কুমিল্লায় শুরু হয়েছে বোরো আবাদের কার্যক্রম

554

॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১২ জানুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : শৈত্য প্রবাহের ধকল, মূল্য প্রাপ্তির শঙ্কার মধ্যেও কুমিল্লায় থেমে নেই চাষবাস। কৃষি উৎপাদনে অগ্রসর কুমিল্লার ১৭ উপজেলার চাষীরা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের জীবন জীবিকা কৃষি উন্নয়নের সংগ্রাম। আমন ধান কাটা মাড়াইয়ের পরপরই তারা শুরু করেছে বোরো ধানের আবাদের কার্যক্রম। চলছে বোরো আবাদের তোড়জোড়।
কুমিল্লা কৃষি অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় ১ লাখ ৬০ হাজার একর জমিতে ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে বোরো বীজতলা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক সুরজিত চন্দ্র দত্ত জানান, জেলায় ১৭ উপজেলায় এক লাখ ৬০ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৫৭ হাজার ২৫৮ মেট্রিক টন। এরমধ্যে হাইব্রিড জাতের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ হাজার ৫৬২ হেক্টর এবং চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো আবাদে জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৪৯ হেক্টর ও চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৮ মেট্রিক টন। তিনি আরও জানান, জেলার উপজেলা ভিত্তিক বোরো আবাদের জমি ও চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে- চান্দিনায় বোরো আবাদের জমি ৯ হাজার ৮৫৫ হেক্টর ও চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৯ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টন। দেবিদ্বারে জমির পরিমাণ ১২ হাজার ৩০০ হেক্টর ও চাল উৎপাদন ৪৯ হাজার ৪৫ মেট্রিক টন।
মুরাদনগরে জমি ১৭ হাজার ৮১৩ হেক্টর ও চাল উৎপাদন ৭০ হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন। দাউদকান্দিতে জমি ৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর ও চাল উৎপাদন ৩১ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন। হোমনায় জমি ৫ হাজার ৮৩৭ হেক্টর ও চাল উৎপাদন ২৩ হাজার ২৮ মেট্রিক টন। আদর্শ সদরে জমি ৫ হাজার ৯০০ হেক্টর ও চাল উৎপাদন ২৩ হাজার ৪৩০ মেট্রিক টন। বুড়িচংয়ে জমি ৯ হাজার ২৯০ হেক্টর ও চাল উৎপাদন ৩৭ হাজার ২২০ মেট্রিক টন। ব্রাহ্মণপাড়ায় জমি ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর এবং চাল উৎপাদন ৩৪ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন। চৌদ্দগ্রামে জমি ১২ হাজার ৪০০ হেক্টর ও চাল উৎপাদন ৪৯ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন। লাকসামে জমি ৮ হাজার ৭০০ হেক্টর ও চাল উৎপাদন ১৩ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন। নাঙ্গলকোটে জমির পরিমাণ ১২ হাজার ৬৫০ হেক্টর ও চাল উৎপাদন ৫৪ হাজার ২১০ মেট্রিক টন। বরুড়ায় জমি ১৪ হাজার ৬০ হেক্টর ও চাল উৎপাদন ৫৭ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন। মেঘনায় জমি ৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর এবং চাল উৎপাদন ১৪ হাজার ১শ’ মেট্রিক টন। তিতাসে জমি ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর ও চাল উৎপাদন ২৬ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন। মনোহরগঞ্জে জমি ১০ হাজার ২০০ হেক্টর ও চাল উৎপাদন ৪৬ হাজার ১৪০ মেট্রিক টন। সদর দক্ষিণে জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ৮৭০ হেক্টর ও চাল উৎপাদন ৬২ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুরজিত চন্দ্র দত্ত বলেন, বোরো আবাদের জমির আওতা বাড়ানো ও উৎপাদন বাড়ানো আমাদের লক্ষ্য। বর্তমান সরকার বোরো আবাদে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার বিনামূল্যে কৃষকদের দিচ্ছে। এতে কৃষকরাও উৎসাহিত হচ্ছে। আগামী বোরো আবাদ মৌসুমে আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে উৎপাদনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এ লক্ষ্যে কৃষি বিভাগও কৃষকদের পাশে থাকবে।
কৃষকরা জানিয়েছে, আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূল রয়েছে। তবে বাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে কৃষি খাতকে রক্ষা করে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করলে কৃষিকে অবলম্বন করে দেশ স্বনির্ভর হয়ে উঠবে।