মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মধুমেলা শুরু হচ্ছে আগামীকাল

317

যশোর, ২২ জানুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মধুমেলা কবির জন্মভিটা যশোরের কেশবপুরের কপোতাক্ষ নদ তীরে অবস্থিত সাগরদাঁড়ী গ্রামে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে।
সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য (যশোর-৬) ইসমত আরা সাদেকের মৃত্যুতে তার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মধুমেলার আজকের উদ্বোধনী দিনের কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। প্রতিবারের মতো সপ্তাহব্যাপি মধুমেলা আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল।
মধু কবি যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ সালের আগামী ২৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। মহাকবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
১৯৭৩ সাল থেকে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভিটা সাগরদাঁড়িতে তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার আয়োজন হয়ে আসছে। এবারও মধু কবির জন্মদিন উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে ‘মধুমেলার’ আয়োজন করা হয়েছে।
মধু কবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূসরাত জাহান টেলিফোনে বাসস’কে বলেন, যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেকের মৃত্যুতে তার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া সপ্তাহব্যাপি মধুমেলার উদ্বোধনী দিনের কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। তবে মেলা আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
নূসরাত জাহান বলেন, মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মধু মেলায় প্রতিদিনই এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার হাজার-হাজার মানুষ সাগরদাঁড়িতে আসেন।
তিনি জানান, মধুমঞ্চের আলোচনা অনুষ্ঠানে বিজ্ঞ আলোচকরা মহাকবির জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করবেন। মধুপ্রেমী অসংখ্য মানুষ এ সাহিত্যরস আহরণ করবেন।
মেলার আয়োজকরা জানান, দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার থেকে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী মধুমেলা অনুষ্ঠিত হবে। মধুমেলা উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, কেশবপুর উপজেলা প্রশাসন ও মধুসূদন একাডেমি সাগরদাঁড়ীতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুল ইসলাম জানান, মেলায় সার্কাস, নাগরদোলা, যাদু প্রদর্শনী, যাত্রাপালাসহ নানা ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।
মেলা উপলক্ষে কপোতাক্ষের দু’পাড়ের মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বরণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মেলা উপলক্ষে গোটা এলাকা সেজেছে সাজ-সাজ রবে। কুঠির শিল্প ও গ্রামীণ পসরা নিয়ে মেলায় বসেছে দু’শতাধিক স্টল।
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ জানান, মেলা চলাকালে আইন-শৃংখলা রক্ষায় পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃংখলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহল দেবে।
মহাকবি মাইকেল মদুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন জমিদার। ১৮৭৩ সালে ২৯ জুন কলকাতায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মাইকেল মদুসূদন দত্তের কালজয়ী রচনাবলীর অন্যতম হলো- মেঘনাদবধ কাব্য, শর্মিষ্ঠা, ক্যাপটিভ লেডী, কৃষ্ণকুমারী, বুড়ো শালিকের ঘাঁড়ে রোঁ, বীরাঙ্গনা। এই মহাকবির জন্মের কারণেই সাগরদাঁড়ী ও কপোতাক্ষ নদ জগৎবিখ্যাত। কালের প্রবাহে কপোতাক্ষ নদের যৌবন বিলীন হলেও মাইকেলের কবিতার কপোতাক্ষ নদ যুগে যুগে বয়ে চলেছে।