বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (লিড-দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : মাতৃভাষার মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

160

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (লিড-দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-একুশে পদক
মাতৃভাষার মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের ভাষার অধিকার, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের কৃষ্টিকে সমৃদ্ধ করা, চর্চা করা, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদেরই কর্তব্য।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে অর্জন করেছি, তার সুফল যেন আমাদের আগামী প্রজন্ম ভোগ করতে পারে, তারা যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, সেটাই আমরা চাই।’
পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যাঁরা একুশে পদক পেয়েছেন তাঁরা আমাদের গুণীজন। তারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কীর্তিমান। দেশ-জাতি-ভাষায় তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। সেই অবদানের কথা সবসময় আমরা স্মরণ করি।’
একুশে ফেব্রুয়ারির প্রাক্কালে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি এই সংগ্রামে যাঁরা অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম যাতে কেউ মুছতে না পারে। সে লক্ষ্য নিয়েই পাকিস্তানী গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর ‘সিক্রেট ডক্যুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ নামে মোট চৌদ্দ খ-ের বই প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বইটির ইতোমধ্যে চার খ- প্রকাশিত হয়েছে। পঞ্চম খ- প্রকাশ করা হচ্ছে। কারণ, আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস মানুষের জানা দরকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি বিরাট অংশ এখানে পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, নিজের বিরুদ্ধে লেখা ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্ট কখনও ছাপা হয়নি, হয়তো ডিক্ল্যাসিফাইড রিপোর্ট কখনো সখনো প্রকাশ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখেছি একটার পর একটা ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা এদেশে দীর্ঘদিন চলেছে, প্রায় একুশটি বছর। কাজেই আমি চেয়েছি, সত্যটা মানুষের জানা দরকার।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘সিক্রেট ডক্যুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বই দুটি ইতিহাসের অনেক বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়েছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গোয়েন্দা রিপোর্টে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলা হয়- ১৯৫২ সালে জেলে থেকেও তিনি ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। জেলে গিয়ে ছাত্ররা তার সঙ্গে দেখা করতেন। তারা দেখা করতে গিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে গিয়ে কী কথা বলতেন, তা শোনার জন্য বাইরে থেকে অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছু শুনতে পাইনি। দায়িত্বরত পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, ছাত্ররা যেনো জেলে এসে বৈঠক করতে না পারে, কিন্তু পুলিশ তা শোনেনি।’
ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরবচ্ছিন্ন অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৪৮ সাল থেকেই জাতির পিতা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ভাষার দাবিতে আন্দোলন, সংগ্রাম আর ভাষণ দিতে গিয়ে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন জাতির পিতা।’
মাতৃভাষার আন্দোলনে জাতির পিতার অনন্য সাধারণ ভূমিকার উল্লেখ করতে গিয়ে সরকার প্রধান ১৯৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারীর আগে বঙ্গবন্ধু কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি থাকারও স্মৃতি রোমন্থন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে লিখেছেন-‘পরের দিন রাতে এক এক করে অনেকেই আসল। সেখানেই ঠিক হল আগামী ২১-এ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হবে এবং সভা করে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে হবে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কনভেনর করতে হবে।’
একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী কানাডা প্রবাসী বাঙালি সালাম ও রফিকের অবদানের কথাও এসময় স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
রফিক ইতোমধ্যে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মুত্যুবরণ করায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
তিনি এ সময় বিশ্বের হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষাগুলো সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং এনিয়ে গবেষণার জন্য তাঁর সরকারের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রসংগ উল্লেখ করেন।
’৯৬ পরবর্তী সরকারের সময় জাতিসংঘের তৎকালিন মহাসচিব কফি আনানকে নিয়ে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এর নির্মাণ কাজ শুরু করলেও ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারায় পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকার এর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর সকল ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে গবেষণা, সংরক্ষণ ও চর্চার জন্য ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পর পুনরায় উদ্যোগ নিয়ে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেছি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট। যাতে আর কোন মাতৃভাষা হারিয়ে যেতে না পারে।’
তিনি নিজেও জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিয়মিত বাংলায় ভাষণ দিয়ে আসছেন বলেও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বছরব্যাপী মুজিববর্ষ উদযাপন এবং আগামী বছর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালে দেশকে দারিদ্রমুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬৪০/-শআ