০২০ (বাসস) : জেলার নকলা উপজেলার ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সমিতিভ’ক্ত করে তাদেরকে সাবলম্বী করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ও উপজেলাকে পলিথিন মুক্ত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়ে, পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করছেন। পদক্ষেপ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ৭ মার্চ শনিবার দুপুরের দিকে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য পাঠাকাটা ইউপি কমপ্লেক্সের সামনে আলোচনা সভা ও যাচাই বাছাই করা হয়।
পাঠাকাটা ইউনিয়ন পরিষেদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফয়েজ মিল্লতের সভাপতিত্বে আলোচনা ও যাচাই বাছাই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভিক্ষুক পুনর্বাসন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভিক্ষুক পুনর্বাসন কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. আলমগীর হোসেন, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়ক মো. আতিকুল ইসলাম।
এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে ফিল্ড সুপার ভাইজার মো. দেলোয়ার হোসেন ও সৈকত সরকার, মাঠ সহকারী জোহরা খাতুন, ইউপি সচিব জাহিদ নেওয়াজ, ইউডিসি উদ্যোক্তা সেলিম রেজা, সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মোছা. সালমা খাতুন, মোছা. হালিমা খাতুন ও মোছা. সম্পা বেগম; ইউপি সাধারণ সদস্য মো. মোজাম্মেল হকসহ এলাকার গন্যমান্য, স্থানীয় সাংবাদিক, ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত সকল গ্রাম পুলিশ ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত শতাধিক নারী-পুরুষ ভিক্ষুক ও অসহায় দরিদ্ররা উপস্থিত ছিলেন।
পাঠাকাটা ইউনিয়নের ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান এর কৌশলী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ভিক্ষুকদের “আমার বাড়ি আমার খামার” প্রকল্পের সমিতিভূক্ত করা হয়। এতে সমিতির চাঁদা বাবদ প্রতিটি ভিক্ষুকের অনুকূলে উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ২ হাজার ৪০০ টাকা করে জমা করা হয়। আর “আমার বাড়ি আমার খামার” প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী এমন প্রতিটি সদস্যের অনুকূলে সরকারের তথা প্রকল্পের পক্ষ থেকে আরও ২ হাজার ৪০০ টাকা করে জমা করা হবে। ফলে মেয়াদ শেষে প্রতিটি ভিক্ষুক ৪ হাজার ৮০০ টাকা করে পাওয়ার কথা রয়েছে।
পাঠাকাটা ইউনিয়ন পরিষেদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফয়েজ মিল্লাত জানান, ভিক্ষুক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমানের নির্দেশে ইউনিয়নের ভিক্ষুকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৮১ জনের তালিকা তৈরী করা হয়। এরমধ্য থেকে যাচাই বাছাই করে প্রথম পর্যায়ে ১০ জনকে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪১ জনকে পুনর্বাসনের জন্য চুড়ান্তভাবে বাছাই করা হয়েছে। তাছাড়া পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাবের হাত থেকে পরিবেশ রক্ষা করার পাশাপাশি সুস্থ ও বসে বসে কাজ করতে স্বক্ষম এমন ১৭ ভিক্ষুকদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরীর লক্ষ্যে তাদের মাঝে কাগজের ঠোংগা বানানোর উপকরণ বিতরণ করা হয়।
আমার বাড়ী আমার খামার প্রকল্পের শেরপুর জেলা সমন্বয়ক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন তৃণমূল পর্যায়ের এ প্রকল্পটি পৌছে দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কার্যক্রম জোরদারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান বলেন, ভিক্ষুকদেরকে “আমার বাড়ি আমার খামার” প্রকল্পের সমিতিভূক্ত করার বিশেষ সুবিধা হলো- চাইলে প্রতিটি ভিক্ষুক সদস্য এ প্রকল্প থেকে প্রথম অবস্থায় ১০ হাজার টাকা করে ঋণ নিতে পারবেন। এতে করে যেকোন ভিক্ষুকের সহজেই স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও জানান, ময়মনসিংহ বিভাগকে নিষিদ্ধ পলিথিন মুক্ত করার লক্ষ্যে বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে এবং ভিক্ষুক মুক্ত শেরপুর জেলা করার লক্ষ্যে শেরপুর জেলা প্রশাসকের পরামর্শে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এরমধ্যে পলিথিন শপিং ব্যাগ ও ভিক্ষাবৃত্তি নিরুৎসাহিত করতে ভিক্ষুকদের দ্বারা কাগজের ঠোঙ্গা প্রস্তুত করে বাজারজাত করণের মাধ্যমে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করার কর্মসূচী একটি। এছাড়া নতুন করে একটি কৌশলী পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে, তাহলো- ভিক্ষুকদের “আমার বাড়ি আমার খামার” প্রকল্পের সমিতিভূক্ত করে তাদের মাঝে ঋণ বিতরণের ব্যবস্থা করা।
নিষিদ্ধ পলিথিন বন্ধ ও ভিক্ষাবৃত্তিতে নিরুৎসাহিত করতে ভিক্ষ–ুকদের দ্বারা কাগজের ঠোঙ্গা প্রস্তুত করে বাজারজাত করণের মাধ্যমে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা ও “আমার বাড়ি আমার খামার” প্রকল্পের সমিতিভূক্ত করে তাদের স্বাবলম্বী করার পদক্ষেপ হাতে নেওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমানের প্রতি পরিবেশবাদী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গৃহীত পদক্ষেপ গুলো নি:সন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করছেন সব শ্রেণী পেশার মানুষ।