নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের মৃত্যুবার্ষিকী কাল

306

ঢাকা, ১৩ জানুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : বাংলা নাটকের শেকড় সন্ধানী নাট্যকার নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ১২তম মৃত্যবার্ষিকী আগামীকাল। তিনি ১৯৪৯ সালে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার সেনেরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতলে মৃত্যুবরণ করেন।
পাশ্চাত্য শিল্পের সব বিভাজনকে বাঙালির সহস্র বছরের নন্দনতত্ত্বের আলোকে অস্বীকার করে এক নবতর শিল্পরীতি প্রবর্তন করেন সেলিম আল দীন, যার নাম দেন ‘দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পতত্ত্ব’। দ্বৈতাদ্বৈতবাদী রীতিতে লেখা তার নাটকগুলোতে নিচুতলার মানুষের সামাজিক নৃতাত্ত্বিক পটে তাদের বহুস্তরিক বাস্তবতাই উঠে আসে।
সেলিম আল দীনের উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন, বাসন, মুনতাসির ফ্যান্টাসি, শকুন্তলা, কীত্তনখোলা, কেরামতমঙ্গল, যৈবতী কন্যার মন, চাকা, হরগজ, প্রাচ্য, হাতহদাই, নিমজ্জন, ধাবমান, স্বর্ণবোয়াল, পুত্র, বনপাংশুল।
তিনি শুধু নাটক রচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন নি, বাংলা ভাষার একমাত্র নাট্যবিষয়ক কোষগ্রন্থ বাংলা নাট্যকোষ সংগ্রহ, সংকলন, প্রণয়ন ও সম্পাদনা করেছেন। তার রচিত হরগজ নাটকটি সুয়েডীয় ভাষায় অনূদিত হয় এবং এ নাটকটি ভারতের রঙ্গকর্মী নাট্যদল হিন্দি ভাষায় মঞ্চায়ন করেছে।
সেলিম আল দীনের প্রথমদিককার নাটকের মধ্যে সর্প বিষয়ক গল্প, জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন, এক্সপ্লোসিভ ও মূল সমস্যা। এগুলোর নাম ঘুরে ফিরে আসে। সেই সঙ্গে প্রাচ্য, কীত্তনখোলা, বাসন, আততায়ী, সয়ফুল মুলক বদিউজ্জামান, কেরামত মঙ্গল, হাত হদাই, যৈবতী কন্যার মন, মুনতাসির ফ্যান্টাসি ও চাকা তাকে ব্যতিক্রমধর্মী নাট্যকার হিসেবে পরিচিত করে তোলে। জীবনের শেষ ভাগে নিমজ্জন নামে মহাকাব্যিক এক উপাখ্যান বেরিয়ে আসে সেলিম আল দীনের কলম থেকে। সেলিম আল দীনের নাটকে বাংলা জনপদের প্রান্তিক মানুষের চিত্র অসামান্য সারল্যে ফুটে উঠেছে।
সেলিম আল দীন যেসব পুরষ্কার পেয়েছিলেন তারমধ্যে- একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, নান্দিকার পুরস্কার(আকাদেমি মঞ্চ কলকাতা), শ্রেষ্ঠ টেলিভিশন নাট্যকার, মুনীর চৌধুরী সম্মাননা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
সেলিম আল দীনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা থিয়েটার ও স্বপ্নদল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠা সেলিম আল দীনের হাত ধরেই। ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম আল দীন ১৯৮১-৮২ সালে নাট্য নির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফকে সাথী করে গড়ে তোলেন গ্রাম থিয়েটার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় মসজিদের কাছে তাকে সমাহিত করা হয়।