ঘরের মাঠে বায়ার্নের কাছে বিধ্বস্ত চেলসি

198

লন্ডন, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ (বাসস) : জার্মান মিডফিল্ডার সের্জে জিনাব্রির দুই গোলে স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ১৬’র প্রথম লেগের লড়াইয়ে চেলসিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ।
এর আগে মৌসুমের শুরুতে গ্রুপ পর্বে টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষে বায়ার্নের ৭-২ গোলের উড়ন্ত জয়ে জিনাব্রি চার গোল করেছিলেন। আর্সেনালের সাবেক এই উইঙ্গার ইংল্যান্ডে ফিরেই বায়ার্নকে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন। আর এই পরাজয়ে চেলসি আরো একবার নক আউট পর্বের শুরুতেই বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
আর্সেনালের হয়ে ২৪ বছর বয়সী এই জার্মান মিডফিল্ডারের সময়টা খুব একটা ভাল যায়নি। এমনকি ধারে ওয়েস্ট ব্রমউইচ আলবিয়নে খেলতে গিয়েও নিজেকে প্রমান করতে পারেননি। কিন্তু বায়ার্নে ফিরেই তিনি যেন নিজেকে নতুন ভাবে ফিরে পেয়েছেন। গতকাল চেলসির মাঠে দ্বিতীয়ার্ধে ৫১ ও ৫৪ মিনিটে পরপর দুই গোল করে জিনাব্রি বায়ার্নকে দারুন এক জয় উপহার দিয়েছেন। শেষ আটে খেলা এখন হান্সি ফ্লিকের দলের জন্য সময়ের ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৭৬ মিনিটে পোলিশ তারকা রবার্ট লিওয়ানদোস্কির গোলে বায়ার্নের জয় নিশ্চিত হয়। ৮৩ মিনিটে চেলসি ডিফেন্ডার মার্কোস আলোনসো সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে গেলে বাকি সময়টা ব্লুজদের ১০জন নিয়ে খেলতে হয়েছে।
আগামী ১৮ মার্চ আলিয়াঁজ এরিনাতে ফিরতি লেগে নিজেদের এগিয়ে নিতে হলে অবিশ্বাস্য কিছু করে দেখাতে হবে চেলসিকে। ২০১২ সালে এই মাঠেই জার্মান জায়ান্টদের ফাইনালে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছিল চেলসি।
ম্যাচ শেষে জিনাব্রি বলেছেন, ‘এখানে আমার অনেক বন্ধু আছে। তাদের মধ্যে অনেকেই আজ মাঠে উপস্থিত ছিলেন। তারাই আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। তিন গোল আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের দ্বিতীয় লেগ সম্পর্কে প্রস্তুত থাকতে হবে। এখনো আমরা বিষয়টি গুরুত্বে সাথে নেইনি। গত মৌসুমে লিভারপুল কিভাবে বার্সেলোনাকে পরাজিত করেছিল তা আমরা দেখেছি। আমাদের অবশ্যই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
এ বছরটা বায়ার্নের জন্য খুব একটা ভাল কাটছে না। কিন্তু সাবেক কোচ নিকো কোভাচের বিদায়ের পর তারা ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এর আগে কোন দলই গ্রুপ পর্বের ছয়টি ম্যাচেই জয়ী হয়ে ঐ বছর শিরোপা জিততে পারেনি। কিন্তু পাঁচবারের বিজয়ী বায়ার্ন যদি তাদের এই ফর্ম ধরে রাখতে পারে তবে এই পরিসংখ্যান হয়ত বদলে যেতে পারে।
এদিকে চেলসি বস ফ্রাংক ল্যাম্পার্ড স্বীকার করেছেন তার তরুন দল ইউরোপের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বায়ার্নের দলের বিপক্ষে অবশ্যই ‘আন্ডারডগ’ ছিল। ল্যাম্পার্ড বলেন, ‘আজ আমাদের পারফরমেন্স একেবারে ভাল ছিল না। মাঝে মাঝে সত্যিটা মেনে নিতেই হয়। প্রতিটি বিভাগেই তারা আমাদের থেকে এগিয়ে ছিল। আর এটা অনেকটা নির্ধারিতই ছিল। তারপরেও আমরা তাদের বিপক্ষে একেবারেই কিছু করতে পারিনি, বিষয়টা হতাশার। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ আমাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে।’
ম্যাচের প্রথম মিনিটেই থমাস মুলারের শক্তিশালী শট রুখে দেন চেলসি গোলরক্ষক উইলি কাবালেরো। পুরো প্রথমার্ধ জুড়েই বায়ার্ন একের পর এক আক্রমন চালিয়ে গেলেও সেই তুলনায় চেলসির পক্ষ থেকে তেমন কোন সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। ল্যাম্পার্ড তার মূল একাদশে ৩৩ বছর বয়সী ফ্রেঞ্চ অভিজ্ঞ তারকা অলিভার গিরুদের ওপর আস্থা রেখেছিলেন। নভেম্বরের পর প্রথমবারের মত জিরুদ মূল দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ইন-ফর্ম টামি আব্রাহামের পরিবর্তে গিরুদের দলভূক্তি চেলসিকে প্রথম থেকেই ভুগিয়েছে।
৫১ মিনিটে লিওয়ানদোস্কির পাস থেকে জিনাব্রি লো শটে কাবালেরোকে পরাস্ত করেন। তিন মিনিট পর আবারো পোলিশ তারকার সহায়তায় জিনাব্রি ব্যবধান দ্বিগুন করেন। এরপরেও অবশ্য বায়ার্ন থেমে যায়নি। আলফোনসো ডেভিসের পাস থেকে ৭৬ মিনিটে লিওয়ানদোস্কি দলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করার সাথে সাথে বায়ার্নের বড় জয় নিশ্চিত হয়। এই গোলের মাধ্যমে মৌসুমে ৩৯তম গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন লিওয়ানদোস্কি। একইসাথে বায়ার্নের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ছয়টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচেও তিনি গোল করার কৃতিত্ব দেখালেন। সর্বমোট ১১ গোল করে এখনো এবারের মৌসুমে সর্বাধিক গোলদাতার তালিকায় এগিয়ে রয়েছেন এই পোলিশ স্ট্রাইকার।