বর্তমানে সহজে ঋণ পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা

1503

ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস-ইউনিসেফ ফিচার) : বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে পুরুষদের পাশাপাশি সমানতালে এগিয়ে চলছে নারীরা। সব ক্ষেত্রেই এখন নারীরা পুরুষের সমান অধিকার ভোগ করছে। এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্যেও পুরুষের সমানতালে এগিয়ে চলছে নারী।
ব্যবসা ক্ষেত্রে মূলধন বা ঋণের ক্ষেত্রে এখন অনেক বেশি সুযোগ পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা। মাত্র এক দশক আগেও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তবে, কালের পরিক্রমায় এবং সময়ের প্রয়োজনে সেই বাধা অনেকটাই দূর হয়েছে।
দেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে নারীদের অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এখন ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য রয়েছে আলাদা সেবা ডেস্ক। কেবল সেবা ডেস্কই নয়। ব্যাংক ঋণ পেতেও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন নারী উদ্যক্তারা। অন্য যেকোন ঋণের চেয়ে নারী উদ্যোক্তাদের নথিপত্র কম লাগছে। তাদের জন্য রয়েছে ৯ শতাংশ হারে সুদে পুনঃঅর্থায়ন ঋণ পাওয়ার সুযোগ।
তবে, এর বাইরে ঋণ পেতে অনেক নারী উদ্যোক্তাকে এখনো সুদের হার বেশি গুণতে হচ্ছে, এমনকি কখনো কখনো ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুণতে হচ্ছে বলে উদ্যোক্তা ও ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে।
সরকার ঘোষিত জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৭ তে বলা হয়েছে, এসএমই খাতে ঋণের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে, পুনঃঅর্থায়ন ঋণের কমপক্ষে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৭৯ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তারা পেয়েছেন ৩ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণের ৪ শতাংশ গেছে নারীদের কাছে। আলোচ্য সময়ে সব মিলিয়ে ৪ লাখ ২ হাজার উদ্যোক্তা ঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তা ছিলেন ২৯ হাজার ৫৮৭ জন।
নারী উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন, ঋণের জন্য ব্যাংকগুলো সাদরে আমন্ত্রণ জানালেও ঋণ সেভাবে দিচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার শর্ত চাইছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠিত জামিনদার, স্থায়ী ব্যবসাসহ নানা নথিপত্রও চাইছে ব্যাংক। তবে, বেসরকারি একটি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ব্যাংকগুলো এখন ঋণ দেয়ার জন্য নারী উদ্যোক্তাদের খুঁজছে। সমস্যা হলো এসএমই খাতে যেসব উদ্যোক্তা আছেন তার ২ শতাংশ নারী। ফলে, সবাই ঋণ পেলেও এসএমই খাতে ঋণের নারীদের অংশগ্রহণ খুব বেশি বাড়ছে না।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে , বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায় নারী উদ্যোক্তারা ঋণ নিলে তাতে সুদের হার ধরা হচ্ছে ৯ শতাংশ। এর বাইরে যারা পুরনো গ্রাহক, তারা ১০ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন। তবে, নতুন ও অনিরাপদ গ্রাহকদের জন্য সুদ হার ১৮ শতাংশ পর্যন্ত।
ব্যাংকগুলো এসএমই ঋণের পণ্যভেদে নানা ঋণসেবা নিয়ে এসেছে। আবার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ ঋণ পণ্যসেবাও রয়েছে। বাংলাদেশের সব ব্যাংকই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ঋণ পণ্য রয়েছে। এসব ঋণে সুদ হার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ। যেসব গ্রাহক পুরনো বা ভাল তারা কিছুটা কম সুদে ঋণ পাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারী উদ্যোক্তাদের ঋণদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ব্র্যাক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংক এশিয়া, সিটি, আইএফআইসি, যমুনা, ডাচ বাংলা, মার্কেন্টাইল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, প্রাইম এবং পূবালীসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে বিশেষ পণ্য রয়েছে। বিদেশী ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি এবং সিটি ব্যাংক এ খাতে ঋণ দিতে বিশেষ জোর দিয়েছে। আবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে নারী উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন। যে কারণে, নারী উদ্যোক্তারা এখন কেবল এসএমই খাতে সীমাবদ্ধ নেই। তাদের ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ছে বড় ও ভারী শিল্পেও।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া হেনা আক্তার বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের কারণে নারী উদ্যক্তাদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া এখন অনেক সহজ হয়েছে। এখন দরকার পণ্য বাজারজাত ও ব্যবসা উন্নয়নের বিষয়ে নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া।’
নারী উদ্যোক্তাদের আবেদন বেশিরভাগ সময়ই পূর্ণাঙ্গ থাকে না উল্লেখ করে বিশিষ্ট ব্যাংকার সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংক সবসময় যোগ্য ব্যক্তিদের ঋণ দিতে চেষ্টা করে। কারণ, ব্যাংক যে টাকা দেবে, তাতো জনগণের টাকা। ব্যাংক চায় এই অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগুক এবং তা যথাসময়ে আবার তা ফেরত আসুক। ব্যাংক এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চায়।
তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকার এখন অনেক বেশি উদ্যোগী, যেটা ভবিষ্যতে অনেক বেশি কাজে দেবে।