বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) (লিড) : ইংরেজী উচ্চারণে যারা বাংলা বলে তাদের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী

452

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) (লিড)
শেখ হাসিনা-মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট
ইংরেজী উচ্চারণে যারা বাংলা বলে তাদের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার প্রশিক্ষণের জন্য ট্রাস্ট ফান্ড গঠন প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই এর ইন্টারেস্টের টাকা থেকে ভাষা শিক্ষার জন্য ফেলোশিপ চালু করা হবে। কোন কোন ভাষা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শেখানে হবে ইনস্টিটিউট সেই সিদ্ধান্ত নেবে। যারা শিখবে তারা টাকা দিয়ে পড়বে। পাশাপাশি ফেলোশিপ থেকেও কিছু টাকা দেয়া হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব এখন বৈশ্বিক গ্রাম। এখানে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ, ব্যবসা করা, অন্য সাহিত্য ও সংস্কৃতি জানতে অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজন আছে। কিন্তু মাতৃভাষাকে অবহেলা করে নয়।
একুশে ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ার পর ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ বছর মেয়াদের শেষ দিকে তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা এই ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও ২০০১ সালের সরকার পরিবর্তনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে ইনস্টিটিউটের অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হয়।
সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালে যারা ক্ষমতায় এসেছিল (বিএনপি) তারা এই ইনস্টিটিউটের কাজে আর গুরুত্ব দেয়নি। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আমি আবার কাজ শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার জন্য এই কাজটি ফেলে রাখার জন্য বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ। যেহেতু আমি শুরু করেছিলাম তাই শেষটাও আমি করতে পারলাম।’
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মাতৃভাষা আন্দোলনের সূচনা লগ্ন থেকে ৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে ঢাকার রাজপথ সালাম, বরকত, জব্বারসহ শহিদদের বুুকের রক্তে রঞ্জিত করা এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদান পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং বার বার কারা নির্যাতন ভোগের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এটা হলো বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুই বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘১৯৫২ সালে পিকিং শান্তি সম্মেলনে যাওয়ার পর জাতির পিতা সেখানে বাংলা ভাষাতে বক্তব্য রাখেন। একইভাবে জাতিসংঘেও তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন।’
জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে তিনি নিজেও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রতিবছর বাংলায় ভাষণ দিয়ে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জনে কানাডা প্রবাসী বাঙালি রফিক ও সালামের অবদানের কথাও স্মরণ করেন।
তাঁর সরকার জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও তথ্য প্রযুক্তিতে ব্যাপকভাবে বাংলা ভাষার প্রচলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মোবাইল সেটে বাংলা কী-প্যাডের ব্যবহার চালু, ‘ডট বাংলা’ ডোমেইন এবং ৯টি ভাষা শিক্ষার জন্য অ্যাপ চালু করা হয়েছে।’
মোবাইলে বাংলা ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি এবং বাংলায় ওয়েব সাইটের ঠিকানার ব্যবহার দেশে শিক্ষার সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীকে ঘিরে বছরব্যাপী ‘মুজিববষর্’ উদযাপনকালে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করে একে দারিদ্র্যমুক্ত করায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এখানেই থেমে না থেকে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী সেগুনবাগিচাস্থ শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আয়োজিত ছবি ও চিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।
শেখ রেহানা এবং সায়মা ওয়াজেদ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা সেখানে প্রদর্শিত বঙ্গবন্ধুর অনেক ঐতিহাসিক ছবি এবং চিত্র প্রদর্শনী আগ্রহ সহকারে ঘুরে দেখেন।
সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন এবং সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন অয়োজিত ‘লাইটনিং দি ফায়ার অব ফ্রিডম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
শিল্পকলা একাডেমিতে গত ৭ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা আর্ট সামিটের অংশ হিসেবে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সংগঠকরা জানান, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এই প্রদর্শনী ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে।
বাসস/এএসজি-এফএন/২৩৫০/এবিএইচ/শআ