এই জয় পাকিস্তানের বিপক্ষে কাজে লাগবে : মোমিনুল

234

ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ (বাসস) : অস্বস্তি নিয়ে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে খেলতে নেমেছিলো স্বাগতিক বাংলাদেশ। তবে স্বস্তি নিয়েই মাঠ ছাড়ে টাইগাররা। ম্যাচের চতুর্থ দিনের চা-বিরতির ঠিক আগে জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ও ১০৬ রানে হারায় বাংলাদেশ। ফলে টানা ছয় ম্যাচ হারের পর অবশেষে জয়ের হাসি হাসলো বাংলাদেশ। যা স্বস্তিই দিয়েছে টাইগারদের। তবে এই জয় আগামী এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে সহায়ক হবে বলে জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল হক।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মোমিনুল বলেন, ‘অবশ্যই, একটা জয় থাকলে তো আমার কাছে মনে হয় পুরো দলই আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়। আমার কাছে মনে হয় পাকিস্তানে এই জয় কাজে দিবে।’
গত নভেম্বরে ভারত সফর দিয়ে টেস্ট দলের অধিনায়ক হন মোমিনুল। জুুয়াড়ির তথ্য গোপন করায় এক বছরের জন্য বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। ফলে ভারত সফর থেকেই দলের নেতৃত্ব পান মোমিনুল। কিন্তু সফরটি সুখকর হয়নি বাংলাদেশের। ভারতের কাছে দু’ম্যাচের সিরিজের দুু’টিতেই ইনিংস ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। এরপর পাকিস্তানের মাটিতেও যাচ্ছেতাইভাবে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। মোমিনুলের নেতৃত্বে তিনটি টেস্টই ইনিংস ব্যবধানে হারে টাইগাররা।
অবশেষে ইনিংস ব্যবধানে হারের পর মোমিনুলের নেতৃত্বে জয়ের মুুখ দেখলো বাংলাদেশ। টানা ছয় টেস্ট হারের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই জয় যেমনটা স্বস্তির। ঠিকই তেমনি অধিনায়ক হিসেবে টানা তিন টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারের পর জয় মোমিনুলের জন্য স্বস্তি-ই। তবে এটিকে স্বস্তি বলতে নারাজ মোমিনুল, ‘আসলে স্বস্তি না। দল যেভাবে কাজ করবে, যেমনটা হওয়া উচিত সেভাবে, মানে খেলোয়াড়রা দল হিসেবে কিভাবে কাজ করবে, কিভাবে খেলবে সেই জিনিসটা আমি সবসময় আসলে দেখতে চাইছিলাম। এটা আমি ফিল করতে চাইছিলাম। আমার কাছে মনে হয় যে, প্রথম ইনিংস থেকে আপনারা হয়তো খেয়াল করেছেন। পেস বোলার থেকে শুরু করে স্পিনাররা এমনকি ব্যাটসম্যানরা পর্যন্ত সেভাবে দলের যা দরকার সেভাবে করেছে। এই কারণে আমার কাছে মনে হয় ফলাফলটি এসেছে।’
প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে ২৬৫ রানে অলআউট করে, ৬ উইকেটে ৫৬০ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। লিড পায় ২৯৫ রানের। এই লিডের পেছনে বড় অবদান ছিলো সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও মোমিনুলের। কারন মুশফিক অপরাজিত ২০৩ রান করেন। মোমিনুল ১৩২ রান করেন। তাই দলের জয়ের অবদান রাখতে পেরে খুশী মোমিনুল, ‘হ্যাঁ, একটু তো অবদান রাখতে পারলে ভালো লাগে। আমার কাছে মনে হয় অধিনায়ক হিসেবে এবং দলের একজন সদস্য হিসেবে সবসময় সবার কাছে এটা কাম্য যদি আপনি কিছু করতে পারেন। আমার মনে হয় আমি দলের জন্য কিছু অবদান রাখতে পেরেছি এবং সেটা করতে পারলে অনেক ভালো লাগে। আমার কাছে মনে হয় ছোট ছোট অবদান রাখাটাও অনেক বেশি কিছু।’
