স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আজ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ

590

পচেফস্ট্রুম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ (বাসস) : প্রথমবারের মত অনূর্ধ্ব-১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশের যুবারা। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আজ যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবারের মত শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়তে মরিয়া পুরো আসরে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলা আকবর আলীর দল। গ্রুপ পর্ব থেকে সেমিফাইনাল অবধি ব্যাট-বলে আলো ছড়িয়েছে বাংলাদেশ। নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যের প্রমান দিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতও। শিরোপা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর তারাও। বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে মাঠে নামছে টুর্নামেন্টের দুই অপরাজিত দল বাংলাদেশ ও ভারত। ১৩তম যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি পচেফস্ট্রুমে শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়।
বড়-ছোট বিশ্বকাপের কোন আসরের ফাইনাল খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে এর আগে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য তৃতীয় স্থান লাভ করা। ২০১৬ সালের আসরে ‘এ’ গ্রুপে ৩ ম্যাচের সবক’টিতেই জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশ। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার লিগে খেলতে নামে তারা। সুপার লিগে কোয়ার্টারফাইনালে জিতলেও, সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৩ উইকেটে হেরে শিরোপা জয়ের আশা ভঙ্গ হয় বাংলাদেশের।
তবে ফাইনালে উঠার লক্ষ্য নিয়ে এবারের বিশ্বকাপের মিশন শুরু করে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এমনই ইঙ্গিত ছিলো বাংলাদেশের অধিনায়ক আকবর আলির, ‘আমাদের দলটি বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং, তিন বিভাগেই ভালো অবস্থায় আছি আমরা। আমাদের দলের সবাই খুবই প্রতিভাবান। আমরা যদি সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি, তাহলে আমরা টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত যেতে পারব।’
১৯৯৮ আসরে বাংলাদেশ প্রথমবার যুব বিশ্বকাপে খেলতে নামে । চলমান বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত প্রত্যক আসরেই ভালো শুরুর পরও শেষ আট বা সেমিতে ছিটকে পড়ে তারা। তাই ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মত ছোটদের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জয়-হার ৭০ শতাংশের ঘরে।
যুব বিশ্বকাপ খেলতে গত ৩ জানুয়ারি ঢাকা ছাড়ে বাংলাদেশ দল। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পচেফস্ট্রুমে সাতদিনের ক্যাম্প করে তারা। ক্যাম্প শেষে দু’টি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে নিজেদের ঝালিয়ে নেয় বাংলাদেশ। এরপর ‘সি’ গ্রুপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন করে আকবর-হৃদয়রা। ৯ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে কোয়ার্টারফাইনাল নিশ্চিত করে তারা। বৃষ্টির কারনে গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয় বাংলাদেশের। তাই ৩ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলদেশ।
শেষ আটে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের পাত্তা না দিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে যুবারা। ১০৪ রানের বড় জয় পায় বাংলাদেশ। সেমিতে মাহমুদুল হাসান জয়ের সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয়ে প্রথমবারের মত ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। জয় ১০০ রান করেন।
সেঞ্চুরি করে দলকে ফাইনালে তুলেও সন্তুস্ট হতে পারেননি জয়। সেমির ম্যাচ শেষে জয় বলেন, ‘সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সিরিজে আমি ৯৯ রানে আউট হয়েছিলাম। কিন্তু সেই ভুল এই ম্যাচে করতে চাইনি। তবে ৯৯ রানের সময় নার্ভাস ছিলাম। যখন সেঞ্চুরিটা হলো, তখন ভয় কেটে গেছে। তবে সেঞ্চুরি করেও আমি সন্তুষ্ট নই। কারণ দল চাচ্ছিলো আমি অপরাজিত থাকি। ম্যাচ শেষ করে আসতে পারলে আরও ভালো হতো।’
প্রথমবারের মত ফাইনাল খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এতে চাপ নিতে চান না বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলি। সেমির ম্যাচ শেষে আকবর বলেন, ‘আমরা অন্য ৮-১০টা ম্যাচের মতোই খেলব। আমাদের প্রথম ফাইনাল, এটা ভেবে চাপ নেব না। ভারত খুব ভালো দল। আমাদের নিজেদের খেলাটা খেলতে হবে। তিন বিভাগেই আমাদের সেরাটা দিতে হবে।’
গত আসরে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে চতুর্থবারের মত ছোটদের বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করেছিলো ভারত। শিরোপা ধরে রাখার মিশনে ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ড-শ্রীলংকা ও জাপানকে হারায় তারা।
কোয়ার্টারফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৭৪ রানে হারিয়ে সেমিতে উঠে ভারত। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হয় চিরপ্রতিন্দ্বন্দি পাকিস্তান। ফাইনালের উঠার লড়াইয়ে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে বিধ্বস্ত করে ভারত। বাঁ-হাতি ওপেনার যশবী জয়সওয়াল ১০৫ রানে অনবদ্য ইনিংস খেলে ভারতকে ফাইনালে তুলেন।
দুই সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি করেছেন বাংলাদেশের জয় ও ভারতের জয়সওয়াল। তাই ফাইনালে স্পট লাইটটা থাকবে জয়-জয়সওয়ালের দিকেও।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল : আকবর আলী (অধিনায়ক), তৌহিদ হৃদয় (সহ-অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তানিম, মোহাম্মদ পারভেজ হোসেন ইমন, প্রান্তিক নওরোজ নাবিল, মাহমুদুল হাসান জয়, শাহাদাত হোসেন, শামিম হোসেন, মোহাম্মদ মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি নিপুন, তানজিদ হাসান সাকিব, অভিষেক দাস, শরিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহিন আল, রাকিবুল হাসান ও হাসান মুরাদ।