ডিজিটাল বাংলাদেশে নারীদের সঙ্গী ‘তথ্য আপা’

2100

ঢাকা, ১৮  ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : তামান্না ইয়াসমিন, বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার স্থানীয় একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। সরকারি লাভের আশায় স্বাস্থ্য সহকারী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেয়ে অনলাইনে আবেদন করতে স্থানীয় বাজারে যান। কিন্তু এদোকান-ওদোকান ঘুরেও লোকজনের অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে চাকরির আবেদন করা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।
পরে তিনি তার সহপাঠীদের কাছে ‘তথ্য আপা’র খোঁজ পান। চলে যান উপজেলায় ‘তথ্য আপা’র কার্যালয়ে। সুযোগ পান বিনামূল্যে অনলাইনে চাকরির আবেদন করার।
বরগুনার বামনা উপজেলা সদরের বাসিন্দা মনি আক্তার। তিনি সন্তানসম্ভবা। দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। কিন্তু কোন ডাক্তারের কাছে যাবেন, কিভাবে যাবেন তা বুঝতে পারছিলেন না। পাশের বাড়ির এক স্কুলপড়–য়া কিশোরী তাকে ‘তথ্য আপা’র সন্ধান দেয়। যেখানে গেলে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। এরপর ‘তথ্য আপা’র পরামর্শে সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নেন তিনি। এখন তিনি সুস্থ রয়েছেন।
শুধু তামান্না কিংবা মনিই নয়, বিভাগীয় শহর থেকে উপজেলা শহরে হাজারো মানুষ প্রতিদিন ‘তথ্য আপা’র কার্যালয় থেকে সেবা নিচ্ছেন। স্থানীয় লোকজন এখান থেকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’র সুফল তথ্য-প্রযুক্তি ছাড়াও নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসার খোঁজ-খবর জানতে পারেন।
সংশিøষ্ট সূত্র জানায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংস্থা এ প্রকল্পটি বা¯Íবায়ন করছে।
গৌরনদী উপজেলায় ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকে ‘তথ্য আপা’রা সমাজের দারিদ্রপীড়িত নারীদের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে তাদের জীবনমান সহজ, সুন্দর ও উন্নত করতে প্রতিদিন গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকাগুলো ঘুরে ঘুরে তথ্য সরবরাহ করে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, ‘তথ্য আপা’রা সম্প্রতি দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪৯০টি উপজেলায় অসহায়, দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত নারীদের তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং তাদের তথ্য-প্রযুক্তিসেবা প্রদান, তথ্যকেন্দ্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ, বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, উপজেলার সরকারি সেবাসমূহের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ, ভিডিও কনফারেন্স, ই-লার্নিং, ই-কমার্স ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এ ছাড়া ল্যাপটপ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় গ্রামবাসীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, ব্যবসা, জেন্ডার এবং কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন তথ্যসেবা প্রদান করছেন তারা।
প্রকল্পের সুবিধাভোগী গৌরনদীর তামান্না বলেন, চাকরির আবেদনের জন্য বাজারে বিভিন্ন দোকানে অনেক সময় মেয়েদের হয়রানির শিকার হতে হয়। ‘তথ্য আপা’র অফিসে আমি সুন্দর সেবা পেয়েছি। এটি নারীদের জন্য একটি আশীর্বাদ।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলা তথ্যসেবা কর্মকর্তা শিল্পী বণিক জানান, সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জেন্ডার, আইনি সহায়তা এবং ব্যবসা বিষয়ক ছয়টি খাতে নারীদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আসছেন তথ্য আপা’রা। এ ছাড়া নারী উদ্যোক্তা তৈরিতেও কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
বরিশাল বিভাগের বামনা উপজেলায় এ প্রকল্পের আওতায় ৪টি ইউনিয়নে তিন হাজার পাঁচ’শ নারীকে বিভিন্ন প্রকার তথ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে।
সেবাগ্রহীতা মনি আক্তার সম্প্রতি এই প্রতিবেদককে বলেন, শুধু নারীদের জন্য নারী কর্মকর্তা দিয়ে পরিচালিত এই ‘তথ্য আপা’ অফিস থেকে বিনামূল্যে আমি কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করার সুযোগ পেয়েছি। গর্ভধারণের পর সেখান থেকে স্বাস্থ্য বিষয়ে তথ্য পাচ্ছি।
বামনা উপজেলা তথ্যসেবা কর্মকর্তা রুবি আরা খাতুন বলেন, সরকার রূপকল্প ২০২১ বা¯Íবায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অনগ্রসর নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এ প্রকল্প বা¯Íবায়ন করছে। এতে নারীরা উপকৃত হচ্ছেন।
বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা সুলতানা বলেন, সরকারের ‘তথ্য আপা’ প্রকল্প সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য বিশ্বায়নের দ্বার উন্মুক্ত করেছে। নারীর ক্ষমতায়নও বাড়ছে।
‘তথ্য আপা’ প্রকল্পটি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংস্থার একটি প্রকল্প। জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ বেগম বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়নে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচবছর মেয়াদি ‘তথ্য আপা’ শীর্ষক প্রকল্পটি দেশের ৪৯০টি উপজেলায় বা¯Íবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি জানান, ‘প্রথম পর্যায়ে ১৩টি উপজেলায় সফলভাবে বা¯Íবায়ন করা হয়। এরপরই নারীর ÿমতায়নের লÿ্যে দেশজুড়ে এ প্রকল্প বা¯Íবায়ন করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে- গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার এবং তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক সেবাপ্রদানের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করা। আশা করি তা সফল হবে।