কুমিল্লা লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান

1601

॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১৩ জানুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : কুমিল্লা লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান। সরকারিভাবে বিরল প্রজাতির গাছের বীজ সংরক্ষণসহ-গবেষণার জন্য তৈরি করা হয়েছে উদ্ভিদ উদ্যানটি। এ উদ্ভিদ উদ্যানটি এখন গবেষণা-দর্শনার্থীদের বিনোদনের খোরাক হয়ে উঠেছে।
সূত্র মতে, ঢাকার মিরপুর ও চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের পর কুমিল্লার লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান দেশের তৃতীয় বিরল উদ্ভিদ উদ্যান। ২০১৫ সালে কাজ শুরু হয়ে চলতি বছর এটির কাজ শেষ হয়। ১৭ একর আয়তনের লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৭কোটি টাকা। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ, বন্য প্রাণীর আবাস্থল তৈরি, শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি, বিনোদনের ব্যবস্থা ও স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কুমিল্লা নগরীর কোটবাড়ি সালমানপুরে অবস্থিত ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু হয়েছে লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানটি। নির্মাণের উদ্দেশ্য উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা ও প্রকৃতি প্রেমীদের বিনোদনের ব্যবস্থা করা। লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানে ঘুরতে আসা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী বর্না-শারমিন ও পারভেজ জানান, উদ্ভিদ উদ্যানটি দেখে ভালোই লেগেছে। তবে আরো বৃহৎ পরিসরে হলে ভালো হতো। তবে উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণার জন্য আরো বেশী গবেষণাগার এবং বাগানের পরিধি আরো বড় করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন্নেচ্ছা। তিনি আরো বলেন, অবশ্যই গবেষণার পাশাপাশি বুক ভরে সতেজ নি:শ্বাস নিতে এ উদ্ভিদ উদ্যানটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
জানা যায়, লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানের গবেষণাগারে অলোক, অশ্বথ, আগর, কাঠ বাদাম, কাঞ্চন, খাট জারুল, গোলাপ জাম, গুটগুটিয়া, চন্দুল, চালমাগুরা, চাপালিশ, চিকরাশি, ছাতিয়ান, তুন, টগর, ডেফল, ডাকিজাম, তমাল, তেলশুড়, ধুপ, নাগালিঙ্গম, পিতরাশ, বনপেয়ারা, বকুল, বাঁশপাতা, বাসক, বান্দরহলা, বৌদ্ধনারকেল, বৈলাম, মহুয়া, রক্তচন্দন, রাধাচূড়া, লটকন, লোহাকাঠ, সফেদা, সজিনা, সাতকড়া, সিভিট, হরিতকি, হিজলসহ ৭৭ প্রকার বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে উদ্যানে।
লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাফেজ আহমেদ জানান, এখানে ক্যাকটাস হাউজ, অর্কিড হাউজ, ফুলের বাগান, বিরল উদ্ভিদ বাগান,বন্য প্রাণীর জন্য জলাশয়, বিভিন্ন প্রজাতির ঘাসের চাষ করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের বসার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আরসিসি বেঞ্চ ও ব্যাঙের ছাতা সদৃশ বিশ্রামাগার। নিকটবর্তী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কায়সার হামিদ বলেন, লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানে পাহাড়ের মাথায় ইট বিছানো পথে সবুজের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে ঝরে যাবে সব ক্লান্তি। পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনে আর বাড়ি ফিরতে মন চাইবে না। উদ্যানটি সুন্দর পরিবেশে নির্মিত হলেও আয়তনে খুবই ছোট। এটির আয়তন আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুল করিম জানান, কুমিল্লা নগরীর এ উদ্যান নতুন প্রজন্মকে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা নেয়ার সুযোগ করে দেবে। স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে আয়তন বাড়ানোর জন্য আমরা অধিদপ্তরে আবেদন জানিয়েছি। সেখানে ময়নামতি জাদুঘরের মতো ফরেস্ট মিউজিয়াম করারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।