নাটোর জেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাইলফলক স্পর্শ করেছে

446

নাটোর, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০(বাসস) : নাটোর জেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। এরফলে আলোকিত হচ্ছে জীবন, সমৃদ্ধি লাভ করছে অর্থনীতি। দ্রুত উন্নয়নের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছে বিদ্যুৎ।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এবং নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ অধিভূক্ত জেলার সাতটি উপজেলা পর্যায়ক্রমে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আসে। উপজেলাগুলো হচ্ছে- নাটোর সদর, সিংড়া, বাগাতিপাড়া, নলডাঙ্গা, বড়াইগ্রাম, লালপুর এবং গুরুদাসপুর উপজেলা। দুইটি সমিতিভূক্ত জেলার সাতটি উপজেলার ৫২টি ইউনিয়ন এবং আটটি পৌরসভা এলাকায় বিদ্যুতায়িত মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ সাত হাজার চার কিলোমিটার। এক হাজার ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব লাইনে গ্রাহকের সংখ্যা চার লাখ ৯৪ হাজার ৮৬৩ জন।
শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে এসব এলাকার জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে এসেছে গতিশীলতা। জেলায় আট হাজার ৪১৪টি সেচ পাম্প এবং দুই হাজার ৮৪৯টি শিল্প সংযোগের ফলে অন্তত ৬০ হাজার ৩১৫ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এরফলে খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলায় রূপান্তরিত হওয়াসহ শিল্পায়নের পথ সুগম হয়েছে।
নাটোর শহরের ফুলবাগানে ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম শুরু হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১। নাটোর জেলার নাটোর সদর, সিংড়া, নলডাঙ্গা ও বাগাতিপাড়া উপজেলা এবং রাজশাহী জেলার পুঠিয়া ও বাগমারা উপজেলার ৫২টি ইউনিয়ন এবং সাতটি পৌরসভার এক হাজার ৩২০টি গ্রামের ১৫ লক্ষাধিক বাসিন্দার জীবনধারাকে আলোকিত করে চলেছে এ সমিতি। নিজস্ব বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণের পর বিদ্যুতায়ন, অধিগ্রণনকৃত এবং নবায়নকৃত মোট ছয় হাজার ৫২১ কিলোমিটার বিদ্যুতায়িত লাইনে আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প, সেচ ও রাস্তার বাতি ক্যাটাগরিতে মোট সংযুক্ত গ্রাহকের সংখ্যা চার লক্ষ ৩২ হাজার ৯০০।
অন্যদিকে নাটোরের বনপাড়া থেকে পরিচালিত নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর কার্যক্ষেত্র নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, লালপুর, বাগাতিপাড়া (আংশিক) এবং রাজশাহী জেলার বাঘা ও চারঘাট উপজেলা। ছয়টি উপজেলায় এ পর্যন্ত চার সহ¯্রাধিক কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ করে সাড়ে তিন লক্ষাধিক সংযোগ প্রদান করেছে এ সমিতি।
নাটোর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ ইলিয়াস আলী বিদ্যুতের সুফল সম্পর্কে জানায়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা থাকার ফলে আমরা প্রযুক্তি নির্ভর পড়াশুনার মাধ্যমে খুব সহজেই কাংখিত গন্তব্যে যেতে পারছি।
নাটোর শহরতলীর চৌকিরপাড় এলাকাতে জেলার সর্ববৃহৎ পোল্ট্রি হ্যাচারি গড়ে তুলেছেন জেলার অন্যতম নারী উদ্যোক্তা হোসনে আরা। তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকার ফলেই হ্যাচারিতে বছরে কয়েক লক্ষ বাচ্চা ফুটিয়ে নাটোরসহ দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করতে পারছি।
জেলার অন্যতম সফল উদ্যোক্তা রেকাত আলী কৃষিকাজ ছাড়াও নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ডালসড়ক এলাকাতে চালকল এবং গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। বিদ্যুতের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সব কাজ খুব সহজেই করতে পারছি বলে জানান রেকাত আলী।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক মোঃ সোহরাব হোসেন জানান, ‘মুজিববর্ষ-পল্লী বিদ্যুতের সেবা বর্ষ হিসেবে পালন করছে। এ বছরে সমিতিতে কর্মরত সকলে প্রতি কর্মদিবসে অতিরিক্ত একঘন্টা করে কাজ করছেন এবং গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ ও ‘উঠান বৈঠক’ কর্মসূচী বাস্তবায়নসহ নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
শিল্পায়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ তথা শিল্প ও বাণিজ্যের সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৫০ কিলোওয়াট লোড পর্যন্ত বিনামূল্যে ট্রান্সফরমার সরবরাহ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারী খরচে দুই স্পান পর্যন্ত লাইন নির্মাণ করে সংযোগ প্রদান করছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বাসস’কে বলেন, নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণ করে গ্রামীণ জনপদের অন্ধকার গ্রামগুলো জেগে উঠছে, সুদৃঢ় হচ্ছে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নাটোর সদর-নলডাঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, নাটোর জেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে পেরে আমরা গর্বিত। বিদ্যুতায়নের ফলে শহর ও গ্রামের ব্যবধান ঘুচবে এবং গ্রামগুলো হয়ে উঠবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি-‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ বাস্তবায়নে নাটোর হবে অগ্রণী।