পুলিশকে জনতারই হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

1539

ঢাকা, ৬ জানুয়ারি ২০২০ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের আরো জনবান্ধব হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, আসলে পুলিশকে জনতারই হতে হবে, জনগণ যেন আস্থা পায়, বিশ্বাস পায় এবং পুলিশের কাছে দাঁড়াতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশের প্রতি আগে মানুষের যে একটা অনীহা ছিল সেটা কিন্তু আর নেই। বরং পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। আসলে এটাই সব থেকে বেশি প্রয়োজন। কাজেই আপনারা সেভাবেই কাজ করবেন।’
তিনি নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্যও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহবান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা আপনাদের ওপর স্ব-স্ব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে তাঁর কার্যালয়ে (পিএমও) ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২০’ উপলক্ষে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণে একথা বলেন।
দেশের মানুষের নিরপত্তা প্রদানকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার আপনারা মুজিব বর্ষে পুলিশ সপ্তাহের যে প্রতিপাদ্য ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ চালু হওয়ায় মানুষের মাঝে একটা আত্মবিশ্বাস এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘কোথাও কেউ কোন অন্যায় দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ফোন করছে এবং পুলিশ সেখানে পৌঁছে যাচ্ছে, ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি যত শক্তিশালী ও মজবুত হবে তত বেশি আমরা আমাদের সকল প্রতিষ্ঠানকে আরো উন্নত করতে পারবো।’
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাাতিক বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল এবং উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। এটা আমাদের ২০২৪ সাল পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে যাতে উন্নয়নশীল দেশের স্থায়ী স্বীকৃতি অর্জন করতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর পর অনেকের ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ আর জীবনে সরকার গঠন করতে পারবে না। কিন্তু বাংলার জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সহায় ছিলেন বলেই এতবড় একটা গুরু দায়িত্ব নিতে পেরেছি এবং দেশটাকে উন্নত করতে পেরেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন এবং আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
এছাড়া, অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. সফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম, খুলনার পুলিশ কমিশনার খন্দোকার লুৎফুল কবির এবং ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালকে মুজিব বর্ষ হিসেবে তাঁর সরকারের ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে ক্ষুধামুক্ত হয়েছে ঠিকই কিন্তু এখনও বাংলাদেশে যারা দরিদ্র বা গৃহহীন, কর্মক্ষমতাহীন তাদের প্রত্যেকের জীবনমানটা যাতে উন্নত হয়, তারা কেউ যেন ক্ষুধার কষ্টে না ভোগে, রোগে শোকে কষ্ট না পায়।’
‘সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্য দিয়েই মানুষকে একটা সুন্দর জীবন উপহার দেয়াই তাঁর সরকারের লক্ষ্য’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার মূল্যবোধ যেটা আমরা ’৭৫ এর পর হারিয়ে ফেলেছিলাম তা আজকে আবার ফিরে পেয়েছি। মানুষের মনে আজ স্বাধীনতার মূল্যবোধ জাগ্রত। আবার সেই নতুন চেতনা নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন,‘আমাদের স্বাধীনতার মূল্যরোধটা আর যেন হারিয়ে না যায়। এই অগ্রযাত্রা ভবিষ্যতে যাতে কেউ আর ব্যাহত করতে না পারে।’
‘ইনশাল্লাহ বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করবো, ’যোগ করেন তিনি।

পুলিশ সদস্যদের জন্য পৃথক মেডিকেল কোর স্থাপনের প্রয়োজনিয়তা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘পুলিশে কিন্তু মেধাবীরাই আসে, ব্যারিষ্টার ও আসে ডাক্তারও আসে,আবার ইঞ্জিনিয়ারও আসে। কিন্তু আমি মনেকরি পুলিশের জন্য একটি পৃথক মেডিকেল কোর করা প্রয়োজন।’
পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিড়ম্বনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসকরা আসতে চাননা। কাজেই পুলিশের মধ্যে যে ডাক্তার রয়েছে তাঁকে খুজেই সেখানে অনেকসময় দায়িত্ব দিতে হয়। কাজেই আপনারা যদি আলাদা একটা ইউনিট করে ফেলেন ডাক্তারদের জন্য তাহলে আপনাদের চিকিৎসারই একটা সুবিধা হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন,পুলিশ সদস্যদের জন্য সরকারী হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও পুলিশের জনবল বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পৃথক ইউনিট করে নিতে পারলে ভাল হবে। তিনি বলেন, ‘এই পৃথক ইউনিটের দাবি কিন্তু আপনারা করেননি কিন্তু আমি আপনাদের পক্ষ থেকেই দাবিটা করলাম।’
শিল্পাঞ্চল পুলিশসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট বিভিন্ন জায়গায় খোলায় পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়ন এবং পদোন্নতির সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘ আমরা একশ’ শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি। কাজেই আমাদের শিল্প পুলিশকে আরো শক্তিশালী করতে হবে এবং এখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হবে, সেটা আমরা করবো।’
একটি দেশের উন্নয়নে জন নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন,‘দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা যদি ঠিকমত তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারে তখনই সেটা সম্ভব। আর আপনারা এটা করতে পেরেছেন বলেই আজকে আমরা উন্নতি করতে পেরেছি।’
এজন্য তিনি পুলিশ বাহিনী সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘পুলিশের জন্য আমরা যেটুকু করেছি তার আমাদের চিন্তা থেকেই করেছি। এজন্য কোন দাবি বা তেমন কিছু করতে হয়নি।’
পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে তিনি জনবল বৃদ্ধির সঙ্গে আনুপাতিকহারে পদ সৃষ্টির প্রয়োজনিয়তাও স্বীকার করেন প্রধানমন্ত্রী।
পুলিশ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বর্তমানে বেড়ে দুই লাখ ২২ হাজার ৭২১ জনে উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের রিক্রুটমেন্টের সময় শুধু নয় পদোন্নতির সময়ও ট্রেনিংয়ের প্রয়োজনিয়তা রয়েছে।’
তিনি বলেন,‘ যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের ধরনও প্রকৃতি পাল্টাছে। কাজেই এর সঙ্গে তাল রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও ট্রেনিং দরকার। আমরা যে কারণে ট্রেনিংকে গুরুত্ব দিচ্ছি।’
তিনি এ সময় ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিলে তাদেরকে ‘ডাম্পিং প্লেসে ফেলে দেওয়া হয়েছে’ বলে ভাবনার সমালোচনা করে বলেন, ‘আসলে যারা মেধাবী তাঁদেরকেই সেখানে পদায়ন করা দরকার। কারণ বেসিক নলেজ যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে উপযুক্ত লোক আমি কিভাবে গড়ে তুলবো।’
বিআরটিএ,বিআইডব্লিউটিএ এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধি থাকা প্রয়োজন এবং তাঁর সরকার সেই উদোগ নেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুর্ণীতি দমন কমিশনে (দুদক) ইতোমধ্যেই পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দুর্ণীতি দমন কমিশনের কোন গ্রেফতারের এখতিয়ার নেই। গ্রেফতারের জন্য তাদের কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদেরই বলতে হবে। তারা নির্দেশ দিতে পারে।’
তিনি আরো বলেন,‘তারা ধরে রেখে ঐখানে হাজতখানা বানাবে,হাজতে রাখবে এটা কিন্তু দুর্ণীতি দমন কমিশনের কাজ না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যার যার কাজ তার তার করতে হবে। একথা মনে রাখতে হবে।’