মুশফিক-নাইমের হাত ধরে অবশেষে টেস্ট ম্যাচ জয়ের হাসি বাংলাদেশের

452

ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : মুশফিকুর রহিমের ডাবল-সেঞ্চুরি ও অফ-স্পিনার নাইম হাসানের বোলিং নৈপুন্যে অবশেষে টেস্ট ক্রিকেটে জয়ের হাসি হাসলো বাংলাদেশ। বড় ফরম্যাটে টানা ছয় ম্যাচ হারের পর জয়ের দেখা পেল টাইগাররা। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের একমাত্র টেস্টে আজ বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে জিম্বাবুয়েকে। একমাত্র ইনিংসে মুুশফিক ব্যাট হাতে অপরাজিত ২০৩ রান করেন। ম্যাচে বল হাতে ৯ উইকেট শিকার করেন নাইম।
টেস্ট ক্রিকেটে ১১৯ ম্যাচে ১৪তম জয়ের স্বাদ পেলো বাংলাদেশ। আর দ্বিতীয়বারের মত টেস্টে ক্রিকেটে কোন দলকে ইনিংস ব্যবধানে হারালো বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের নভেম্বরে এই মিরপুুরেই প্রথমবারের মত ইনিংস ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে হারিয়েছিলো টাইগাররা। সে সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের ২৬৫ রানের জবাবে রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ। মুশফিকুরের অনবদ্য ২০৩ রান ও অধিনায়ক মোমিনুল হকের ১৩২ রানের কল্যাণে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫৬০ রান তুলো ইনিংস ঘোষনা করে বাংলাদেশ। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ২৯৫ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। তাই প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে থেকে নিজেদের ইনিংস শুরু করে তৃতীয় দিন শেষে ২ উইকেটে ৯ রান করেছিলো জিম্বাবুয়ে। ইনিংস হার এড়াতে বাকী ৮ উইকেটে আরও ২৮৬ রান করতে হতো সফরকারীদের।
তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে শূন্য রানে জিম্বাবুয়ের ২ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের পথ দেখান স্পিনার নাইম। প্রিন্স মাসভাউরি-ডোনাল্ড তিরিপানো রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে ফিরেন। তাই কেভিন কাসুজা ৮ ও ব্রেন্ডন টেইলর ১ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন।
চতুর্থ দিন সকালে বেশ সর্তক ছিলেন কাসুুজা ও টেইলর। দিনের প্রথম চার ওভারই মেডেন দেন তারা। পঞ্চম ওভারে বাংলাদেশের পেসার আবু জায়েদকে বাউন্ডারি মেরে আজ রানের খাতা খোলেন টেইলর। তবে ষষ্ঠ ওভারে কাসুজা-টেইলরের জুুটি ভেঙ্গে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন বাঁ-স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ৩৪ বলে ১০ রান কাসুজাকে আউট করেন তিনি।
দলীয় ১৫ রানে কাসুুজাকে হারানোর পর দলের রানের চাকা সচল করার চেষ্টা করেন টেইলর ও অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। রান তোলার কাজটা ভালোভাবেই করছিলেন তারা। তবে জুুটিটি জমে যাবার আগেই তাতে ভাঙ্গন ধরান স্পিনার নাইম। ১টি করে চার-ছক্কায় ৪৭ বলে ১৭ রান করা টেইললকে ফেরান নাইম। চতুর্থ উইকেট জুুটিতে ২৯ রান করেন টেইলর ও আরভিন।
টেইলরের সাথে বড় জুটি গড়তে না পারলেও, সিকান্দার রাজাকে নিয়ে সেই আশা কিছুটা হলেও পূরণ করেন আরভিন। কিছুটা মারমুুখী হয়ে খেলে দলের স্কোরকে শতরানের কোটা অতিক্রম করান আরভিন ও রাজা। তবে মধ্যাহ্ন-বিরতির আগে এই জুুটি ভেঙ্গে ব্রেক-থ্রূূ পায় বাংলাদেশ। অধিনায়কের মোমিনুলের থ্রোতে রান আউট হন আরভিন। প্রথম ইনিংসে ১০৭ রান করা আরভিন এবার করেন ৪৩ রান। ৪৯ বল খেলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন আরভিন। এই জুুটি দলকে ৬০ রান দেন।