মুশফিক-মোমিনুলের পাশাপাশি বাংলাদেশের জয়ে অবদান ছিলো অফ-স্পিনার নাইমের। ১৫২ রানে ম্যাচে ৯ উইকেট শিকার করেন তিনি। নাইমের ব্যাপারে মোমিনুল বলেন, ‘দেখুন নাইম মাত্র ক্যারিয়ার শুরু করলো। আমি এটা নিয়ে খুব বেশি বলতে চাই না। আমি আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ করবো, আপনারা এই অনুরোধ রাখলে ভালো হবে। নাইম মাত্র ক্যারিয়ার শুরু করেছে, এখনও অনেক বাকি আছে। সে অনেক ভালো বোলিং করেছে মাশাল্লাহ। আশা করি আরো ভালো করবে। এটা নিয়ে আমি খুব বেশি বলতে চাই না, মানে আউটস্ট্যান্ডিং টাইপ কিছু বলতে চাই না। ওর অনেক কিছু করার বাকি আছে। ধীর ধীরে সে উন্নতি করবে, আরো করতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরুতে বুঝা যায় না। আমার কাছে মনে হয় তাকে আরো উন্নতি করতে হবে।’
বিদেশের ভালো করা ও নিজের অধিনায়কত্ব নিয়ে মোমিনুল বলেন, ‘আমি সব সময় যে জিনিসটা চেষ্টা করছি যে দেশেও যেমন টেস্ট জিততে চাই তেমন আমি স্বপ্ন দেখি বিদেশেও ভালো ক্রিকেট খেলবো। সেই হিসেবে চিন্তা করলে আমাকে পেস বোলারদের বোলিং করাতে হবে, তারা বোলিং না করলে শিখবে না। আর এই কারণে হয়তো উইকেটটা সেভাবে তৈরি করা। এটা আসলে চ্যালেঞ্জ না। আমরা তৈরি ছিলাম যে এমন কিছু করতে পারবো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে আমরা জিনিসটা বেশ ভালোভাবে হ্যান্ডেল করতে পেরেছি। আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো যে আমি বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরি নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না। কারণ এটা পুরোপুরি মানসিক ব্যাপার। এটা নিয়ে আমি খুব বেশি কথাও বলবো না। আমি চাই না যেন খারাপভাবে আমার মাথায় এটা ইমপ্যাক্ট করুক।’
বিদেশের কথা চিন্তা করে দেশের মাটিতে পেস বান্ধব উইকেট চান মোমিনুল, ‘আমিও জানি যে জাতীয় লিগ, বিসিএল যা খেলা হয় সেখানে এমন উইকেট করার চেষ্টা করছে বলে মনে হয়। আপনারাও দেখেছেন এর আগে। এখান থেকে যদি জিনিসটা আসে তাহলে জাতীয় দলে ভালো ইমপ্যাক্ট পড়বে। আর আপনি যদি স্পিন উইকেট করেন তাহলে এই জিনিসটার ইমপ্যাক্ট ওভাবেই পড়বে। ওরা যখন দেখবে যে আমরা খেলছি এমন উইকেটে তখন অটোম্যাটিক জিনিসটা পরিবর্তন হবে।
নিরাপত্তার জন্য পাকিস্তানে প্রথম দু’দফার সফরে যাননি মুশফিক। আগামী এপ্রিলে তৃতীয় ও শেষ দফায় পাকিস্তান সফরে একটি করে ওয়ানডে ও টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। ঐ সফরে মুশফিককে দলে চান মোমিনুল, ‘অধিনায়ক হিসেবে আমিতো সবসময় চাই সাকিব ভাই পর্যন্ত আসুক। যদিও তা সম্ভব নয়। অবশ্যই আমি মুশফিক ভাইকে চাই পাকিস্তান সিরিজে। আমার সাথে এ ব্যাপারে মুশফিকের সাথে কথা হয়নি।’