আরভিনকে হারানোর ক্ষত নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে। তবে বিরতির পর দলের আরেক ভরসা রাজাকেও হারায় জিম্বাবুয়ে। তাইজুলের বলে মুশফিককে ক্যাচ দেন রাজা। ৭১ বলে ৩টি চারে ১টি ছক্কায় ৩৭ রান করেন জিম্বাবুয়ে দলের অন্যতম ভরসার প্রতীক রাজা।
দলীয় ১২১ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে রাজার আউটের পর জিম্বাবুয়ের হার সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু শেষ দিকে লড়াই করার চেষ্টা করেছেন তিমিসেন মারুমা ও উইকেটরক্ষক রেগিস চাকাবা। বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন তারা। তাই দলের স্কোর দেড়শ পেরিয়ে যায় জিম্বাবুয়ের।
এরপর এই জুটিতে বিচ্ছিন্ন করতে পারে বাংলাদেশ। তবে এতে পুরো কৃতিত্ব ফিল্ডার তামিম ইকবালের। তাইজুুলের বলে মিড-অনের উপর দিয়ে চার মারতে শট নিয়েছিলেন চাকাবা। সেটি শুন্যে লাফিয়ে তালুবন্দি করেন তামিম। আর সেখানেই শেষ হয় চাকাবা ও মারুমার লড়াই। চাকাবা ৪০ বলে ১৮ রান করেন। জুুটিতে রান ছিলো ৪৪।
চাকাবার বিদায়ের পর জিম্বাবুয়ের লেজ কাটার দায়িত্ব নেন নাইম। এনডলোভর পর মারুমাকে শিকার করে ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেন নাইম। ৫ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার পাঁঁচ বা ততোধিক উইকেট নিলেন নাইম। ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে ইনিংসে ৬১ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন নাইম।
নাইমের পঞ্চম উইকেটের পর জিম্বাবুয়ের শেষ ব্যাটসম্যানকে প্যাভিয়িনে ফেরত পাঠান তাইজুল। তখন জিম্বাবুুয়ের রান ১৮৯। টিসুমাকে ৩ রানে আউট করেন তাইজুুল।
বাংলাদেশের নাইম ৮২ রানে ৫টি ও তাইজুল ৭৮ রানে ৪টি উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসে ৭০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন নাইম। তবে প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ২০৩ রানের জন্য ম্যাচ সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের মুুশফিকুর রহিম।
আগামী পহেলা মার্চ থেকে সিলেটে শুরু হবে বাংলাদেশ-জিম্বাবুুয়ের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। ৯ মার্চ থেকে ঢাকায় দুই ম্যাচের টি-২০ সিরিজ শুরু করবে দু’দল।
স্কোর কার্ড :
জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস : ২৬৫, ১০৬.৩ ওভার (আরভিন ১০৭, মাসভাউরি ৬৪, নাইম ৪/৭০) :
বাংলাদেশ ইনিংস : ৫৬০/৬ ডি, ১৫৪ ওভার (মুশফিক ২০৩*, মোমিনুল ১৩২, এনডলোভ ২/১৭০) :
জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস : (আগের দিন ৯/২, ৫ ওভার, কাসুজা ৮*, টেইলর ১*, নাইম ২/৪)।
প্রিন্স মাসভাউরি বোল্ড ব নাইম ০
কাসুজা ক মিঠুন ব তাইজুল ১০
ডোনাল্ড ত্রিপানো ক লিটন ব নাইম ০
টেইলর ক তাইজুল ব নাঈম ১৭
আরভিন রান আউট (মোমিনুল) ৪৩
সিকান্দার রাজা ক মুশফিক ব তাইজুল ৩৭
মারুমা ক তামিম ব নাঈম ৪১
চাকাবা ক তামিম ব তাইজুল ১৮
এনডলোভ এলবিডব্লিউ নাঈম ৪
টিসুমা এলবিডব্লিউ তাইজুল ৩
নায়ুচি অপরাজিত ৭
অতিরিক্ত (বা-৯) ৯
মোট (অলআউট, ৫৭.৩ ওভার) ১৮৯
উইকেট পতন : ১/০ (মাসভাউরি), ২/০ (ত্রিপানো), ৩/১৫ (কাসুজা), ৪/৪৪ (টেইলর), ৫/১০৪ (আরভিন), ৬/১২১ (রাজা), ৭/১৬৫ (চাকাবা), ৮/১৭০ (এনডলোভ), ৯/১৮১ (মারুমা), ১০/১৮৯ (টিসুমা)।
বাংলাদেশ বোলিং :
নাইম হাসান : ২৪-৬-৮২-৫,
তাইজুল ইসলাম : ২৪.৩-৭-৭৮-৪,
আবু জায়েদ : ৪-৩-৪-০,
এবাদত : ৫-১-১৬-০।
ফল : বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : এক ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ।